সব্যসাচী বাগচী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

অঙ্ক, শুকনো পরিসংখ্যান এবং আবেগকে দূরে ছুড়ে ফেলে দিলে হিসেবটা একেবারে ভুলে ভরা। পাগলামি এবং আবেগের ওভারডোজ ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু যদি শুধু আবেগকে সম্বল করেই চলতে হয়, তাহলে এর চেয়ে নির্মম উপলব্ধি হয়তো আর কিছুই হতে পারে না! এই প্রথম বিশ্ব ফুটবলের কার্নিভাল আর্জেন্টিনা (Argentina) ফুটবলের শেষ কথা দিয়েগো মারাদোনাকে (Diego Maradona) ছাড়া আয়োজিত হতে চলেছে। সোজা কথায় লিখলে 'ফুটবলের রাজপুত্র'-কে ছাড়াই শুরু হবে কাতার বিশ্বকাপ (FIFA Qatar World Cup 2022)। 


বাস্তবের মাটিতে পা রেখে চলা মানুষ বলতেই পারেন, মারাদোনাকে ছাড়া এই প্রথম বিশ্বকাপ মোটেও আয়োজিত হচ্ছে না। ১৯৬০ সালে তাঁর জন্ম। এর আগে হয়েছে ছ'টি বিশ্বকাপ। 'গোল্ডেন বয়' এই দুনিয়াতে তাঁর বাঁ-পা রাখার পর থেকে ১৫টি বিশ্বকাপ হয়ে গিয়েছে। ১৯৮২ বিশ্বকাপ থেকে হিসেব করলে এ পর্যন্ত ১০টি বিশ্বকাপে সবকিছু ঠিকই ছিল। 


মাঠে জমজমাট খেলা, উন্মাদ দর্শক আর প্রাক্তনদের বিশ্লেষণ, 'পল' নামক অক্টোপাসের ভবিষ্যদ্বাণী, করোনার দাপট- সব মিলিয় ফুটবলের মহাযজ্ঞ ঠিক নিজের 'টিআরপি' ধরে রেখেছে। তবে আবেগপ্রবণদের কাছে এবারের বিশ্বকাপ একেবারে আলাদা। যেন স্বজন হারানোর যন্ত্রণার সুর প্রতি মুহূর্তে কানের পাশে বেজেই যাচ্ছে! আবেগ নিয়ে দিন-রাত কাটানো মানুষগুলোর কাছে উৎসবের মধ্যেও যেন বিষাদের মুহূর্ত! ওই দুর্গাপুজোর আগেই দশমীর মতো ব্যাপার! 


আরও পড়ুন: Cristiano Ronaldo: ম্যান ইউ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, এরিক টেন হ্যাগের প্রতি সম্মান নেই! রোনাল্ডোর মহা বিস্ফোরণ


আরও পড়ুন: Lionel Messi, FIFA Qatar World Cup 2022: কোন ছকে বিশ্বজয়ী হতে পারে আর্জেন্টিনা, জানিয়ে দিলেন মেসির প্রাক্তন কোচ



সবাই আছেন। লিওনেল মেসি (Lionel Messi) বিশ্বকাপ (Qatar World Cup) জিততে মুখিয়ে আছেন। নেইমারের (Neymar Jr) টার্গেট দেশের হয়ে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও (Cristiano Ronaldo) তাঁর অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে মরিয়া। মাঠ দাপাবেন আরও অনেক তারকা এবং উঠতি প্রতিভা। শুধু ৫ ফুট ৫ ইঞ্চির সেই মানুষটাই নেই। যিনি গত কয়েক বছর স্টেডিয়ামের নির্দিষ্ট ভিআইপি বক্সের ঠিক বাইরে বসতেন। নীল-সাদা জার্সি গায়ে চাপিয়ে। সঙ্গে থাকত দেশের পতাকা। হাভানা চুরুটকেও তো বাদ দেওয়া যায় না। আর্জেন্টিনা গোল করলে শিশুর মতো লাফিয়ে উঠতেন। ফল উল্টো হলে তাঁর চোখ-মুখ হয়ে যেত লাল। বিয়ারের গ্লাস-সিগার ফেলে রাগারাগি করার দৃশ্য ক্যামেরায় বারবার ধরা পড়েছে।  


২০১৮ সালের রাশিয়া কিংবা ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে এমন অনেক মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে ফুটবল দুনিয়া। মেসিদের খেলা থাকলে ম্যাচ সম্প্রচারকারী চ্যানেলের প্রোডাকশন টিম শুধু ওই লোকটার ম্যানারিজম ধরে রাখার জন্য একটা ক্যামেরা রেখে দিত। প্রোডাকশন ও পিসিয়ার টিমের ক্যামেরাম্যানের উদ্দেশে কড়া নির্দেশ থাকত, 'একটাও ফ্রেম যেন মিস না হয়'। তবে এবার আর সেই নির্দিষ্ট অ্যাসাইনমেন্ট থাকছে না। কারণ ফুটবলার থেকে বিপ্লবী হয়ে ওঠা দিয়েগো সবাইকে চমকে দিয়ে ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর নিজের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছেন। 



প্রতিবেদন লিখতে গিয়ে রাশিয়ার সেন্ট পিটাসবার্গে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচটা মনে পড়ে যাচ্ছে। ৮৫ মিনিটের খেলা চলছে। রেজাল্ট তখনও ১–১। ১৪ মিনিটে মেসির গোলে এগিয়ে গেলেও, বিপক্ষের মোজেস ৫১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে আর্জেন্টাইনদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঠিক ৮৬ মিনিটে মার্কোস রোহোর গোল। ক্যামেরা মেসি ও তাঁর দলকে ধরে রাখার বদলে চলে গেল ভিআইপি বক্সের দিকে। শিশুর মতো চিৎকার করছিলেন তিনি। কখনো আবার দুই চোখ উল্টে ওপরে তাকিয়ে এমন ভাব করছিলেন যেন, আর্জেন্টিনাকে জেতানোর জন্য গোলটা তাঁর সেই বাঁ-পা থেকেই এসেছে! এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন যে খেয়ালও করেননি পিছন থেকে একটু ধাক্কা লাগলেই পড়ে যেতে পারতেন! কাছের মানুষজন বোহেমিয়ান লোকটাকে চিনতেন। জানতেন। তাই দুজন তাঁকে ধরেও রেখেছিলেন। একবার তো অসুস্থও হয়ে পড়লেন। সবটাই আবেগের জন্য।  



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)