East Bengal: ডার্বির রং লাল-হলুদ, কথা রাখলেন কুয়াদ্রাত, বৃষ্টিতেও জ্বলল আবেগের মশাল
East Bengal Beats Mohun Bagan Super Giant 1-0 Durand Cup 2023: মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে রুখে দিয়ে ইস্টবেঙ্গল জিতে নিল মরসুমের প্রথম ডার্বি। কথা রাখলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত।
মোহনবাগান ০
ইস্টবেঙ্গল ১ (নন্দকুমার ৬০')
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ সাল, আই-লিগ (I-League)। ১২ অগস্ট ২০২৩, ডুরান্ড কাপ (Durand Cup 2023)। দু'টি তারিখের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার বছরের ফারাক। ১৬৬৬ দিন পর ফের ইস্টবেঙ্গল ((East Bengal) ডার্বি জিতল। বিগত শেষ আটটি ডার্বি ম্যাচেই ইস্টবেঙ্গল হেরেছে মোহনবাগানের কাছে। যা যে কোনও লাল-হলুদ সমর্থকের বুকে পেরেকের মতো বিঁধছে। আজ লাল-হলুদ সমর্থকদের শান্তিতে ঘুমানোর রাত! শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লাল-হলুদ ১-০ গোলে হারাল সবুজ-মেরুনকে (Mohun Bagan Super Giant vs East Bengal)। ম্যাচের একমাত্র স্কোরার নন্দকুমার সেকর (Nandhakumar Sekar)। ডার্বির আগের দিন জুয়ান ফেরান্দোর (Juan Ferando) মোহনবাগানকে অত্যন্ত সম্মান জানিয়েই, ইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat) বলেছিলেন, 'মোহনহবাগান যতটা সহজ ভাবছে, ততটা সহজ হবে না'! এদিন কথা রাখলেন কুয়াদ্রাত। আজ লাল-হলুদ সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে গেলেন স্প্য়ানিশ হেডস্য়র। কারণ একমাত্র ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাই জানেন যে, যে এই জয় আর পাঁচটা জয়ের মতো নয়, এদিনের জয় ঐতিহাসিক। এদিনের জয় বহু অপমান ও বহু বুক ভাঙার ক্ষতে প্রলেপ।
আরও পড়ুন: Kolkata Derby: রাত পোহালেই মরসুমের প্রথম ডার্বি, মহারণের আগে কী ভাবছেন কুয়াদ্রাত-ফেরান্দো?
ইস্ট-মোহন এবারের দ্বৈরথ কার্যত ছিল ডেভিড বনাম বনাম গোলিয়াথের লড়াই! ইস্টবেঙ্গলের মাত্র দু'জন ফুটবলার অতীতে ডার্বি খেলেছেন। তাঁরা নাওরেম মহেশ এবং লালচুংনুঙ্গা। বাকি সকলেই এই প্রথম হাইভোল্টেজ ম্যাচের স্বাদ নিলেন। কুয়াদ্রাত সেভাবে পূর্ণশক্তির দলও পাননি হাতে। গোলমেশিন ক্লেটন সিলভা এদিনই সকালে শহরে পা রেখেছেন। সপ্তাহ দুয়েকের অনুশীলন সেরেই কুয়াদ্রাত দল নিয়ে ডুরান্ডে নেমে পড়েছেন। প্রথম ম্যাচেই ইস্টবেঙ্গল বাংলাদেশ সেনার বিরুদ্ধে ড্র করেছে। এই দলকেই মোহনবাগান পাঁচ গোলের মালা পরিয়েছে। অন্যদিকে ফেরান্দোর দল ডুরান্ডে ব্য়াক-টু-ব্যাক জিতে ফুটছে। তাঁর দলে রয়েছে একাধিক সুপারস্টার। মোহনবাগানের অধিকাংশ সমর্থকই ভবিষ্য়দ্বাণী করেছিলেন যে, এই ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে তাঁরা কম করে হাফ ডজন গোল দেবেন। কিন্তু মাঠে নেমে চিত্রটা যে, একদম বদলে গেল, মোহনবাগানের সুপারস্টারদের আজ খুঁজে পাওয়া গেল না। সেখানে একেবারে নতুন ইস্টবেঙ্গলকে খেলিয়ে চমকে দিলেন বার্সেলোনা, গালসাতারের প্রাক্তন কোচ। যিনি আবার সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফসি-কে জিতিয়েছেন ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (২০১৮-১৯)।
এদিন ম্যাচ শুরুর আগে দুই দলের ফুটবলারদের হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন ভিকি কৌশল। সেনার আমন্ত্রণে বলি তারকা এদিন সকালেই চলে এসেছিলেন কলকাতায়। মাঠে বসে খেলা দেখবেন বলেই মুম্বই থেকে উড়ে এসেছিলেন ভিকি। এবার আসা যাক ম্য়াচের কথায়। ম্য়াচের ২ মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। কিন্তু আর্মান্দো সাদিকু বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়ে গোলে শট রাখতে পারেননি। ম্যাচের ১১ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম পজিটিভ সুযোগ এসেছিল। খাবরার শট এলসে হেড করেছিলেন। কিন্তু আটকে দেন বিশাল। চার মিনিটের মধ্যে ফের লাল-হলুদের কাছে সুযোগ চলে আসে গোল করার। অনিরুদ্ধ থাপার ফাউলে ইস্টবেঙ্গল ফ্রি-কিক পেয়ে য়ায়। কিন্তু আবারও সেই এলসেহ হেড রুখে দেন বাগান যোদ্ধা কাইথ। আক্রমণ প্রতি আক্রমণের খেলায় এবার ডার্বির রং আরও উজ্জ্বল হতে শুরু করে। ১৮ মিনিটে ফের একবার গোলের মুখ খুলে ফেলেছিল ইস্টবেঙ্গল। নাওরেমের ক্রস থেকে সিভেরিয়ো গোলের চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই, তবে তা রুখে দেন ব্রেন্ডন। ভালো গোলের সুযোগ হারায় ইস্টবেঙ্গল। এর কিছুক্ষণের মধ্যে কোলাসো-সাদিকো-বুমোসের চেষ্টায় মোহনবাগান গোলের সুযোগ পেয়েছিল। তবে তে-কাঠিতে শট রাখতে পারেননি বুমোস। বিরতির ঠিক আগে খাবরা হলুদ কার্ড দেখে বসেন। তিনি ফাউল করেন কোলাসোকে। যদিও প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলের খেলা নিঃসন্দেহে মোহনবাগানের চেয়ে ভালো ছিল। দেখতে গেলে গত ম্যাচের ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে এই ইস্টবেঙ্গলের মিল পাওয়া যাচ্ছিল না।
দ্বিতীয়ার্ধে জোড়া পরিবর্তন আনেন ফেরান্দো। সাদিকু-বুমোসের পরিবর্তে জেসন কামিন্স ও দিমিত্রি পেত্রাতোসকে নামান তিনি। দুই বিশ্বকাপারকে খেলিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিলেন ফেরান্দো। এদিন ডার্বি ম্যাচের হাত ধরেই বাগান অভিষেক হল কাতার বিশ্বকাপে খেলা অজি ফুটবলার কামিন্সের। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৬০ মিনিট। অসাধারণ গোল করে লাল-হলুদ গ্যালারিকে উচ্ছ্বাসে ভাসান নন্দকুমার। ডান প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ওড়িশা থেকে ইস্টবেঙ্গলে আসা ফুটবলার। তাঁকে অনিরুদ্ধ আটকাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নন্দ ডজ করে বাঁ-পায়ে সোয়ারভিং কিক নেন দ্বিতীয় পোস্টে। কাইথ কেন, কোন গোলকিপারের পক্ষেই ওই শট রুখে দেওয়া সম্ভব ছিল না। এরপর যত সময় এগোতে থাকে মোহনবাগান সমতায় ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু লাভের লাভ হয়নি। কুয়াদ্রাতের টিমের ছ'জন মিলে ডিফেন্স করতে থাকেন। অতিরিক্ত ছয় মিনিট যোগ করেন ম্যাচ রেফারি। আর তখনই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। কিন্তু লাল-হলুদ সমর্থকদের আবেগের মশাল যে আজ নেভার ছিল না। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার পরেই লাল-হলুদ ফুটবলরার উদ্বেল হয়ে পড়েন। তাঁরা বৃ্ষ্টি ভিজে সেলিব্রেশন করতে শুরু করে দেন। গ্যালারি থেকে একাধিক সমর্থক নেমে আসেন মাঠে। তাঁরাও ভাগ করে নেন এই আনন্দ। এই জয়ের পর ইস্টবেঙ্গলের নকআউটে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়ে গেল। আগামী ১৬ অগস্ট কিশোর ভারতীতে ইস্টবেঙ্গল খেলবে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে। আর এই ম্যাচ জিতলেই ইস্টবেঙ্গল চলে যাবে পরের রাউন্ডে। অন্যদিকে ঠিক এই তারিখেই মোহনবাগান যুবভারতীতেই, এএফসি কাপের অভিযান শুরু করবে মোহনবাগান। দক্ষিণাঞ্চল পর্বের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে ফেরান্দোর টিম খেলবে নেপালের মাচিন্দ্রা এফসি-র বিরুদ্ধে।
ইস্টবেঙ্গলের প্রথম একাদশ- প্রভসুখন গিল, হরমনজ্যোত খাবরা, লালচুংনুঙ্গা।, জর্ডন এলসে, মন্দার রাও দেশাই, সৌভিক চক্রবর্তী, সাউল ক্রেসপো, বোরহা, নাওরেম মহেশ, নন্দকুমার, জেভিয়ার সিভেরিও।
সাবস্টিটিউট- কমলজিৎ, রাকিপ, অতুল, গুরসিমরত, এডউইন, মোবাসির, তুহিন, গুরনাজ, ভানলালপেকা গুইতে, ভিপি সুহের।
মোহনবাগানের প্রথম একাদশ- বিশাল কাইথ, আশিস রাই, আনোয়ার আলি, ব্রেন্ডন হ্যামিল, শুভাশিস বসু, অনিরুদ্ধ থাপা, গ্লেন মার্টিন্স, মনবীর সিং, হুগো বুমোস, লিস্টন কোলাসো, আর্মান্দো সাদিকু।
সাবস্টিটিউট- জাহিদ, জেসন কামিন্স, দিমিত্রি পেত্রাতোস, সাহাল আব্দুল সামাদ, আশিক কুরুনিয়ান, সুহেল ভাট, রবি রানা, রাজ বাসফোর, অভিষেক, কিয়ান নাসিরি।
আরও পড়ুন: Mohun Bagan | Durand Cup 2023: বুমোসের গোলে পঞ্জাবকে হারিয়ে গ্রুপ শীর্ষে মেরিনার্স