সব্যসাচী বাগচী


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

জীবনে সবাই পাল্টা দেওয়ার সুযোগ পান। সবার জন্যই ফিরে আসার দরজা খোলা থাকে। কেউ সাফল্য পান। কেউ আবার হারিয়ে যান। হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya) দ্বিতীয়দের দলে পড়েন না। তাই তো ভারতীয় দলে (Indian Team) ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়ার পরেও, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (Mumbai Indians) থেকে ব্রাত্য হয়ে যাওয়ার পরেও, ফিরে এলেন। কলার তুলে। দাপটের সঙ্গে।


গুজরাত টাইটান্সকে (Gujarat Titans) আবির্ভাবেই আইপিএল-এর (IPL Champion) মহার্ঘ্য ট্রফি দিয়েই ক্ষান্ত থাকলেন না। অধিনায়ক হিসেবেও একটা স্টেট্মেন্ট যেন জারি করে দিলেন। এমনটা একটা দল নিয়ে আইপিএল জিতলেন, যার নাম গুজরাত টাইটান্স না হলে ‘বাতিল ঘোড়া টাইটান্স’ লিখে দিলে অত্যুক্তি হবে না।


এক থেকে এগারো বাতিল নামের ছড়াছড়ি। ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha) জাতীয় দল ও বাংলায় ব্রাত্য। শুভমন গিলকে (Subhman Gill) কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders) ছেড়ে দিয়েছিল। অভিযোগ ছিল ছেলেটার স্ট্রাইক রেট নাকি কম! ম্যাথু ওয়েডকে (Matthew Wade) ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (Cricket Australia) সেন্ট্রাল কনট্র্যাক্টই দেয়নি। ডেভিড মিলার (David Miller) ও মহম্মদ শামির (Mohammed Shami) উপর পঞ্জাব কিংস (Punjab Kings) আস্থা রাখেনি। এই ফরম্যাটে সবচেয়ে বড় স্পিনার রশিদ খানকে (Rashid Khan) সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (Surisesrs Hyderabad) ছেড়ে দিয়েছিল! গত দুই বছর রাহুল তেওয়াটিয়া (Rahul Tewatia) নিজের সর্বস্ব দিয়ে রাজস্থান রয়্যালসকে (Rajasthan Royals) দিলেও, তাঁকে এ বার ছেড়ে দিয়েছিল। সেই দলকে তাঁরা হারিয়ে দিলেন ফাইনালে। এতগুলো বাতিল ঘোড়া নিয়েও যে আইপিএল যুদ্ধ জেতা যায়, সেটা দেখিয়ে দিলেন হার্দিক।



জবাব দিলেন রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) মুম্বইকেও। ঈশান কিশান (Ishan Kishan), কায়রন পোলার্ড (Keiron Pollard), সূর্য কুমার যাদবকে (Surya Kumar Yadav) ধরে রাখার জন্য হার্দিককে ছেড়ে দিয়েছিল মুম্বই। গত দেড় বছর তাঁকে চোটের জন্য ভুগতে হয়েছে। পিঠের ব্যথার জন্য বোলিং করতে পারতেন না। জাতীয় দল থেকে ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই রেশ দেখা দিল মুম্বই ক্যাম্পেও। ফলে তাঁর উপর আস্থা না রাখতে পারেনি পাঁচবারের বিজয়ী দল। বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া হল তাঁকে।


সেখান থেকে তাঁর ফিরে আসার গল্প শুরু। এবারের আইপিএল শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে নিজের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন। নিলাম মঞ্চে দল তৈরি হয়ে যাওয়ার পর প্রতিটি ক্রিকেটারকে শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট বিক্রম সোলাঙ্কি (Vikram Solanki), মেন্টর গ্যারি কার্স্টেন (Garry Kristen) ও হেড কোচ আশিস নেহরার (Asish Nehra) সঙ্গে আলোচনা করতেন হার্দিক। সেটা শুরু থেকে শেষ বল খেলার আগে পর্যন্ত বজায় ছিল।


এই নিয়ে পাঁচটি আইপিএল জিতে নিলেন হার্দিক। তবে এ বার তাঁকে এতটা পরিণত দেখাল। মাঠ ও মাঠের বাইরে তাঁকে নিয়ে তো কম বিতর্ক এত বছর হয়নি। কয়েক বছর আগের কথা। করণ জোহরের (Karan Johar) একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হার্দিক ও কেএল রাহুল (KL Rahul)। সেখানে নারীদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য সারা দেশে তীব্র সমালোচিত হয়। ভারতীয় দল থেকে নির্বাসিত হন দুজন। সেই ঘটনা হার্দিককে অনেক বদলে দিয়েছিল। বেশ কয়েক সপ্তাহ নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখে দিয়েছিলেন। সেই দুঃসময় তাঁকে আগলে রেখেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (Mahendra Singh Dhoni)। তাঁর ছোঁয়াতেই বদলে গিয়েছেন হার্দিক। গুজরাতের অধিনায়কত্ব তাঁর আরও বদল ঘটিয়েছে।



তাই তো অধিনায়ক হিসেবে প্রথম আইপিএল জেতার পরেই হার্দিক তাঁর ‘মেন্টর’ ধোনিকে কৃতিত্ব দিলেন। ধোনির নেতৃত্বেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক ঘটে হার্দিকের। ফাইনাল জেতার পরেই ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “মাহি ভাই আমার জীবনে খুব বড় ভূমিকা নেয়। ও আমার দাদা, বন্ধু এবং পরিবারের অংশ। আমি ওর থেকে অনেক কিছু শিখেছি।” মাঠে হার্দিক যে ভাবে শান্ত মাথায় নেতৃত্ব দেন তাতে ধোনির সঙ্গে তাঁর মিলও পাওয়া গিয়েছে।


কঠিন পরিস্থিতির সামনে কখনও হার্দিককে চিন্তিত হতে দেখা যায় না। ঠান্ডা মাথায় স্কোর বোর্ড সচল রাখেন হার্দিক। যে বিধ্বংসী হার্দিককে দেখা যেত, সেই তিনিই দলের প্রয়োজনে শান্ত হয়ে যাচ্ছেন। ইডেনের প্রথম কোয়ালিফায়ার থেকে শুরু করে রবিবাসরীয় মেগা ফাইনালে, দুটি ম্যাচেই তিনি দলের স্বার্থে ব্যাট করেছেন। মাথা ঠাণ্ডা রেখে। সঙ্গে ছিল সংযম ও নিষ্ঠা।


বিতর্কিত মন্তব্য, চোট, অস্ত্রোপচার, এগুলো সব ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। তাই সাংবাদিক সম্মেলনে নিজেই বলেন, “আমার জীবনের সব কিছুতে একটা ভারসাম্য আনার চেষ্টা করেছি। অধিনায়ক হওয়ার আগেও আমি চেষ্টা করেছি যে কোনও পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে। এটা করাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হচ্ছিল। দ্রুত সব কিছুর মধ্যে ঢুকে যাওয়ার থেকে ১০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ভেবে কোনও কিছু করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।”



শুধু ধোনি নন। তিনি নেতৃত্বের গুন বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ও রোহিতের কাছ থেকে শিখেছেন। সেটা উল্লেখ করে হার্দিক ফের যোগ করেন,“বিরাটের থেকে আমি আগ্রাসন শিখেছি। ও যে ভাবে আবেগ ও শক্তির মিশেলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যায় সেটা শিক্ষণীয়। মাহি ভাই সব পরিস্থিতিতে  শান্ত থাকে। সেটা আমাকে অনেক শিক্ষা দিয়েছে। রোহিত আবার তার সতীর্থদের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেয়। গুজরাত দলে আমি সেটা আমদানি করেছি। এবং ফল পেয়েছি।“


প্রতি আইপিএল থেকেই কয়েকজন নতুন প্রতিভা জন্ম নেয়। এরপর অনেকে ডালপালা বিস্তার করে। তবে এই প্রথমবার আইপিএল এক নতুন নেতার জন্ম দিল। যে শুধু গুজরাত টাইটান্সে নিজেকে সীমিত রাখবে না। টিম ইন্ডিয়া থেকে রোহিত যুগ শেষ হলে সীমিত ওভারে পরবর্তী নেতা হার্দিক হতেই পারেন। কেএল রাহুল, ঋষভ পন্থ (Rishaabh Pant), শ্রেয়স আইয়ারদের (Shreyas Iyer) সঙ্গে লড়াইয়ে ঢুকে পড়লেন হার্দিকও।


কারণ এটা যে ‘হার্দিক পান্ডিয়া ভার্সন টু’।


আরও পড়ুন: IPL Final 2022, GT vs RR: Rajasthan-কে সাত উইকেটে হারিয়ে আবির্ভাবেই বিজয়ী Hardik-এর Gujarat Titans


আরও পড়ুন: IPL 2022 final, GT vs RR: মেগা ফাইনালে Umran-এর কোন রেকর্ড ভাঙলেন Lockie Ferguson? জেনে নিন


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)