সৌরভ পাল


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

পঞ্চাশোর্ধ্ব দুই তরুণের প্রেম। একজনের বয়স ৬০, অন্যজনের ৫৬। চুলে পাক ধরেছে দুজনেরই। গোঁফেও সাদা রঙের আধিক্য বেড়েছে। তবুও ওদের তরুণই বলছি। কারণ, ওরাই ‘তাসের দেশে’র সবথেকে ‘নবীন প্রজন্ম’। যারা শতাব্দী প্রাচীন মিথ ভেঙে নতুন মিথ তৈরি করে দিল। যাদের দ‍ৌলতেই লিখতে পারছি, ‘তাস দাবা পাশা- তিন কর্মের আশা’। 


 কথা বলছি এশিয়াডে দুই সোনাজয়ী বাঙালি, প্রণব বর্ধন আর শিবনাথ সরকারের। তাসের দেশে ওরাই সেই ‘দম্পতি’ যারা প্রথমবার ব্রিজ (তাস) খেলিয়ে হিসেবে  এশিয়ান গেমসে জোড়া পদক জিতল।



উল্লেখ্য, এবারই প্রথম এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ব্রিজ। আর প্রথমবারই বাজি মারল ভারত। সৌজন্যে প্রণব (বর্ধন)-শিবনাথ (সরকার) জুটি। জাকার্তায় যেখানে হকি, কাবাডির মতো খেলায় স্বর্ণ পদকের ‘দীর্ঘকালীন সত্ত্ব’  খুইয়ে এল ভারত, সেখানে কীভাবে রূপকথা লিখল এই দুই বাঙালি? প্রণব বাবু আর শিবনাথ সরকার, দুজনেই বলছেন সবটাই সাধনা আর যুগলবন্দি।



যেখানে ঠোঁট নড়বে না, চোখ রাখতে হবে স্থির, একটু অসবধান-ই শরীরী ভঙ্গিতেও খেলা থেকে  ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে ‘মানসিক বোঝাপড়া’টাই সব। শিবনাথ সরকারের কথায়,  “ব্রিজের ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর”। আর প্রণব বাবুর বক্তব্য, “সুখ-দুঃখের কথা না থাকলে পার্টনার হওয়া যায় না। দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক তো বটেই আমাদের মধ্যে একটা পারিবারির যোগাযোগও রয়েছে। আর সেটা দীর্ঘ ২০ বছরের”।   


প্রসঙ্গত, ১৯৫১ সালের পর এবার আবার এশিায়াডে ১৫টা সোনা জিতল ভারত। আর সেখানে অবদান রাখল এই দুই বাঙালিও। এত দিন যে  খেলার জন্য পাড়া-পড়শি, আত্মীয়-স্বজনদের মুখ ঝামটা শুনতে হয়েছিল আজ সেই খেলার জন্যই সবথেকে গর্বিত অনুভব করছেন এই দুই ক্রীড়াবিদ। শিবনাথ সরকার তো বলেই ফেললেন, “সাধারণ মানুষ বোঝে না। তাসের কথা শুনলেই রেগে যায়। তাদের কে জবাব দিয়েছি এই স্বর্ণ পদক দিয়ে”। অন্যদিকে প্রণব বাবু বলছেন, “ব্রিজ একটা যুক্তির খেলা। পড়তে হয়, জানতে হয়, বুদ্ধি ব্যবহার করতে হয়”।  স্ত্রী ও মেয়ের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেই তিনি আরও বলছেন, “যে কোনও জিনিসই পাওয়া যায়, তবে সেটা পাওয়ার মতো করে বলতে হবে। বোঝানো এবং বলার ধরনটাও একই রকমের। কেন তাস খলেছি। তাঁদের (স্ত্রী ও মেয়ে) বোঝাতে পেরেছি।  শান্তি আছে বলেই মানসিক খেলা নিয়ে এগোতে পারছি।” তিনি চাইছেন আগামী প্রজন্মও তাসের খেলায় নাম লেখাক।



একই কথা শিবনাথ সরকারের কথাতেও। তাসের খেলায় যেভাবে গড় বয়সের তফাত্ কমছে এবং ভারতীয়রা যেভাবে পারফর্ম করছে তাতে আগামী দিনে অলিম্পিক্সের মতো প্রতিযোগীতায়ও ভারত ভাল করবে বলেই আশাবাদী তিনি। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “তাস খেলুড়েদের জন্য সরকারও উদ্যোগী হয়েছে। ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ (জুনিয়র, সিনিয়র দুটোই) কিংবা কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করলেই পূর্ব-পশ্চিম এবং মধ্য রেলে চাকরির সুযোগ রয়েছে। এমনকি মেট্রো রেলও  এই বিষয়ে উত্সাহ দেখিয়েছে। সুতরাং, তাস-দাবা-পাশা-এই তিন কর্মের আশা”।