INDvsWI: ইডেন নামক শ্মশানে অধরা Rohit, Virat ‘শো’, বুধের অভিষেকে রবি উদয়
দাপট বজায় রাখল টিম ইন্ডিয়া।
সব্যসাচী বাগচী: জেতার কথাই ছিল। সেটাই হল। একদিনের পর এ বার টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ভারতের জয়জয়কার। তাই তো ৬ উইকেটে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টিম ইন্ডিয়া।
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৯.৪৫ মিনিট। ‘রো-হিট’ শো-র আশা জাগিয়েও সাজঘরে ফিরে যাচ্ছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ঠিক সেই সময় মঞ্চে প্রবেশ করলেন ছন্দ ও তাজ হারানো বিরাট কোহলি। ভাবা গিয়েছিল পয়া ইডেন থেকে ১৯ বলে ৪০ করে ফিরে যাওয়ার জন্য ‘হিট ম্যান’-এর জন্য সবাই আর্তনাদ করবে। সেটাও শোনা গেল। তবে সমবেত কণ্ঠে আরও জরালো হয়ে ভেসে উঠল, ‘বিরাট উই ওয়ান্টস বিগ রান’। কিন্তু কোথায় কি! ১৩ বলে ১৭ করে লং অফে ধরা দিলেন প্রাক্তন অধিনায়ক।
ক্লাব হাউসের আপার টিয়ারে এ দিন বিকেল থেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন গুটি কয়েক দর্শক (পড়ুন সিএবি-র সদস্যদের একটা অংশ) ও দলের দ্বাদশ ব্যাক্তি সুধীর গৌতম। খেলার শুরু থেকেই ওরা বাইরে থেকে চাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। যতটুকু করা যায় আর কি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সব ফরম্যাটে ভরাডুবির পর নতুন নেতার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে চায় ভারতীয় দল। সেই তাগিদ প্রতি ম্যাচেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দুর্বল ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে টস ভাগ্যও ভারতের দিকে গেল। সতীর্থ বিরাটের মতো রোহিতের টস ভাগ্য ‘হতাশাজনক’ নয়। এ দিন তিনি টসে জিতলেন। এবং শিশির নামক বিপক্ষকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার জন্য বেছে নিলেন ফিল্ডিং।
আরও পড়ুন: IPL 2022: ১৫ কোটি ২৫ লাখের অঙ্ক নয়, জাতীয় দল নিয়েই ভাবছেন Ishan Kishan
আরও পড়ুন: IPL 2022: প্রত্যাশামতোই KKR-এর নতুন নেতা Shreyas Iyer
ব্যস আর কি! এই নখদন্তহীন ক্যারিবিয়ানদের ব্যাটিং যে ফের ‘ফ্লপ’ হবে সেটা আগে থেকেই জানা ছিল। সেটাই দেখা গেল। বুধবারের ইডেনে এই ফরম্যাটে অভিষেক ঘটিয়েই নজর কাড়লেন রবি বিষ্ণোই। স্কোরবোর্ডে তাঁর নামের পাশে লেখা ১৭ রানে ২ উইকেট। অবশ্য শুধু স্কোরবোর্ড দেখে অনিল কুম্বলের ছাত্রকে বিচার করা উচিত নয়। যে ভাবে একদিকে চাপ বজায় রাখলেন এই তরুণ লেগ স্পিনার, সেটা অনেক দিন মনে থাকবে। ব্যতিক্রমী রান আপ নিয়ে গুগলির সঙ্গে বেশ জোরে ফ্লিপার। সেখানেই কুপোকাত বিপক্ষ। সঙ্গে নজর কাড়লেন হর্ষল প্যাটেল। নিলেন ৩৭ রানে ২ উইকেট। ফলে ৭ উইকেটে ১৫৭ রানে থেমে গেল এই মাঠে বিশ্বকাপ জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নিকোলাস পুরান ৬১ রান করলেও ক্যারিবিয়ানরা লড়াই করতে পারল না। এর জন্য দায়ী অবশ্য দলের সবচেয়ে বড় হিটার ও অধিনায়ক কায়রন পোলার্ড। যিনি জ্বলে উঠলে বিপক্ষের বোলাররা ভয়ে কুঁকড়ে যায় সেই পোলার্ড গিয়ে নামলেন সাত নম্বরে! তাঁদের দলের তরফ থেকে এই হারিকিরি নিয়ে মন্তব্য করা হয়নি। তবে শোনা যাচ্ছে যুজবেন্দ্র চাহালের ভয়েই নাকি ক্রিজে যেতে চাইছিলেন না পোলার্ড। লেগ স্পিনারদের প্রতি পোলার্ডের ব্যাথা অনেক পুরনো। চলতি সফরের প্রথম একদিনের ম্যাচে এই চাহালের প্রথম বলেই লেগ বিফোর হয়েছিলেন। চাহাল যে পোলার্ডের ‘যম’ সেটা এ দিন ফের বোঝা গেল। কারণ তিনি ব্যাট হাতে ক্রিজে এগিয়ে আসতেই চাহালের হাতে বল তুলে দিলেন রোহিত। ফলে ১৯ বলে ২৪ রানে অপরাজিত রইলেও পোলার্ডের সেই ঝড় দেখা গেল না।
সহজ টার্গেট চেজ করার জন্য বেশ মেজাজে শুরুটা করেছিলেন রোহিত। সঙ্গী ছিলেন ইশান কিষান। গুটি কয়েক দর্শক নিজেদের আসনে নড়েচড়ে বসার আগেই ৭.৩ বলে উঠে গেল ৬৪ রান। মনে করা হচ্ছিল ইডেনের ‘দ্বিতীয় বরপুত্র’ ফের একবার বাইশ গজে শাসন করবেন। কিন্তু রোহিতের সেই সাধ পূর্ণ হল না। তিনি ফিরলেন। এই মাঠেই ২০১৯ সালে গোলাপি বলের টেস্টে শেষবার শতরান করেছিলেন বিরাট। তিনি রোহিতের মঞ্চকে নিজের নামে লিখিয়ে নিতে পারলেন না। ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে ইনসাইড আউট মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়লেন পোলার্ডের হাতে। ইশান ফিরলেন ৩৫ রানে। ‘প্রতিভাবান’ ঋষভ পন্থ ফের একবার খারাপ ব্যাটিংয়ের নমুনা দেখালেন।
যদিও এতে জয় পেতে সমস্যা হয়নি। পঞ্চম উইকেটে ২৬ বলে ৪৮ রানের অবিছিন্ন জুটিতে বাকি কাজটা অনায়াসে সেরে ফেললেন সূর্য কুমার যাদব ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার। সূর্য ১৮ বলে ৩৪ ও ভেঙ্কটেশ ১৩ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
তবে সিরিজে এগিয়ে গেলেও কাঁটার মতো বিধে রইল কোহলির ‘বিরাট’ অফ ফর্ম। কবে এই নাটকের সমাপ্তি ঘটবে কেউ জানে না।