KKR vs RCB, IPL 2023: `পাঠান`-এর সামনে `লর্ড` শার্দুলের ব্যাটিং ঝড়, ১৪৩৮ পর ইডেনে নেমেই `বিরাট` বধ করল কেকেআর
দুই প্রান্ত থেকে দুই নাইট বোলারের স্পিন জাদুর মায়াজালে জড়িয়ে মাত্র ১২৩ রানে অল আউট হয়ে গেল আরসিবি। এমন দাপট দেখানোর জন্য ঘরের মাঠে ৮১ রানে জয় দিয়েই অভিযান শুরু করল কেকেআর।
সব্যসাচী বাগচী
সব সময় এভাবে ফিরে আসা যায় না। তবে জেতার অদম্য ইচ্ছা ও চোখে চোখ রেখে লড়াই করার তাগিদ থাকলে এমন ম্যাচ অনায়াসে জেতা যায়। সেটাই ১৪৩৮ পর ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) নেমে দেখিয়ে দিল কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders)। তাও আবার দলের অন্যতম মালিক শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) সামনে। একটা সময় মনে হচ্ছিল নাইটদের জোড়া ম্যাচ হার শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু শার্দুল ঠাকুর (Sahrdul Thakur) ও রিঙ্কু সিং (Rinku Singh) ম্যাচটা যে এভাবে ঘুরিয়ে দেবেন, সেটা অতি বড় নাইট সমর্থকও ভাবতে পারেননি। ভাবতে পারেননি এই প্যাঁচপ্যাঁচে গরমেও ইডেনের ৬০ হাজারি গ্যালারি। যারা শুধু বিখ্যাত 'মেক্সিকান ওয়েভ' তুলেই শান্ত থাকলেন না। বেগুনি পতাকার সঙ্গে 'কেকেআর...'কেকেআর' স্লোগান তুলে বিপক্ষের কান ঝালাপালা করে দিলেন। শার্দুল ও রিঙ্কুর মারকাটারি ব্যাটিং যেখানে শেষ হল, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল সুনীল নারাইন (১৬/২) ও বরুণ চক্রবর্তীর (১৫/৪) স্পিন ম্যাজিক। আগেই জোড়া ধাক্কায় চাপে পড়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (Royal Chellengers Bangalore)। দুই প্রান্ত থেকে দুই নাইট বোলারের স্পিন জাদুর মায়াজালে জড়িয়ে মাত্র ১২৩ রানে অল আউট হয়ে গেল আরসিবি (RCB)। এমন দাপট দেখানোর জন্য ঘরের মাঠে ৮১ রানে জয় দিয়েই অভিযান শুরু করল কেকেআর (KKR)।
২০৫ রান চেজ করতে হলে আগ্রাসী মেজাজে শুরু করা উচিত। সেটাই করেছিলেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli) ও ফ্যাফ ডু প্লেসিস (Faf du Plessis)। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু আরসিবি রান যখন ৪৪, তখন ফিরে যান বিরাট। নারাইন (Sunil Narine) আইপিএল-এর ইতিহাসে এই নিয়ে চারবার তাঁর সেরা ব্যাটারের উইকেট নিলেন। ইডেনে বিরাট পতন হতেই আরসিবি-র পতন শুরু হয়ে গেল। নাইটদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ 'মিস্ট্রি স্পিনার' শুরুটা করেছিলেন। তাঁর লেগাসি বহন করে বিপক্ষের ব্যাটিংকে শেষ করে দিলেন আর এক 'মিস্ট্রি স্পিনার' বরুণ (Varun Chakravarthy)। তাঁর জাদুতে ডু প্লেসিস-গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের আউট হওয়ার ধরন দেখে মনে হল, এই কয়েক দিন আগে ওঁরা স্পিন খেলতে শুরু করেছেন!
দুই 'দাদা'-কে বাইশ গজে দাদাগিরি করতে দেখে চেগে গেলেন অখ্যাত সুয়াস শর্মা (৩০/৩)। ১৯ বছরের লেগ ব্রেক বোলারকে 'ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার' হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন হেড কোচ চন্দ্রকান্ত পন্ডিত। সেই সুয়াসও দাপট দেখালেন। টসের সময় অধিনায়ক নীতীশ রানা এই ছেলেটার নাম পর্যন্ত বলতে পারেছিলেন না। সেই অনামী যুবকই বিপক্ষের ব্যাটারদের আউট করে হাত-পা নেড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, ম্যায় হু না'।
আরও পড়ুন: Virat Kohli: আইপিএল-এর ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী বিরাটের আয় কত? অংক জানলে চোখ কপালে উঠবে!R vs RCB, IPL 2023: ইডেনে টস বিতর্ক! রেগে মেজাজ হারালেন নাইট অধিনায়ক নীতীশ
আরও পড়ুন: Virat Kohli vs Rohit Sharma, IPL 2023: ফের বিরাট-রোহিতের ঝামেলা প্রকাশ্যে! কিন্তু কীভাবে?
তবে নাইটদের ব্যাটিং কিন্তু এত সুখের ছিল না। শাহরুখের সামনে তখন নাইটদের অর্ধেক ব্যাটিং ধরাশায়ী। ৮৯ রানে ৫ উইকেট চলে গিয়েছে। কিন্তু এরপর বাইশ গজের যুদ্ধে শার্দুল ঠাকুর ও রিঙ্কু সিং, 'খেলা হবে' স্লোগান তুলে ম্যাচ দলকে ভীষণভাবে ফিরিয়ে আনবেন, সেটা হয়তো বি ব্লকের কর্পোরেট বক্সে থাকা 'পাঠান' পর্যন্ত ভাবতে পারেননি। কিন্তু সেই বহু পুরনো প্রবাদ অনুযায়ী ক্রিকেট যে ঘোর অনিশ্চয়তার খেলা। সেটা মেনেই যেন ইডেনে ব্যাট হাতে কালবৈশাখী ঝড় তুলে দিলেন 'লর্ড' শার্দুল ও তাঁর সঙ্গী রিঙ্কু।
সতীর্থরা তাঁকে মজা করে 'লর্ড' শার্দুল বলে ডাকেন। ২৯ বলে করে দিলেন ৬৮ রান। ২০ বলে অর্ধ শতরান পূর্ণ করলেন। মাঠজুড়ে চার-ছক্কা ফুলঝুরি ছুটিয়ে জস বাটলারের সঙ্গে যুগ্মভাবে চলতি আইপিএলে দ্রুততম অর্ধ শতরানের মালিক হলেন মুম্বইকর। তাঁর ও রিঙ্কুর জন্যই কেকেআরের হাতে ম্যাচের রাশ চলে এসেছিল। দারুণ সঙ্গত করলেন রিঙ্কুও। ৩৩ বলে ৪৬ রান করলেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে দু'জনের দাপটে ৪৭ বলে উঠে গেল ১০৩ রান। ফলে একটা সময় গুটিয়ে যাওয়া কেকেআর ৭ উইকেটে ২০৪ রান তুলে দেয়। এই রানের চাপেই চাপা পড়ে গেল তারকাখচিত আরসিবি। ফলে চলতি আইপিএল অভিযান হার দিয়ে শুরু করলেও, ঘরের মাঠে ফিরতেই নাইটরা নিজেদের ফিরে পেল। তাও আবার 'কিং খান'-এর সামনে।
তবে কেকেআর দাপুটে জয় পেলেও ব্যাটিং বিভাগ নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সেগুলো না ভাবলে কিন্তু ভবিষ্যতে নাইটদের কপালে দুঃখ আছে। কারণ রোজ রোজ তো 'লর্ড' শার্দুল অবতার হিসেবে দলকে রক্ষা করতে আসবেন না। তাই নিরঙ্কুশ জয়ের পরেও চার ব্যাটারকে নিয়ে পোস্টমর্টেম করল জি ২৪ ঘণ্টা।
ভেঙ্কটেশ আইয়ার: মধ্যপ্রদেশ কিংবা কেকেআর, প্রতি ম্যাচেই প্রমাণ করছেন তিনি 'ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার'।
মনদীপ সিং: অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজির জল খেয়েছেন। তবে সফল হননি। পঞ্জাব দলেও তাঁকে রাখা হয় না। তিনি নাইট সংসারেও যে লাগাতার ব্যর্থ হবেন, এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে!
নীতীশ রানা: প্রতিযোগিতার আগে বড় মুখ করে বলেছিলেন, '১০টা ম্যাচ হয়ে গেলে বুঝবেন আমি কেমন অধিনায়ক!' তাঁর দল শেষ পর্যন্ত জিতলেও, নীতীশের ব্যাটিং নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আন্দ্রে রাসেল: তাঁর অবস্থা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতোই। অনেক আগেই ক্যারিবিয়ান সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে। 'দ্রে রাস'-এর ক্ষেত্রেও তাই। না হলে এত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়েও, চাপের মুখে কেউ প্রথম বলেই এমন খারাপ শট খেলার ঝুঁকি নেয়!
(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)