Didier Deschamps, FIFA World Cup 2022: মারিও জাগালো, ফ্র্যাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের কীর্তি ভেঙে অনন্য রেকর্ড গড়ার অপেক্ষায় দিদিয়ের দেশঁ?
১৮ ডিসেম্বর লুসেল স্টেডিয়ামে দেশঁ ফের একবার শেষ হাসি হাসলে ছাপিয়ে যাবেন ব্রাজিল ও জার্মানির দুই কিংবদন্তিকে। দু`জনই ফুটবলার ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন। তবে বেকেনবাওয়ার ও দেশঁ-র থেকে একটি জায়গায় এগিয়ে রয়েছেন জাগালো।
সব্যসাচী বাগচী
লিওনেল স্কালোনির (Lionel Scaloni) মতো দিদিয়ের দেশঁ (Didier Deschamps) এক অনন্য রেকর্ড গড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের (FIFA World Cup 2018) রিমেক ঘটিয়ে ফ্রান্স (France) যদি আর্জেন্টিনাকে (Argentina) হারিয়ে দেয়, তাহলেই চলতি কাতার বিশ্বকাপে (FIFA World Cup 2022) নতুন নজির গড়বেন ৫৪ বছরের প্রাক্তন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। ১৯৯৮ সালে (FIFA World Cup 1998) অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার পর, গতবার কোচ হিসেবে মেগা ফাইনাল জিতেছিলেন দেশঁ। এবং সেই কীর্তি গড়ে অন্য দুই প্রবাদপ্রতিম মারিও জাগালো (Mario Zagallo) ও ফ্র্যাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের (Franz Beckenbauer) তালিকায় নাম লিখিয়ে নেন। ১৮ ডিসেম্বর লুসেল স্টেডিয়ামে দেশঁ ফের একবার শেষ হাসি হাসলে ছাপিয়ে যাবেন ব্রাজিল (Brazil) ও জার্মানির (Germany) দুই কিংবদন্তিকে। দু'জনই ফুটবলার ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন। তবে বেকেনবাওয়ার ও দেশঁ-র থেকে একটি জায়গায় এগিয়ে রয়েছেন জাগালো। তাঁর সেই অক্ষত রেকর্ড হল ফুটবলার হিসেবে দু'বার বিশ্বকাপ হাতে তুলেছিলেন জাগালো। তিনজন এই কীর্তিমানের সাফল্যের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
মারিও জাগালো: সবার প্রথমে যিনি এই অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন। ব্রাজিলের হয়ে খেলতেন লেফট উইং পজিশনে। ছোটখাটো চেহারার জাগালোর ছিলেন পরিশ্রমী ফুটবলার। সঙ্গে ছিল ভালো টেকনিক। লেফট উইং থেকে বল নিয়ে দৌড়ে ঢুকে যেতেন ডি-বক্সের মধ্যে। সেইজন্য কোচরা মাঝেমধ্যে তাঁকে ফরোয়ার্ড হিসেবেও খেলাতেন। তিনি প্রথমবার বিশ্বকাপ জিতেছেন ১৯৫৮ সালে। তারপর আবার ১৯৬২-তে। দু'বারই ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন জাগালো। তারপর ব্রাজিলের কোচ হিসেবে ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে তাঁকে দেখা যায়। আর তখনই ইতিহাসের পাতায় নতুন একটি অধ্যায় যোগ করেছিলেন তিনি। ফুটবলার হিসেবে জোড়া বিশ্বকাপ জেতার পর সেবার কোচ হিসেবে জিতেছিলেন জুলে রিমে ট্রফিটি। ব্রাজিলের সেই দলকে তর্কযোগ্যভাবে সর্বকালের সেরার তকমা দেন ফুটবল পন্ডিতরা। ফুটবলার থেকে কোচ হিসেবে এই জার্নির মধ্যে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৮। আর তাই তিনটি বিশ্বকাপ জেতা জাগালোকে অনন্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কমবয়সী কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের তালিকায়ও তিনি দ্বিতীয়। তাঁর অর্জন এখানেই শেষ নয়। ১৯৯৪ -এর বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের সহকারী কোচ ছিলেন তিনি। ফলে ফুটবলার ও স্টাফ হিসেবে মোট চারটি বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব জাগালোর নামেই লেখা। আর তাই ফিফা তাঁকে 'অর্ডার অফ মেরিট' উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছে।
ফ্র্যাঞ্জ বেকেনবাওয়ার: তালিকায় দ্বিতীয় নাম ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের। তাঁকে জার্মানরা 'কাইজার নামে ডাকে , যার অর্থ 'সম্রাট'। জার্মান ফুটবলে তাঁর অবদান অনন্য। সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন ধরা হয় বেকেনবাওয়ারকে। কেরিয়ার শুরু করেছিলেন মিডফিল্ডার হিসেবে, পরবর্তী সময়ে খেলেছেন ডিফেন্ডার হিসেবে। তৎকালীন পশ্চিম জার্মান দলের অবিচ্ছেদ্য সদস্য ছিলেন বেকেনবাওয়ার। ১৯৭৪-এ কিংবদন্তি জোহান ক্রুয়েফের 'টোটাল ফুটবল' খেলা হট ফেবারিট নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় পশ্চিম জার্মানি। আর সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন বেকেনবাওয়ার। জুলে রিমে ট্রফির মালিকানা ব্রাজিলের হয়ে যাওয়ার পর নতুন বিশ্বকাপ ট্রফি জেতা প্রথম অধিনায়ক ছিলেন তিনিই। ফুটবলার হিসেবে প্রাক্তন হয়ে গেলেও মাঠের প্রতি প্রেম রয়েই গিয়েছিল। জার্মান দলকে কোচিংয়ের দায়িত্ব নেন ১৯৮৪ সালে। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে জাগালোর পাশে নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন, শুধু পারেননি দিয়েগো মারাদোনা ও আর্জেন্টিনার জন্য। তবে ১৯৯০ সালে আর ভুল করেননি। সেই আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতান জার্মানিকে। আর সেই মেগা ফাইনাল জেতার পরেই জাগালোর পাশে জায়গা করেছিলেন বেকেনবাওয়ার। সঙ্গে অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে দলকে বিশ্বকাপ জেতানো প্রথম ব্যক্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার।
আরও পড়ুন: Leonel Messi: কাপ যুদ্ধের মঞ্চে মেসির মহানুভবতার ছয় বছর পুরনো ঘটনা সামনে চলে এল
দিদিয়ের দেশঁ: সর্বশেষ ব্যক্তি হলেন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জেতা ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশঁ। ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ জেতা ফ্রান্সের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। খেলতেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে। খেলেছেন মার্শেই, জুভেন্টাসের মতো বড় বড় ক্লাবে। ছিলেন পরিশ্রমী খেলোয়াড়, সঙ্গে স্ট্যামিনা, প্রেসিং ও ট্যাকলিং-এর দক্ষতার কারণে সহজেই প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দিতে পারতেন। ফলে জিনেদিন জিদানের বিশ্বকাপজয়ী ফ্রান্স দলের অপরিহার্য একজন ছিলেন দেশঁ। ওপরের দুই কিংবদন্তির চেয়ে তাঁর ফুটবলার হিসেবে তাঁর সাফল্য অনেক বেশি। বিশ্বকাপের সঙ্গে জিতেছেন ২০০০ সালে ইউরো কাপ। ক্লাবের হয়ে ফ্রান্স ও ইতালির ঘরোয়া লিগ এবং দু'বার চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছেন। ফ্রান্স ফুটবল দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১২ সালে। এরপর ২০১৪ বিশ্বকাপে দলকে নিয়েছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। ২০১৬ -এর ইউরোতে ফাইনালে গিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের কাছে হেরে যায় ফ্রান্স। অবশেষে সাফল্য পেয়েছিলেন গত রাশিয়া বিশ্বকাপে। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় দেশঁ-র ছেলেরা।
তিনি বেকেনবাওয়ারের পর দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি অধিনায়ক ও কোচ হিসেবে দলকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। সেই সঙ্গে ফুটবলার ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতা তৃতীয় ব্যক্তিও তিনি। আর এবার যদি মেগা ফাইনালে কিলিয়ান এমবাপে, আন্তোনিও গ্রিজম্যানরা ট্রফি হাতে তুলে নিতে পারে, তাহলে দেশঁ হবেন বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম ব্যাক্তি, যিনি ফুটবলার হিসেবে কাপ যুদ্ধ জেতার সঙ্গে কোচ হিসেবে জোড়া বিশ্বকাপ জেতার অনন্য নজির গড়বেন। পারবেন ক্ষুরধার মস্তিস্কের দেশঁ। আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)