EXCLUSIVE, Yashasvi Jaiswal: আগ্রাসী মেজাজে তিন নম্বরে পারফর্ম করে আলাদা বার্তা দিতে মরিয়া `খারুস` যশস্বী
জন্ম উত্তরপ্রদেশে। কর্ম মুম্বইয়ে। সেই বিখ্যাত আজ়াদ ময়দানে। এই মাঠ থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটে উঠে এসেছেন সচিন তেন্ডুলকর, বিনোদ কাম্বলির মতো ক্রিকেটারেরা। স্কুল ক্রিকেটে সচিন এবং কাম্বলির ৬৬৪ রানের জুটি হয়েছিল এই ময়দানেই। সেখানেই ক্রিকেট শেখা শুরু করেছিলেন যশস্বী।
সব্যসাচী বাগচী
এ বারের আইপিএল (IPL 2023) কি ওঁর কেরিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াল! দেশের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ (Under 19 World Cup) খেলেছেন। মুম্বইয়ের (Mumbai) জার্সি গায়ে চাপিয়ে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটেও পারফরম্যান্স দারুণ। নির্বাচকদের চোখে পড়ার অপেক্ষা ছিল। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে (ICC World Test Championship Final 2023) স্ট্যান্ড বাই হিসেবে স্কোয়াডে ছিলেন। এ বার সরাসরি টেস্ট স্কোয়াডে যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal)। তাও আবার চেতেশ্বর পূজারা-র (Cheteshwar Pujara) জায়গায় তাঁকে দেখে নিতে চাইছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) ও হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid)।
এখনও টেস্ট অভিষেক হওয়া বাকি আছে। তবে ক্যারিবিয়ান সফরে (India Tour Of West Indies) উড়ে যাওয়ার আগে নিজের জন্য টার্গেটও সেট করে নিয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই ফের বেঙ্গালুরু জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে (National Cricket Academy) পাড়ি দেবেন যশস্বী। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের (West Indies) বোলারদের বিরুদ্ধে নামার আগে প্রস্তুতি সারবেন। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের (ICC World Test Championship Final) সময় বিরাট কোহলি (Virat Kohli)-অজিঙ্কা রাহানেদের (Ajinkya Rahane) সঙ্গে অনুশীলন করেছেন। অনেক কিছুই শেখার সুযোগ হয়েছে। টেস্ট স্কোয়াডে ডাক পেয়ে অনুভূতিটা কেমন? ছোটবেলার কোচ জ্বালা সিং-এর (Jwala Singh) সাহায্যে জি ২৪ ঘণ্টাকে সেটাই টেলিফোনে জানালেন এই আজাদ ময়দানে (Azad Maidan) ঘাম ঝরানো 'খারুস' মুম্বইকর।
প্রশ্ন: সুখবরটা প্রথম কার কাছে থেকে কীভাবে পেয়েছিলেন?
যশস্বী: দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম করছিলাম। হঠাৎ আমার এক পরিচিত ফোন করে সুখবরটা দিয়েছিলেন। বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে ছিলাম। এরপর দেশে ফিরেই জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে চলে যাই। বুঝতে পারছিলাম ভারতীয় দলে ডাক পেতে পারি। তবে একেবারে টেস্ট দলের দরজা এত দ্রুত খুলে যাবে সেটা ভাবতেই পারিনি। নিজের ব্যাটিং নিয়ে আমি বরাবরই আত্মবিশ্বাসী। তবে জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমের সদস্য হতে পেরে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন: উত্তরপ্রদেশের গ্রাম থেকে মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে বেড়ে ওঠা। সেখান থেকে ভারত এ, আইপিএল হয়ে ভারতীয় দল। স্বপ্নের মতো লাগছে?
যশস্বী: হ্যাঁ বলতে পারেন। তবে পরিশ্রম করলে ফল হাতেনাতে পাওয়া যায়। আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের জন্ম হলেও, আমার ক্রিকেটে হাতেখড়ি এই মুম্বইতেই। আর মুম্বইকর-রা যে 'খারুস' সেটা তো পুরো দেশ জানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক ঘটলে সেটা প্রমাণ করে দিতে চাই।
প্রশ্ন: দারুণ খবরটা পেয়ে বাবা-মায়ের অনুভূতি কেমন ছিল?
যশস্বী: সুখবরটা বাবাকেই প্রথম জানিয়েছিলাম। আমার কথা শুনেই বাবা কেঁদে ফেলেছিল। আমরা দু’জনেই আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। এই দিনটার জন্যই যাবতীয় পরিশ্রম করেছি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে দলের সঙ্গে ইংল্যান্ড গেলেও স্ট্যান্ডবাই ছিলাম। এ বার দলের সদস্যদের মধ্যে আমার নামটাও আছে। দলের সঙ্গে থাকা আর দলে সুযোগ পাওয়ার মধ্যে কিন্তু বিরাট পার্থক্য। এ বার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। মায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কয়েকবার কথা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাব। তখন পরিবারের সবাই ফের একবার সেলিব্রেট করব।
প্রশ্ন: এক থেকে তিন, আপনি কি লাল বলের ক্রিকেটে সব জায়গায় খেলতে তৈরি রয়েছেন?
যশস্বী: এত কোটির দেশে মাত্র কয়েক জন জাতীয় দলে সুযোগ পায়। আমি সৌভাগ্যবান। তাই যে সুযোগ পাব, সেটাই লুফে নেব। পেশাদার জগতে পারফরম্যান্সই শেষ কথা। সেটা অনেক ছোটবেলা থেকেই জেনেছি। এবং এই ভাবনা মনের মধ্যে গেঁথে দেওয়ার জন্য মুম্বই ড্রেসিংরুম ও আইপিএল-এ রাজস্থান রয়্যালসে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানাই। সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে। নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। খুব উত্তেজিত আমি। সেই সঙ্গে চাই মাঠে নেমে নিজেকে উজাড় করে দিতে।
প্রশ্ন: মনে করুন আপনাকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হল। চেতেশ্বর পূজারাকে মনে পড়বে? কারণ এত বছর তিন নম্বর জায়গা ওঁর দখলে ছিল।
যশস্বী: আমি মুম্বই ও ভারত এ দলের হয়ে এক থেকে তিন নম্বর, সব জায়গায় ব্যাট করেছি। আবার আইপিএল-এ রাজস্থানের হয়ে ওপেন করছি। দুটি একেবারে আলাদা ফরম্যাট। কিন্তু দিনের শেষে তো পিচের পরিস্থিতি ও বোলারদের বুঝে তাঁদের অ্যাটাক করা আমার কাজ। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দ্রুত ওপেনার আউট হলে, তিন নম্বর ব্যাটারের কাছে পিচে থিতু হওয়ার জন্য বেশি সময় থাকে না। টেস্টে সেই সুযোগ পাওয়া যায়। ভারত এ এবং মুম্বইয়ের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে লাল বলে খেলে সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। আশাকরি মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না।
আরও পড়ুন: Rohit Sharma, WI vs IND: রোহিত-বিরাটকে রেখে দল গড়লেও বিশ্রামে পূজারা-শামি, সুযোগ পেলেন বাংলার মুকেশ
প্রশ্ন: চেতেশ্বর পূজারা-র ব্যাটিং স্টাইল একেবারে আলাদা ছিল। ধৈর্যশীল ইনিংস খেলার জন্য পরিচিত তিনি। আপনি তিন নম্বরে ব্যাট করলে সে ভাবেই ব্যাট করবেন?
যশস্বী: ডমিনিকার উইন্ডসর পার্ক কিংবা ত্রিনিদাদের কুইন'স পার্ক ওভালের বাইশ গজ কেমন আচরণ করবে, কিংবা বিপক্ষের বোলারদের ফর্ম কেমন থাকবে, সেটা মুম্বই থেকে সটান বলে দেওয়া সম্ভব নয়। 'চিন্টু ভাইয়া' (পড়ুন, চেতেশ্বর পূজারা) ধৈর্যশীল মেজাজে ব্যাট করে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলেছে। সেখানে আমি একেবারে নতুন। তাই এখনই ওঁর সঙ্গে তুলনা করতে যাবেন না। তবে এতটুকু বলতে পারি, ক্রিজে টিকে গেলে আমি আগ্রাসী মেজাজেই খেলব। এ ভাবেই সব ফরম্যাটে খেলে এসেছি। আর এটাই আমার ব্যাটিং-য়ের স্টাইল স্টেটমেন্ট। সেটা বদলাতে যাব না। কারণ আগ্রাসী মেজাজে রান করতে পারলে, সেটা দলের কাজেই লাগবে।
প্রশ্ন: বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে বিরাট কোহলির কাছ থেকে ব্যাটিং টিপস নেওয়ার ছবিটা ভাইরাল হয়েছিল। বিরাটের কাছ থেকে কী শিখলেন?
যশস্বী: লম্বা ফরম্যাটে সাফল্য পেতে হলে কেমন ওয়ার্ক এথিক্স জরুরী, কীভাবে নিজের কঠিন পিচ ও পরিস্থিতিতে বোলারদের বিরুদ্ধে পারফর্ম করতে হবে সেটা নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল। এছাড়া ফুট ওয়ার্ক, দ্রুত ফ্রন্টফুট থেকে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া, এমনই কিছু টিপস দিচ্ছিলেন বিরাট ভাইয়া। তবে ওঁর সঙ্গে তো আগেই আলোচনা হয়েছে। আইপিএল চলার সময় দেখা হলেই বিরাট ভাইয়ার সঙ্গে সময় কাটিয়েছি।
প্রশ্ন: ছোটবেলা থেকে লড়াই আপনার সঙ্গী। এমন মুহূর্তে আজাদ ময়দান ও আপনার কোচ জ্বালা সিং সম্পর্কে কিছু বলবেন?
যশস্বী: ছোটবেলার সেই লড়াই করার দিনগুলোই আমাকে 'খারুস' করে তুলেছে। এবং নিজের মনকে ইস্পাত-কঠিন করে তোলার জন্য আজাদ ময়দান ও জ্বালা সিং স্যরের আমি চিরকৃতিত্ব। জ্বালা সিং আমাকে সুযোগ না দিলে, হয়তো হারিয়ে যেতাম। ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার কৃতিত্ব যতটা আমার, ঠিক ততটাই জ্বালা স্যর এবং আজাদ ময়দানের। এই মাঠ থেকেই উঠে এসেছেন সচিন তেন্ডুলকর, বিনোদ কাম্বলি। স্কুল ক্রিকেটে সচিন এবং কাম্বলির ৬৬৪ রানের জুটি হয়েছিল এই ময়দানেই। সেই মাঠে খেলে আমি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে পরব, ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।