Rinku Singh, KKR: স্টেডিয়াম, অ্যাকাডেমি থেকে হস্টেল! আলিগড়ে আগামীর `রিঙ্কু` গড়ার কাজে নেমেছেন নাইট তারকা
রিঙ্কুর গল্পের শুরুটা কিন্তু একেবারেই মসৃণ ছিল না। উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে জন্ম হওয়ার পর থেকেই রিঙ্কুকে দারিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান।
সব্যসাচী বাগচী
গত মরসুমের কথা। নিলাম টেবল থেকে রিঙ্কু সিংকে (Rinku Singh) দলে তুলে নিতেই, সোশ্যাল মিডিয়াতে কটাক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কেন আবার রিঙ্কুর দিকে ঝুঁকল কলকাতা নাইট রাইডার্স (kolkata Knight Riders)! সোশ্যাল মিডিয়াতে চলছিল নাইট সিইও ভেঙ্কি মাইসোরের (Venky Mysore) মুণ্ডুপাত। তবে গত বছর লখনউ সুপার জায়ান্টের (Lucknow Super Giants) বিরুদ্ধে ১৫ বলে ৪০ রান করার পরেও, তাঁর দল মাত্র ২ রানে হেরে গিয়ছিল। তবে সেই লড়াইয়ে হারলেও, রিঙ্কু কিন্তু মনের মধ্যে খিদে তৈরি করে নিয়েছিলেন। আর তাই তো এবারের লড়াইয়ে তিনি বিজয়ী। গুজরাত টাইটান্সের (Gujarat Titans) বিরুদ্ধে ২১ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের ইনিংস তাঁকে রাতারাতি নায়কের আসনে বসিয়ে দিয়েছে।
এহেন নাইট তারকা নিজের ক্রিকেটীয় প্রতিভার বিকাশের সঙ্গে এবার তাঁর জন্মভূমি আলিগড়ে (Aligarh) ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (Rinku Singh Crikcet Stadium and Academy) গড়েছেন। স্থানীয় ছেলেরা যাতে খাওয়া-দাওয়া করে নিজেদের সঠিক ভাবে মেলে ধরতে পারে, সেইজন্য তৈরি করা হয়েছে হস্টেল। খোদ শাহরুখ খান (Shah Rukh Khan) তাঁকে 'মেরা বেটা' বলে ডাকেন, সেই রিঙ্কুই এবার আগামীর অগণিত 'রিঙ্কু' গড়ার কাজে নেমে পড়েছেন।
রিঙ্কুর ছোটবেলার কোচ ও আলিগড় স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম ক্রিকেট প্রশিক্ষক ফাসাহাত আলি বলছিলেন, "রিঙ্কু একেবারে ক্রিকেট পাগল। ক্রিকেট ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। ক্রিকেটের জন্যই ওর যাবতীয় নাম হয়েছে। আর তাই কয়েক বছর আগে থেকেই আলিগড়ে রিঙ্কু অ্যাকাডেমী গড়ে তুলেছে।" রাজ্য দল উত্তর প্রদেশ থেকে আইপিএল জগতে নিজের আলাদা পরচিতি গড়ে তুলেছেন। তবে শিকড়কে ভুলে যাননি। আলিগড় স্পোর্টস অ্যাকাডেমির দুস্থ খুদে ক্রিকেটারদের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন কাঁধে। নিঃশব্দে জুগিয়ে যাচ্ছেন, তাদের ব্যাট-বলের জোগান। অ্যাকাডেমিতে আগে ছিল না কোনও আবাসিকদের হস্টেল। অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেটাও তৈরি করেছেন। যাতে উর্দু সাহিত্যের জন্য পরিচিত শহরটা ক্রিকেটের জন্যও দুনিয়ায় পরিচিতি পায়।
আরও পড়ুন: WATCH | Shreyas Iyer: রিঙ্কুকে ভিডিয়ো কল, আবেগে উচ্ছ্বসিত শ্রেয়স! হৃদয় ছুঁলেন মাত্র তিন শব্দেই
রিঙ্কুর বাবা খানচন্দ সিং স্থানীয় এলাকায় এলপিজি গ্যাস সরবরাহ করতেন। পাঁচ-ভাই বোনের সংসারে অভাব-অনটনের সঙ্গে মিতালি গড়েই জীবনের চলার পথ গড়তে হয়েছে বাঁ-হাতি এই ক্রিকেটারকে। এগুলো সব ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। এটুকুতে যে রিঙ্কুর ব্যাপ্তিকে ধরা মুশকিল। এর বাইরে একটা অন্য রিঙ্কুও রয়েছে। রিঙ্কুর বাবা যে কোম্পানির গ্যাস সরবরাহ করতেন, সেই গ্যাস এজেন্সির সামনের লনে ব্যাট হাতে ক্রিকেট অনুশীলনে ডুবে থাকতেন রিঙ্কু। তখন ওঁর বয়স পাঁচ কি ছয়! বাইক নিয়ে যাওয়ার সময় সেই দৃশ্য হামেশাই চোখে পড়ত ফাসাহতের। আর চোখে পড়েছিল দু’জনের-অর্জন সিং ফকিরা ও মাসুদ আমিনির। জহুরি জহর চেনে, তাঁরাও রিঙ্কুকে চিনেছিলেন। নিয়ে এসেছিলেন আলিগড় স্পোর্টস অ্যাকাডেমিতে। ক্রিকেট অভিযাত্রায় সেই প্রথম দীক্ষা লাভ বাঁ-হাতি ব্যাটারের। তারপর অনূর্ধ্ব-১৯, রনজি হয়ে আজকের আইপিএল। রিঙ্কু নিজের ছন্দে এগিয়েই চলেছেন। অর্থাভাব যে পরিবারে নিত্য সঙ্গী, সেখানেও রিঙ্কু তাঁর স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। অবশ্য সেইজন্য রিঙ্কু তাঁর পরিবার ও ফাসাহত, অর্জুন সিং কিংবা মাসুদ আমিনিদের মতো কুশীলবদের প্রতি সবসময় কৃতজ্ঞতা জানিয়ে থাকেন।
রিঙ্কুর বড় দাদা অটো চালাতেন, আর মেজ দাদা পড়াতেন কোচিং সেন্টারে। এতে কিছুটা হলেও পরিবারের হাতে টাকাপয়সা আসত। ক্লাস নাইনে ফেল করার পর রিঙ্কু আর খুব বেশি পড়াশোনা করেননি। সেইজন্য ভালো চাকরিও জোটেনি। একটা সময় তিনি দাদার কাছে চাকরিতে ঢোকানোর কথা বলেছিলেন। তাঁর দাদা তাঁকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে তাঁর জন্য ঝাড়ু দেওয়ার কাজ বরাদ্দ ছিল।
ততদিনে অবশ্য রিঙ্কু জেনে গিয়েছেন যে তাঁর জীবন যদি কেউ বদলাতে পারে, সেটা একমাত্র ক্রিকেট। একটা সময় তিনি ঠিক করে ফেলেন যে ক্রিকেটের উপরই পুরোপুরি নিজের নজর রাখবেন। দিল্লিতে একটি টুর্নামেন্ট চলাকালীন ম্যান অফ দ্য সিরিজের পুরস্কার হিসেবে তাঁকে একটি মোটরবাইক উপহার দেওয়া হয়। সেই বাইকটা তিনি সিলিন্ডার ডেলিভারির কাজে ব্যবহার করেছিলেন। আর সেই ক্রিকেটই রিঙ্কুর জীবন বদলে দিল। এতটাই বদলে গিয়েছে তাঁর জীবন যে, নাইট তারকা রিঙ্কু এখন ভবিষ্যতের 'রিঙ্কু' গড়ার কাজে নেমেছেন।