সব্যসাচী বাগচী: ডারবান ও কানপুরের গ্রীনপার্ক স্টেডিয়ামকে একসূত্রে মিলিয়ে দিলেন ২৬ বছরের ছেলেটা! ২৯ বছর আগের কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওঁর 'গুরু' প্রবীণ আমরে (Pravin Amre) অভিষেক টেস্টে ২৯৯ বলে ১০৩ করেছিলেন। শুক্রবার সকালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে 'শিষ্য' শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer) থামলেন ১০৫ রানে। খেললেন ১৭১ বল। মারলেন ১৭টি চার ও ২টি ছয়। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ভারতীয় দলের (Team India) হয়ে লাল বলের ক্রিকেটে গুরু ও শিষ্যের উত্থানের ব্যবধান ২৯ বছরের হলেও, আশা ও আশঙ্কার দোলাচল একই রকম রয়ে গিয়েছে। অভিষেক টেস্টে শতরানের পরেও 'গুরু' আমরে বঞ্চনার শিকার হয়েছিলেন। 'ছাত্র' শ্রেয়সের কপাল এমন মন্দ হবে না তো! আনন্দের দিনেও সেটা নিয়েই ভয় পাচ্ছেন দিল্লি ক্যাপিটালসের ব্যাটিং পরামর্শদাতা ও শ্রেয়সের ছোটবেলার কোচ। 


শতরান দিয়ে টেস্ট কেরিয়ার শুরু করলেও শ্রেয়সের ভবিষ্যতে রয়েছে একাধিক কাঁটা। দ্বিতীয় টেস্টেই ফিরছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। তিনি প্রত্যাশিত ভাবে চার নম্বরে ব্যাট করবেন। তিন ও পাঁচ নম্বরে রয়েছেন চেতেশ্বর পূজারা ও অজিঙ্কা রাহানে। দুই ওপেনার শুভমন গিল ও ময়ঙ্ক আগরওয়াল। ফলে প্রথম পাঁচে তাঁর জায়গা পাওয়া বেশ কঠিন। দলে থাকার একমাত্র উপায় হল যদি দুই স্পিনার ও দুই পেসার নিয়ে কোহলি মাঠে নামেন। কিন্তু ঘরের মাঠে তিন স্পিনার খেলানো থেকে কি ভারত অধিনায়ক সরে আসবেন? এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। 



সামনেই আবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। সেই টেস্টে সিরিজের দলে থাকলেও, শ্রেয়স কি প্রথম একাদশে থাকবেন? কারণ বিদেশে সাধারণত কোহলি চার পেসার ও এক স্পিনার কম্বিনেশনে মাঠে নামেন। উইকেটকিপার হিসেবে খেলবেন ঋষভ পন্থ। রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মধ্যে যে কোনও একজন স্পিনার হিসেবে খেলবেন। এক থেকে পাঁচ নম্বর চেনা মুখের মধ্যেই ঘোরাফেরা করবে। তাহলে শ্রেয়সের ভবিষ্যত কি? 


আরও পড়ুন: Shreyas Iyer: অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি শ্রেয়সের! তালিকায় রয়েছেন আর কোন কোন ভারতীয়?


জবাবে জি ২৪ ঘন্টাকে টেলিফোনে আমরে বলছেন, "গোটা দেশ ও শ্রেয়সের পরিবার আজকের দিনে আনন্দে ভেসে যাচ্ছে। সেটাই স্বাভাবিক। তবে এমন শতরানের পরেও আমি ওর ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছি। শতরানের পর ওকে দল থেকে বাদ দেওয়া উচিত নয়। তবে ঘরে-বাইরে টেস্ট জয়ের জন্য সঠিক টিম কম্বিনেশনও জরুরি। তাই শ্রেয়সকে কোন জায়গায় খেলানো হয় সেটা দেখতে চাই। রাহুল দ্রাবিড়ের উপর ভরসা আছে। আশাকরি ও ছেলেটার প্রতি অবিচার হতে দেবে না।" 


ছোটবেলার কোচের মতোই শ্রেয়সের ক্রিকেট জীবনটা উত্থান-পতনে ভরা। কোচের ছিল মন্দ কপাল। রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন। আর শ্রেয়সের ক্ষেত্রে একটা কাঁধের চোট যেন 'ভিলেন' হয়ে গেল। ফলে হাতের কাছে অনেক কিছু থাকলেও ২৬ বছরের ডানহাতি ব্যাটার অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছেন। সেটা মনে করিয়ে দিয়ে আমরে জুড়ে দিলেন, "নিজের প্রতি বঞ্চনার কথা আর আলোচনা করে লাভ নেই। ২৯-৩০ বছর আগে আমার সঙ্গে যে রাজনীতি হয়েছে সেটা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সেই সময় টেস্টে ৪২.৫০ গড় নিয়েও মাত্র ১১টি টেস্ট খেলেছিলাম। দুর্ভাগ্য ছাড়া এটাকে আর কি বলতে পারেন। তবে শ্রেয়সকে যেন এমন দিন দেখতে না হয়। এটাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা। বাকিটা সময় বলবে।" 


 



চলতি বছরের মার্চে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচ খেলার সময় কাঁধে চোট পেলেন। সেই চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে একটা সময় ব্যাট তুলতে পর্যন্ত পারতেন না। চার মাস আগেও তিনি ভাবতে পারতেন না যে এমন রাজকীয় প্রত্যাবর্তন হবে। টানা দুই মাস ব্যাটের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। স্বভাবতই মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন। সেই সময় শ্রেয়সকে আগলে রেখেছিলেন আমরে। 


কীভাবে সামলেছিলেন ছাত্রকে? আমরে একনাগাড়ে বললেন, "কাঁধে অস্ত্রোপচারের পর যখন ও একটু সুস্থ হতে লাগল, তখন সপ্তাহে একদিন মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য ওকে অনুশীলন করাতাম। তবে ব্যাট ধরতে দিতাম না। সেই জন্য আমার উপর রেগেও যেত। তবে আমি হাল ছাড়িনি। শ্রেয়সকে ওর সেরা ইনিংসের ভিডিও দেখিয়ে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করতাম। এরপর যখন আরও সুস্থ হতে শুরু করল, তখন অনুশীলনের মেয়াদ বাড়ালাম। বাকিটা তো সবাই দেখছে। আইপিএল-এর দ্বিতীয় পর্বে ফিরে আসার পর ওকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।" 



কানপুরের এই গ্রীনপার্ক স্টেডিয়াম শ্রেয়সের জীবনে আরও একটা বিশেষ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের শুরুটা ওঁর মোটেও ভাল হয়নি। প্রথম দুটি ম্যাচে ব্যর্থতা দিয়ে শুরু হয়েছিল। প্রথম ৭ বছর আগে এই মাঠেই উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন শ্রেয়স। সেই ম্যাচে মাত্র ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল মুম্বই। সেখান থেকে ৭৫ রান করে দলকে প্রথম ইনিংসের লিড এনে দিয়েছিলেন শ্রেয়স। সেই ইনিংস শুধু শ্রেয়সের কেরিয়ার বাঁচায়নি। মুম্বই দলের তৎকালীন কোচ আমরের চাকরিও বেঁচে যায়। 


আরও পড়ুন: Kapil Dev: কলকাতায় কপিল, আলোচনায় Shreyas Iyer থেকে SCEB Vs ATKMB ডার্বি


সাত বছর আগের সেই ম্যাচের স্মৃতি আমরের মনে এখনও টাটকা। তিনি বলছিলেন, "শ্রেয়সের বয়স যখন ১১ তখন ও আমার কাছে এসেছিল। তাই ওর যোগ্যতা সম্পর্কে আমার কোনও সন্দেহ ছিল না। সেই জন্য দুটি ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পরেও ওকে উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে সুযোগ দিয়েছিলাম। শ্রেয়স তখনও আমার বিশ্বাসের দাম দিয়েছিল। এখনও আমাদের মুখে হাসি ফোটাল। 


ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কাঁধে চোট পাওয়ার পর বিলেতে অস্ত্রোপচার করা হয় শ্রেয়সের। ল্যাঙ্কশায়ারের হয়ে রয়্যাল লন্ডন কাপে খেলার কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি। আইপিএল-এ তাঁর বদলে দিল্লির অধিনায়কত্ব করেন ঋষভ পন্থ। 


গত বুধবার দ্রাবিড়ের কাছ থেকে টেস্ট অভিষেকের খবর পেয়েছিলেন। এরপরেই ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন শ্রেয়স। সেখানে দেখা যাচ্ছে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছেন তিনি। সেখান থেকে ছবিটি পাল্টে যাচ্ছে তাঁর টেস্ট জার্সিতে। এ ভাবেই যেন পাল্টে গেল তাঁর ভাগ্য। কাঁধের চোটে একাধিক ম্যাচ খেলতে না পারা শ্রেয়সই এখন কানপুর টেস্টের মূল আলোচনার বিষয়। তৈরি করলেন নতুন ইতিহাস। কিন্তু একইসঙ্গে লাল বলের ক্রিকেটে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কাও জন্ম নিল। যেটা মোটেও কাম্য ছিল না। 


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)