Lionel Messi, FIFA World Cup Final: বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে, মারাদোনার সিংহাসনে বসলেও শান্ত-নির্লিপ্ত মেসি যেন `ক্যাপ্টেন কুল`!
টাইব্রেকারে গঞ্জালো মন্টিয়েলের শট জালে জড়াতেই দু`হাত শূন্যে ছুড়ে দিয়েছিলেন। পাঁচবার অনেক চেষ্টার পর, ৩৫ বছরে পা রাখার পর প্রথম বিশ্বকাপ জয় বলে কথা। তবে এমন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জেতার পরেও সংযত দেখাল। দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন সফল হওয়ার আনন্দে আত্মহারা মেসি একে সব সতীর্থকে জড়িয়ে ধরতে শুরু করলেন।
সব্যসাচী বাগচী
ক্লাব ফুটবলে এমন কোনও শিরোপা নেই যেটি অন্তত তিনবার জেতেননি। বার্সেলোনার (Barcelona FC) হয়ে জেতা ট্রফিতে যেন উপচে পড়ছে ঘর। দলীয় আর ব্যক্তিগত সব অর্জনের কত না স্মারক। তবুও লিওনেল মেসির (Lionel Messi) মনের কোণে ছিল হাহাকার! তীয় দলের হয়ে অর্জনের থলি যে ছিল শূন্য। সেই আক্ষেপের প্রথম ধাপ মিটেছিল গত বছর। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে (Brazil) ১-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার (Copa America) চ্যাম্পিয়ন হল আর্জেন্টিনা (Argentina)। একেবারে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিলেন মেসি। তবে তিনি জানতেন বিশ্বকাপ (FIFA World Cup 2022) না জিততে পারলে তাঁকে নিয়ে ফের সমালোচনা হবে। দিয়েগো মারাদোনার (Diego Maradona) কীর্তি অন্তত না ছুঁতে পারলে তাঁর স্বত্তা নিয়ে উঠবে ফের প্রশ্ন। শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে, লেখা ভালো রুদ্ধশ্বাস মেগা ফাইনালে (FIFA World Cup Final 2022) ফ্রান্সের (France) বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে জিতে, সেই অধরা মাধুরীও ছুঁয়ে ফেললেন। বসলেন তাঁর 'ফুটবল আইডল'-এর সিংহাসনে। তবুও এমন সাফল্যের পরেও শান্ত-নির্লিপ্ত থেকে গেলেন 'এল এম টেন' (LM 10)। বরাবরের মতোই এবার 'ক্যাপ্টেন কুল' তিনি।
টাইব্রেকারে গঞ্জালো মন্টিয়েলের শট জালে জড়াতেই দু'হাত শূন্যে ছুড়ে দিয়েছিলেন। পাঁচবার অনেক চেষ্টার পর, ৩৫ বছরে পা রাখার পর প্রথম বিশ্বকাপ জয় বলে কথা। তবে এমন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জেতার পরেও সংযত দেখাল। দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন সফল হওয়ার আনন্দে আত্মহারা মেসি একে সব সতীর্থকে জড়িয়ে ধরতে শুরু করলেন। বাদ পড়লেন না কোচ লিওনেল স্কালোনি। সহকারী কোচ পাবলো আইমার-সহ দলের অন্য সদস্যরাও। কেউ কাঁদছিলেন। কেউ গাইছিলেন গান। এক বার নয়, বার বার সতীর্থদের জড়িয়ে ধরছিলেন মেসি। আর্জেন্টিনার ৩৫ বছরের অধিনায়ক আসলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাইছিলেন। \
খেলা শেষ। ফ্রান্সের ফুটবলারদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করলেন। সংযত আবেগে স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত আত্মস্থ করে মাঠে ডেকে নিলেন পরিবারকে। এর আগে নিলেন নিরাপত্তা কর্মীদের অনুমতি। স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জো (Antonela Roccuzzo) ও তিন ছেলে মাঠে আসার পর তাঁদেরও জড়িয়ে ধরলেন মেসি। ছেলেদের তুলে নিলেন কোলে। এরমধ্যে আবার সতীর্থদের সঙ্গে গ্যালারির সামনে গিয়ে সমর্থকদের জন্য গাইলেন গান।
মেসি বুঝিয়ে দিলেন তাঁর জবাব দেওয়ার আর কিছু নেই। বিশ্বের প্রথম ফুটবলার হিসাবে বিশ্বকাপে দু'বার সোনালী বল জিতলেন। সেই পুরস্কার নিতে গিয়েই বিশ্বকাপের ট্রফি স্পর্শ করে তাতে চুম্বন এঁকে দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন এই ট্রফিটা পাওয়ার জন্য কতটা ব্যাকুল ছিলেন। সেটা গোটা বিশ্ব দেখল।
শুরু থেকেই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন মেসি। যখনই বল আসছে, তিনি কোনও না কোনও ভাবে সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। দেখে নিয়েছেন কোথায় কোন সতীর্থ রয়েছেন। সামান্যতম ফাঁক পেলেই পাস বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কিলিয়ান এমবাপে সেই তুলনায় শুরু থেকে ছিলেন অনেক ম্রিয়মান। স্কালোনির ছকে ফরাসি তারকাকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিলেন ডিফেন্ডাররা। এমনকি, এমবাপেকে যিনি বল জোগান, সেই গ্রিজম্যানের সঙ্গে তাঁর সংযোগও কেটে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই এমবাপে হ্যাটট্রিক করে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন অগণিত আর্জেন্টাইনদের। তবে শেষরক্ষা। কারণ মেসির লড়াই, স্বার্থত্যাগকে মূল্য দেওয়ার জন্য গোল পোস্টের নিচে যে তাঁর বন্ধু এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ছিলেন।
অবশেষে লুসেল থেকে হেসেই বিদায় নিলেন। বিদায় বলতে শুধুই বিশ্বকাপকে বিদায়, হয়তো আন্তর্জাতিক ফুটবলকেও। কিন্তু ক্লাব ফুটবল থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও চিন্তা তো শোনা যায়নি এখনও। মেসিকে হয়তো এরপরও দেখা যাবে মাঠে, তবে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে শেষবারের মতো দেখা গেল। স্কালোনি এই বিশ্বকাপে কথাটা আগেও বলেছেন। ফাইনালের আগে বলেছিলেন, 'লেটস এনজয় মেসি।'
হ্যাঁ, মেসি তো 'এনজয়' করারই জিনিস। খেলা দেখার অনেক দিন পরও মানুষ কী মনে রাখে? মনে রাখে, মোমেন্টস। বাংলায় 'মুহূর্ত' বলা যায়। যদিও তাতে হয়তো ঠিক বোঝানো যায় না। অনেক দিন পর একটা ফুটবল ম্যাচের একটা গোল, একটা অ্যাসিস্ট, একটা ড্রিবলিং, একটা দৌড়...এসবই তো চোখে ভাসে।
এই বিশ্বকাপেই এমন কতগুলো হিরণ্ময় মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন মেসি, একবার মনে করে দেখুন তো! মেক্সিকো আর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই দুটি গোল। নেদারল্যান্ডস ম্যাচে মোলিনাকে 'অ্যাসিস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ', ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ওই সর্পিল দৌড়...পড়তে পড়তে ভাসছে না সব চোখে! তাই তিনি যদি বিশ্বকাপ না জিততেন তাহলে মেসির প্রতি অন্যায় হত। সেটা নিজের দমে জিতলেন।
তাই লিখতেই হচ্ছে, লেটস এনজয় মেসি! তবে আক্ষেপ দিয়েগো মারাদোনা দেশের তৃতীয় বার বিশ্বজয় দেখতে পারলেন না। মেসি প্রাক্তন কোচের স্বপ্নও পূরণ করলেন। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে প্রথম বার বিশ্বকাপ জিতিয়ে ছিলেন মারাদোনা। এর তিন যুগ পর দেশকে তৃতীয় বিশ্বকাপ দিলেন মেসি। মারাদোনা নির্ঘাত স্বর্গ থেকে তাঁর চ্যালাকে দু'হাত ভরিয়ে আশীর্বাদ করেছেন।
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)