গুজরাত টাইটান্স: ২১৪/৪ (ঋদ্বিমান-৫৪, সুদর্শন-৯৬, পাথিরানা-৪৪/২)
চেন্নাই সুপার কিংস: ১৭১/৫ (কনওয়ে-৪৭)
চেন্নাই সুপার কিংস ৫ উইকেটে জয়ী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কথায় বলে কারও পৌষমাস তো কারও সর্বনাশ। একদিকে আকাশের মুখ ভার দেখে যখন মহেন্দ্র সিং ধোনির ভক্তদের মুখের গুমোট ভাবও প্রকোট হচ্ছে, তখন বিদ্যুৎ ঝলকের মতো গুজরাত টাইটান্সের সমর্থকদের মুখে খেলে যাচ্ছে হাসি। কারণ এহেন পরিস্থিতি থাকলে যে ট্রফি আসবে হার্দিক পান্ডিয়ার শিবিরেই, তা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তখনও কে জানতে মহাকাব্যের তখনও অনেকগুলো পাতা বাকি! বাকি ছিল রুদ্ধশ্বাস ক্ল্যাইম্যাক্সের দৃশ্য। ধোনির 'গোল্ডেন ডাক' করার রাতে নায়ক হলেন রবীন্দ্র জাদেজা। হলুদ জার্সিতে ভরে ওঠা মোতেরা স্টেডিয়ামের মন ভাল দিল চেন্নাই সুপার কিংস। আর সেই সঙ্গে পঞ্চমবার ধোনির হাতে উঠল আইপিএল ট্রফি। 


রবিবারের মতো রিজার্ভ ডে-তেও বৃষ্টি এমন বাধা হয়ে দাঁড়াবে কে জানত! চেন্নাই ব্যাটিংয়ের বয়স তখন ০.৩ ওভারে মাত্র ৪ রান। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের আকাশ জুড়ে নামল বৃষ্টি। ব্যস খেলা বন্ধ। এরপর বার দুয়েক অনফিল্ড আম্পায়াররা মাঠ ও পিচ পরিদর্শন করার পর মিলল সবুজ সংকেত। খেলা শুরু হয়েছিল ২৯ মে। তবে চেন্নাই যখন ফের ব্যাট করতে নামল, তখন ক্যালেন্ডার অনুসারে ৩০ মে বেজে গিয়েছে। ঘড়ির কাঁটা বলছে রাত ১২:১০ মিনিট। একাধিকবার পরিদর্শনের পর জানানো হয়, চেন্নাইকে ১৫ ওভারে ১৭১ রান করতে হবে। মাঠে ভিজে থাকার পর এত রান চেজ করা কঠিন। তবে ব্যাপারটা একেবারে হাতের বাইরে নয়। সেটাই বুঝিয়ে দিলেন দুই ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও ডেভন কনওয়ে। মহম্মদ শামি-রাশিদ খানের মতো বোলারদের মহড়া নিয়ে উঠে গেল মাত্র ৪ ওভারে ৫২ রান! ভাবা গিয়েছিল হাতে বড় রান থাকার জন্য, গুজরাতই এগিয়ে থাকবে। কিন্তু দুই সিএসকে ওপেনার আগ্রাসী মেজাজে সব হিসেব বদলে দিচ্ছিলেন। 



কিন্তু তাই বলে আফগানিস্তানের তরুণ বাঁহাতি স্পিনার নুর আহমেদ হাল ছেড়ে দেননি। সপ্তম ওভারে তাঁর হাতে ফের বল তুলে দেন হার্দিক। ব্যস, নিজের দ্বিতীয় ওভারেই দলকে এনে দিলেন জোড়া সাফল্য। সেই ওভারের তৃতীয় বলে অহেতুক ঝুঁকি নিতে গিয়ে রাশিদের হাতে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দিলেন রুতুরাজ। ১৬ বলে ২৬ রান করে রুতুরাজ ফিরতেই, ৭৪ রানে ১ উইকেট হারায় সিএসকে। তবে নাটক আরও বাকি ছিল। এবার সতীর্থ রুতুরাজের মতোই ভুল করলেন কনওয়ে। এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে বলকে গ্যালারিতে বলকে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারলেন না। শট মিস টাইম হতেই তাঁর ক্যাচ ধরলেন মোহিত শর্মা। ফলে একটা সময় দাপট দেখানো চেন্নাই, মাত্র ছয় বলের ব্যবধানে ৭৮ রানে ২ উইকেট হারাতেই ম্যাচে ফিরে এসেছিল গুজরাত। 



তবে একই ওভারে জোড়া সাফল্য পেলেও, সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি গুজরাত। এর বড় কারণ দুই বিদেশি রাশিদ ও জশুয়া লিটল একেবারেই ছন্দে ছিলেন না। সেটা ক্রিজে এসেই বুঝে গিয়েছিলেন বহু যুদ্ধের নায়ক রাহানে। ধোনির দলে এসে এই ফরম্যাটে অভিজ্ঞ মুম্বইকর নিজেকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করেছেন। এমনিতেই বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে খেলতে যাবেন বলে, তাঁর বুক চওড়া হয়ে আছে। এরমধ্যে এবারের ক্রোড়পতি লিগে বেশ ভালো ফর্মে আছেন। সেটা এবার বড় ম্যাচেও দেখা গেল। চাপে চুপসে না গিয়ে পালটা মার দিতে শুরু করে দিলেন ভারতীয় দলে সাদা বলের ক্রিকেটে ব্রাত্য রাহানে। তাঁর দাপটে সিএসকে আবার ম্যাচে ফিরে এসেছে, ঠিক এমন সময় আবার পট পরিবর্তন। গত কয়েক ম্যাচের মতো এবারও হাতে বল নিয়েই ম্যাজিক দেখালেন মোহিত। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ১০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। আর এবার প্রথম ওভার করতে এসেই ফেরালেন ভয়ংকর হয়ে ওঠা রাহানেকে। ডিপ পয়েন্টে রাহানের শট বিজয় শঙ্কর লুফে নিতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন হার্দিক। কারণ আউট হওয়ার আগে মাত্র ১৩ বলে ২৭ রান করে ফেলেছিলেন রাহানে। সঙ্গে ছিল দুটি চার ও দুটি ছক্কা। 


কিন্তু তাতে কি! ১১৭ রানে ৩ উইকেট চলে গেলেও, ক্রিজে নেমেই ঝড় তুলতে শুরু করে দিলেন শেষ ম্যাচ খেলা অম্বাতি রায়ুডু। সঙ্গে পেয়ে গিয়েছিলেন শিবম দুবে-কে। এই বাঁহাতি তো আগে থেকেই মারমুখী মেজাজে ছিলেন। তবে এটা যে এক তরফা ফাইনাল নয়, সেটা চাপে থাকলেও ফের বোঝালেন মোহিত। মারমুখী মেজাজে থাকা রায়ুডুকে ফেরানোর পরের বলেই আবার সিএসকে-কে ধাক্কা দিলেন তিনি। ক্রিজে এসেই বড় শট মারতে গিয়েছিলেন ধোনি। কিন্তু পারলেন না। কভারে থাকা ডেভিড মিলার লোপ্পা ক্যাচ নিতেই 'গোল্ডেন ডাক' করে ফিরলেন ধোনি। সেই সময় স্ত্রী সাক্ষী, কন্যা জিভা থেকে সিএসকে-এর সব সমর্থক একেবারে চুপ করে যান। যদিও মোহিতের সেলিব্রেশন ছিল দেখার মতো। কারণ ১৩ ওভারে তাঁর চতুর্থ ও পঞ্চম বলই যে খেলা ঘুরিয়ে গিয়েছিল! এমনটা ভাবলে একেবারে ভুল ভাবছেন। কারণ শেষ ওভারে সব হিসেব বদলে দিলেন জাদেজা। 



ফাইনালে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ঘরের শত্রু হবেন একজন তামিলনাড়ুর ব্যাটার! অনেকেই হয়তো ভাবতেই পারেননি। সবাই ব্যস্ত ছিলেন শুভমনের ব্যাটিং ঝড় দেখার অপেক্ষায়। কিন্তু 'ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার' সাঁই সুদর্শনের 'চক্র' রক্তাক্ত করল চেন্নাইকে। কথায় বলে সকাল দেখে নাকি বোঝা যায় গোটা দিনটা কেমন যাবে। ঋদ্ধির পর সাঁই-এর মারকুটে ৯৬ রানের সৌজন্যে ৪ উইকেটে ২১৪ রান তুলে দিয়েছিল গুজরাত। বৃষ্টির আশঙ্কা ছিল। আর তাই টসে জিতেই ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ধোনি। তবে চেন্নাইয়ের কাছে আক্ষেপের ব্যাপার হল, গুজরাত ব্যাটিং করার সময় পুরো ২০ ওভার জুড়ে কোথাও বৃষ্টির নাম-গন্ধ পর্যন্ত ছিল না। এরমধ্যে ছিল দীপক চাহারের ক্যাচ ফস্কে দেওয়ার বহর। 


শুভমন তখন সবেমাত্র চার রানে ব্যাটিং করছেন। ১.৪ ওভারে তুষার দেশপান্ডের বলে স্কয়ার লেগে থাকা দীপক সহজ ক্যাচ ফেলে দেন। এরপর ফের একই দৃশ্য গেল ৪.১ ওভারে। এবার নিজের বলেই ঋদ্ধির ক্যাচ ফেলে দিলেন দীপক। আর সেই সুযোগে জেট গতিতে রান তুলতে শুরু করে দেন দুই ওপেনার। সবাই যখন শুভমনকে নিয়ে ব্যস্ত, তখন চেন্নাইয়ের বোলারদের বুঝে নিতে শুরু করেন পাপালি। বঙ্গ উইকেটকিপার রক্ষক তুষার, দীপকদের বেশ কয়েকটি বাউন্ডারি মারলেন। কারণ ফর্মে থাকা পঞ্জাব তনয়কে যতটা সম্ভব চাপ মুক্ত রাখা ছিল তার কাজ। অন্যদিকে ঋদ্ধিকে মারমুখী মেজাজে দেখে, শুভমনও কিছুক্ষণ পর থেকে নিজেও আগ্রাসী মেজাজে রান তুলতে শুরু করে দিলেন। 



আরও পড়ুন: Mahendra Singh Dhoni, IPL Final 2023: লাগল মাত্র ০.০৮ সেকেন্ড! অবিশ্বাস্য স্টাম্পিংয়ে শুভমনকে ফেরালেন ধোনি, দেখুন ভিডিয়ো


আরও পড়ুন: Shubman Gill: আইপিএল জয়ের সঙ্গে আরও কোন তিনটি কাজ করতে চান তারকা ওপেনার?


পাওয়ার প্লেতে গুজরাতের রান ছিল ৬২/০। তবে দলের রান যখন ৬৭, তখন রবীন্দ্র জাদেজার বলে ধোনির হাতে স্টাম্প আউট হলেন শুভমন। ২০ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে মারলেন সাতটি বাউন্ডারি। ফাইনালে তাকে ঝড় তুলতে দিলেন না ধোনি। চোখের নিমেষে ০.০৮ সেকেন্ডে ভেঙে দিলেন স্টাম্প। শুভমন নিজের ব্যালান্স ফিরে পাওয়ার আগেই যা হওয়ার হয়ে গেল। এমনকি জাদেজা পর্যন্ত বুঝতে পারলেন না। ধোনি বুঝিয়ে দিতে পারলেন তার বয়স হয়েছে ঠিক কথা, কিন্তু রিফ্লেক্স আগের মতই! 


প্রতিযোগিতার সেরা ব্যাটারকে যেভাবে আউট করলেন তাতে তাঁর ফিটনেস কোন পর্যায়ের সেটা ফের বোঝা গেল। এরইমধ্যে ঋদ্ধি  নিজের অর্ধ শতরান পূর্ণ করলেন। আইপিএল ফাইনালে এর আগে ২০১৪ সালে শতরান করেছিলেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ৫৫ বলে ১১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন পাপালি। এবার ফিরলেন ৪৯ বলে ৫৪ রান করে। মারলেন পাঁচটি চার ও ১টি ছক্কা। 



এরপর বাকিটা সময় বাইশ গজ জুড়ে শুধুই আগুন জ্বালালেন সাঁই। তিন নম্বরে নেমে শুরু  থেকেই মারতে থাকেন এই বাঁহাতি। প্রথমে ঋদ্ধির সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৪ ও এরপর হার্দিকের সঙ্গে আরও মারমুখী মেজাজে তৃতীয় উইকেটে সাঁই যোগ করেন ৮১ রান। তবে আফসোস একটাই, এমন দুরন্ত ইনিংস খেললেও মাত্র চার রানের জন্য টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম শতরান হাতছাড়া করেন এই তরুণ। ফলে তাঁকে  ৪৭ বলে ৯৬ রানে থামতে হয়। আউট হয়ে ফেরার সময় মেরেছিলেন ৮টি চার ও ২টি ছক্কা। হার্দিক ১২ বলে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। ফলে চেন্নাইকে যে কঠিন পরীক্ষা দিতে হত, সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। 



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)