জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সাম্প্রতিক দু'টি বাংলা ছবির অত্যন্ত জনপ্রিয় দু'টি গানের, একটি করে লাইন ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে। 'বাস্তুসাপ' ছবিতে কবি শ্রীজাতর লেখা 'তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম' থেকে 'চুপ, মূহুর্ত চুপ'! কারণ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo )সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেন, মুহূর্তকে চুপ করিয়ে দিয়েই। এমনটা হয়েই চলেছে...বারবার হচ্ছে...যে মুহূর্তে সব তালগোল পাকিয়ে যায়। এবার দ্বিতীয় গানের কথা বলতে হবে। 'হেমলক সোসাইটি'তে ব্য়বহৃত অনুপম রায়ের কলমে 'আমার মতে' থেকে 'এই মৃত মহাদেশে রোদ্দুর বারবার'! কারণ ফুটবলের কিছু তাবড় পণ্ডিতরা, লিয়োলেন মেসির মাহাত্ম্য় বর্ণনা করতে গিয়ে কোথাও যেন, রোনাল্ডো নামের মহাদেশকে মেরেই ফেলেছেন! আর তাদের সেই মনগড়া  'মৃত মহাদেশ'-এ বারবার রোদ্দুর হয়ে ঝলমল করেন রোনাল্ডো! ঠিক যেমনটা করলেন শনিবার রাতে। আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স কাপ (Arab Club Champions Cup 2023) ওরফে কিং সলমান ক্লাব কাপের (King Salman Club Cup) ফাইনালে জ্বলে উঠলেন ৩৮ 'বছরের যুবক'। জোড়া গোল করে তাঁর ক্লাব আল-নাসেরকে (Al-Nassr) দিলেন প্রথমবার এই ট্রফি জয়ের স্বাদ! 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: East Bengal: ডার্বির রং লাল-হলুদ, কথা রাখলেন কুয়াদ্রাত, বৃষ্টিতেও জ্বলল আবেগের মশাল



গত মরসুমে আল নাসেরে যোগ দেওয়ার পর, সেই দেশের এক নম্বর লিগ সৌদি প্রো লিগ খেলেছিলেন রোনাল্ডো। তবে চেষ্টা করেও ক্লাবকে ফাইনালে জেতাতে পারেননি। রানার্স হয়েছিল আল নাসের। সব ব্যর্থতাগুলোকে যে আজও রোনাল্ডো নোটবুকে লিখে রাখেন, সময় মতো মাঠেই ফেরত দিয়ে দেন পায়ের আগুনে ঝলসে। কিং ফাদ স্টেডিয়ামেও ঘটল তেমটাই। আল নাসের এক্সট্রা টাইমে ২-১ গোলে হারাল চির প্রতিদ্বন্দ্বী আল হিলালকে। আল হিলাল কিন্তু বিশ্বের অন্য়তম সেরা ক্লাবগুলির মধ্যেই একটি। এশিয়ার সেরা ক্লাব বললেও অত্যুক্তি হয় না। যারা গতবার ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে। ইউরোপের সেরা প্লেয়ারদের তুলে এনে দল সাজাতে দু'বার ভাবে না। এদিন আল-নাসের আল হিলালের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধেই এগিয়ে যেতে পারত। সাদিও মানে, সেকো ফোফানা ও মার্সলো ব্রোজোভিচের যাবতীয় প্রয়াস রুখে দেন ৬ ফুট ২ ইঞ্চির গোলিকপার মহম্মদ আল-ওয়েস। কাতার বিশ্বকাপে সৌদি আরব মেসির আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল। এই আলওয়েসই ছিলেন জয়ের নায়ক। ১৫টি শট রুখে দিয়েছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত দস্তানায়। প্রথমার্ধে খেলা গোলশূন্য থাকে। দ্বিতীয়ার্ধের ছয় মিনিটের মধ্যে ম্যালকমের গোলে এগিয়ে যায় আল হিলাল। তিনি আবার হেডে গোল করে রোনাল্ডোকে ব্য়ঙ্গ করেন। কর্নার ফ্ল্যাগের সামনে গিয়ে রোনাল্ডোর স্টাইলে Suiii... সেলিব্রেশেন করেন। রোনাল্ডো সবটা হজম করেছেন মাঠে থেকে। ৭১ মিনিটে আল নাসের ১০ জনে পরিণত হয়। ডিফেন্ডার আল আমরি লাল কার্ড দেখেন। ম্যাচের ৭৪ মিনিটে গোল করে উত্তরটা দিয়ে দেন রোনাল্ডো। স্কোরলাইন করেন ১-১। মুখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেন, তিনি খেললে মুখটা বন্ধ রাখাই ভালো। এই গোলের পরেই আল নাসেরের আরেক ডিফেন্ডার নাওয়াফ বুসাল  লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। নয় জনে পরিণত হয়ে দল। রোনাল্ডো আরও যেন ভয়ংকর আকার ধারণ করেন। এক্সট্রা টাইমের প্রথমার্ধে ক্রসবারের রিবাউন্ড থেকে একেবারে বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে গোল করেন। ১১৫ মিনিট পর্যন্ত রোনাল্ডো মাঠে থেকে জয় নিশ্চিত করেই আসেন। ১২২ মিনিট পর্যন্ত খেলা হয়েছিল। কিন্তু মাথায় ছোট্ট চোট লাগার জন্য তাঁকে আর মাঠে রাখার ঝুঁকি নেয়নি। আল নাসের। কারণ দু'দিন পরেই শুরু হবে সৌদি প্রো লিগ। রোনাল্ডো আবারও বুঝিয়ে দিলেন তিনি বিস্ময়, তিনি অন্য গ্রহের।


'ওই মহামানব আসে, দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে, মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে, সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ!'... রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই লাইনগুলো, ভীষণ ভাবে প্রযোজ্য ফুটবল গ্রহের মহানক্ষত্রের জন্য। ইউরো কাপ জয়ী পাঁচবারের ব্যালন ডি'অর জয়ীর কোনও ভূমিকারই প্রয়োজন নেই আর। তিনি আজ নিজেই ব্র্যান্ড। মহাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষ রোনাল্ডো বলতেই অজ্ঞান। তাঁর ম্যাজিকের বুঁদ হয় বিশ্ব। রোনাল্ডোর আর ফুটবল থেকে সত্যিই পাওয়ার কিছু নেই। এই খেলাটা তাঁকে দু'হাত উজাড় করেই সব দিয়েছে। তবুও নামটা যে সিআর সেভেন। কেরিয়ারের অস্তাচলে রন। তবুও তাঁর থেকে মানুষের প্রত্যাশা আকাশছোয়া! আর হবেই না বা কেন! খেলা দেখলে মনে হচ্ছে তাঁর বয়স ৩৮ নয় ২৮। রোনাল্ডো মানেই তো ম্যাজিক। 


আরও পড়ুন: সাড়ে চার বছর ডার্বি জয় লাল-হলুদের! ম্যাচের পর যা বললেন নন্দকুমার-কুয়াদ্রাত...


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)