বাংলার `দ্রোণাচার্য`র হাতেই তৈরি ইতিহাস গড়া হিমা দাসের `গুরু`
বাংলার দ্রোণাচার্য কোচের সঙ্গে অসমের অ্যাথলিট গুরুর পুনর্মিলন করিয়ে দিলেন সেই সোনার মেয়েই।
সুমন মজুমদার
প্রায় বছর কুড়ি আগের স্মৃতি। ফ্যাকাসে হতে বসেছিল। কিন্তু হঠাত্ করেই পুরনো ফ্রেম থেকে ময়লা ঝেড়ে ফেললেন আসামের এক অষ্টাদশী মেয়ে। বাংলার দ্রোণাচার্য কোচের সঙ্গে অসমের অ্যাথলিট গুরুর পুনর্মিলন করিয়ে দিলেন সেই সোনার মেয়েই।
আরও পড়ুন- কে এই হিমা দাস? জেনে নিন ইতিহাসে নাম তোলা মেয়ের কথা
গোটা দেশে এখন শুধুই হিমাকে নিয়েই চর্চা। বিরাট কোহলি, সুনীল ছেত্রীদের দেশে অখ্যাত এক অহমিয়া মেয়ে আলো কেড়ে নিয়েছেন আচমকা। মিডিয়ার ক্যামেরার তাক, প্রচারের স্পটলাইট, সাহায্যের আশ্বাস, কিছুই এতদিন ছিল না। নওগাঁও জেলার ঢিং গ্রাম এমনিতে ভারতীয় মানচিত্রে দেখা যায়। কিন্তু গ্রামটাকে বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল করে তুললেন যে মেয়ে, তাঁর নাম হিমা দাস। ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখে তিনি এখন সংবাদ শিরোনামে।
আরও পড়ুন- হিমার হাত ধরে ৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম সোনা জয় ভারতের
ছাত্রীর সাফল্যের দিনে কলকাতার কথা ভুলে যাননি হিমার গুরু নিপন দাস। ভুলে যাননি নিজের শিকড়ের কথা। কলকাতার সাংবাদিককে পেয়ে স্মৃতিচারণ করে বলছিলেন, ''বছর কুড়ি আগে কলকাতায় গিয়েছিলাম কোচিং ডিপ্লমা ডিগ্রি আনতে। সাই-তে তখন প্রধান কোচ কুন্তল রায়। কুন্তল স্যরের থেকে কোচিংয়ের ব্যাপারে অনেক কিছু শিখেছি। বলতে পারেন, আমার কোচ হয়ে ওঠার পিছনে তাঁর অবদান অনেকটাই। বহু বছর ওনার সঙ্গে কথা হয়নি। আশা করি, কুন্তল স্যর আমাকে ভুলে যাননি। হিমার এই সাফল্যের খবর আমি কুন্তল স্যরকে দেব। উনি নিশ্চয়ই শুনেছেন। তবে আমার মুখে শুনলে আরও খুশি হবেন''। কথাগুলো বলতে বলতে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ছিলেন নিপন।
কোচ কুন্তল রায়
একইরকমভাবে পুরনো কথা মনে পড়ায় মুখে হাসির ঝিলিক খেলে যাচ্ছিল দ্রোণাচার্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কোচ কুন্তল রায়েরও। বলছিলেন, ''বহু বছর আগের কথা। নিপনের কথা এখনও মনে আছে আমার। আমার তত্ত্বাবধানে বেশ কিছুদিন ও ট্রেনিং করেছে। কোচ হিসাবে ও এমন সাফল্য পেয়েছে শুনে ভীষণ আনন্দ পেয়েছি। আর হিমাকেও অনেক শুভেচ্ছা জানাতে চাই। ট্র্যাক ইভেন্টে ও প্রথম ভারতীয় মেয়ে হিসাবে পদক জিতেছে। ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছে। ওয়ার্ল্ড আন্ডার ২০ চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামী প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে। সেখানে সোনাজয় মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়।''
আরও পড়ুন- টিভি স্টুডিওয় বসলেন 'নকল' হ্যাজার্ড!
বেশিদিন নয় মাত্র বছর দেড়েক ধরে হিমাকে ট্রেনিং করান নিপন দাস। গত বছর জানুয়ারিতে একটি শিবিরে যোগ দিতে গুয়াহাটিতে এসেছিলেন হিমা। কমবয়সী মেয়েটির প্রতিভা চিনতে ভুল করেননি নিপন। তার পর থেকে তাঁকে গুয়াহাটিতে ভাড়া বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন নিপন দাসই। মাস ছয়েক ভাড়া বাড়িতে থাকার পর রাজ্য সরকারের ক্রীড়া দফতরের হোস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করেন কোচ। গত বছর ৪ নভেম্বর জাতীয় শিবিরে যোগ দেন হিমা। আপাতত ফিনল্যান্ড থেকে ইউক্রেন যাবেন তিনি। যদিও তাঁর সঙ্গে ফিনল্যান্ডে যাননি কোচ নিপন। গুরুমশাই আপাতত গুয়াহাটিতেই রয়েছেন। তবে এত বড় সাফল্য পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রী প্রথম ফোনটা করেছিলেন গুরু-কেই। নিপন বলছিলেন, ''ও যৌথ পরিবারে বড় হওয়া মেয়ে। ওর বাড়িতে সব মিলিয়ে ১৬ জন সদস্য রয়েছে। বাড়ির দারুণ পরিবেশ ওর চরিত্র গঠনে সাহায্য করেছে। আসলে হিমা প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। ও সব সময় লড়াই করে নিজের সঙ্গে। যে ইভেন্টেই নামুক না কেন, প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে ও খুব একটা ভাবে না। আর অসম্ভব শৃঙ্খলাপরায়ণ। মাঠে থাকলে প্র্যাকটিস ছাড়া অন্য কিছু জানে না।'' বলতে বলতে আবেগঘন হয়ে পড়ছিলেন গর্বিত গুরু।