Jhulan Goswami, INDW vs ENGW : ভারতের জার্সি গায়ে জাতীয় সংগীত গাওয়া সেরা প্রাপ্তি, অবসরের আগে আবেগি `চাকদহ এক্সপ্রেস`
Jhulan Goswami, INDW vs ENGW : ঝুলন শেষ বার ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামার আগে আবেগি সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। তাঁর শেষ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল জি ২৪ ঘণ্টা।
সব্যসাচী বাগচী
ভারতীয় ক্রিকেটে একটি যুগের সমাপ্তি হতে চলেছে। বঙ্গ তনয়া ঝুলন গোস্বামীর (Jhulan Goswami) বিদায় নিয়ে আবেগে ভাসছে ভারতীয় ক্রিকেট (Indian Cricket)। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবেন 'চাকদহ এক্সপ্রেস' (Chakdah Express)। তাঁকে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আবেগপ্রবণ বাংলা তথা ভারতীয় ক্রিকেট মহল। মাস কয়েক আগে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন মিতালি রাজ (Mithali Raj)৷ এ বার তাঁরই সতীর্থ ঝুলনও অবসরের পথে ৷ নদিয়ার চাকদহ থেকে শুরু হওয়া লড়াই শেষ হচ্ছে 'ক্রিকেটের মক্কা' লর্ডসে (Lords)। ঝুলিতেও রয়েছে মোট ৩৫২টি উইকেট ৷ মহিলা ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর ক্রিকেটারও হয়েছেন তিনি ৷ ডায়না এডুলজির পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে পদ্ম সম্মানে ভূষিত হয়েছেন ৷ এহেন ঝুলন শেষ বার ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামার আগে আবেগি সাংবাদিক সম্মেলন করলেন। তাঁর শেষ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল জি ২৪ ঘণ্টা।
মাঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়া সেরা প্রাপ্তি : মাঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়া আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া জীবনের সেরা প্রাপ্তি। জার্সিতে 'ভারত' শব্দটা লেখা রয়েছে। সেটা দেখলেই উজ্জীবিত হয়ে যাই। শেষ ম্যাচের নামার আগে আমার কাছে ফের একবার সেই মুহূর্ত আসবে। আমি আবার সেই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করে আছি। তবে এটাও সত্যি যে আমি এই মুহূর্তগুলো বাকি জীবন মিস করব।
ইডেন ছেড়ে লর্ডসেই কেন অবসর? : আসলে এত চোটের জন্য অবসর নিতে বাধ্য হলাম। এক সময় মনে হত ব্যাটার হলে এত চোট-আঘাতে ভুগতে হত না। এ দিকে আগামি বছর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য আমাদের আর কোনও একদিনের সিরিজ নেই। ফলে এই সিরিজটাকেই বিদায়ের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলাম। তাছাড়া আমি তো ভাগ্যবান যে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক ও বিদায়ী সিরিজ খেলছি। তাছাড়া লর্ডসে শেষ ম্যাচ খেলাও তো একটা ভাগ্যের ব্যাপার।
মিতালির সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা : কেরিয়ার শুরু করার সময় ভাবিনি যে এতদূর আসতে পারব। আমি ও মিতালি সেই অনূর্ধ্ব-১৯-এর সময় থেকে খেলছি। এতটা বলতে পারি আমাদের সময় থেকে শুরু করে বর্তমান যুগের মহিলা ক্রিকেটে অনেক উন্নতি ঘটেছে। কীভাবে মহিলা ক্রিকেটে পেশাদারিত্ব এসেছে সেটা খুব কাছ থেকে দেখেছি। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের বিবর্তনে আমাদের দুজনের নাম লেখা থাকবে। এটা ভেবে দারুণ অনুভূতি হয়। এবং ভাল লাগে এত বছর ধরে একই রকম প্যাশন বজায় রেখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পেরেছি। সেইজন্য আমার সব সতীর্থ ও পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
চাকদহ থেকে লর্ডসের জার্নি : সত্যি বলতে আমার শুরুর যাত্রা একেবারেই সহজ ছিল না। বরং অনেক আলাদা ছিল। চাকদহ থেকে ভোরবেলা লোকাল ট্রেনে কিটব্যাগ নিয়ে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করার দিনগুলো আজও মনে পড়ে। আমরা যখন খেলা শুরু করেছিলাম তখন ভারতের মহিলা ক্রিকেট 'উইমেন্স ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার অধীনে ছিল। সেখান থেকে ২০০৬ সালে বিসিসিআই-এর ছাতার তলায় চলে আসে আমাদের মহিলা ক্রিকেট। বোর্ড যে ভাবে আমাদের সাহায্য করি, তাতে আমরা ভাগ্যবান মনে করি। সব পরস্থিতিতে আমরা বোর্ড কর্তাদের সাহায্য পেয়েছি। ২০০২ সালের ১৪ জানুয়ারি কোনওদিন ভুলতে পারব না। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমবার বল করার অভিজ্ঞতা সবচেয়ে উপরে থাকবে। কারণ আমি তো সবসময় ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। ১৯৯৭ সালে ইডেন গার্ডেন্সে অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড মহিলা বিশ্বকাপের ফাইনালে আমি 'বল গার্ল' ছিলাম। সেই মুহূর্ত থেকেই জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।
সেরা ক্যাপ্টেন কে? : দীর্ঘ ২০ বছরে অনেক অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলছি। সবার সঙ্গে আমার ভাল সম্পর্ক। আসলে প্রতিটি অধিনায়কের কাজ করার আলাদা পদ্ধতি থাকে। প্রতিটি অধিনায়ক তাঁর নিজের পদ্ধতিতে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরা পারফরম্যান্স বের করে আনে। তাই কোন অধিনায়ক সেরা, এটা আমার পক্ষে বলা খুব কঠিন।
মহিলা আইপিএল খেলবেন? : মহিলা আইপিএল খেলার ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে যাইনি। কারণ বিসিসিআই-এর তরফ থেকে এখনও মহিলা আইপিএল নিয়ে সরাকারি ঘোষণা হয়নি। আগে বোর্ড ঘোষণা করুক, তারপর মহিলা আইপিএল খেলার কথা নিয়ে বক্তব্য রাখব। আপাতত আমি কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ নিয়েই চিন্তা করছি। এবং প্রতিটি মুহূর্ত এনজয় করতে চাইছি।
আরও পড়ুন: Jhulan Goswami : 'চাকদহ এক্সপ্রেস'-কে সম্মান দিতে কোন বিশেষ উদ্যোগ নিল সিএবি? জেনে নিন
আরও পড়ুন: Sourav Ganguly, Jhulan Goswami: বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে খেলুন ক্রিকেট! সৌরভ খুশি হতেন সানা যদি ঝুলন হতেন
তরুণ মহিলা জোরে বোলারদের জন্য টিপস : কে কতদিন খেলবে সেটা বলা খুব মুশকিল। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে খেলার জন্য ফিটনেস ও পারফরম্যান্স খুবই দরকার। প্রতি মুহূর্তে ক্রিকেট বদলে যাচ্ছে। কোন ক্রিকেটার নিজেকে কীভাবে তৈরি করছে সেটাই কিন্তু আসল ব্যাপার। আমরা যখন খেলা শুরু করেছিলাম তখন অনেক টেস্ট খেলা হত। এমনকি একদিনের ক্রিকেট খেলার নিয়ম অনেক আলাদা ছিল। সেই দিক থেকে এখন মহিলা ক্রিকেট অনেক বদলে গিয়েছে। এখন অনেক বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা হয়। তাই স্কিল থাকা খুব জরুরি। তাই কেউ জোর গলায় বলতে পারবে না যে দশ-বারো বছর খেলে দেবে। তবে আশার কথা হল আমাদের দলের একাধিক বোলার অনেক পেশাদার মানসিকতা বজায় রেখে খেলছে। এবং নিজেদের ফিটনেস নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে।
শেষ বেলায় আবেগি ঝুলন : এই মুহূর্তে আমি শুধু ম্যাচ নিয়েই ভাবনাচিন্তা করছি। কোনও রকম আবেগ কাজ করছে না। আমরা সিরিজ জিতলেও শেষ ম্যাচ জেতার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব। সতীর্থরাও আমার সঙ্গে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করছে। আমি জানি এই সিরিজটা শেষ হলেই বুটজোড়া তুলে রাখব। তখন তো মন খারাপ হবেই। তবে এখন শুধু ম্যাচ নিয়েই ভাবছি।
জীবনের আক্ষেপ: দুটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেললেও অল্পের জন্য ট্রফি জিততে পারিনি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ। সেটা শুধু আমার কেরিয়ারের শোভা বাড়ানোর সঙ্গে ভারতীয় মহিলা দলের জন্যও দারুণ বিজ্ঞাপন হত। কারণ বিশ্বকাপ জেতার জন্যই সব ক্রিকেটার পরিশ্রম করে। সেই ট্রফি না পাওয়ার একটা আক্ষেপ তো থেকেই যাবে।
কীভাবে এল অবসরের ভাবনা?: আসলে কয়েক বছর ধরেই অবসরের ব্যাপারটা মাথায় ঘুরপাক করছিল। বিশেষ করে গত বিশ্বকাপের পর থেকেই অবসর নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছিলাম। ২০২১ সালে কোভিডের আগে বেশ কয়েকবার চোটে জেরবার ছিলাম। সেইজন্য অনেকটা সময় এনসিএ-তে সময় কাটাতে হয়েছে। একটা সময় ভেবেছিলাম শ্রীলঙ্কা সফরেই অবসর নিয়ে নেব। কিন্তু চোটের জন্য সেই সফরে যেতে পারলাম না। আগামি বছর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য আমাদের আর কোনও একদিনের সিরিজ নেই। ফলে এই সিরিজটাকেই বিদায়ের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলাম।
স্বপন স্যরকে মনে পড়ছে: অবসরের কথা স্বপন স্যরকে জানিয়েছিলাম। উনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এটাও তো বুঝতে হবে যে আমার বয়স চল্লিস হতে চললো। ওঁর মতো কোচ পেয়ে আমি ধন্য। কারণ আমাকে ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্যর দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। সেইজন্য ওঁনাকে খবরটা জানাতে গিয়ে আমিও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।
১৯ বছরের ঝুলনকে মনে পড়ে? : ২০০২ সালের ১৪ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাঠে নামার ঝুলনের সঙ্গে এই ঝুলনের কোনও তুলনা হয়না। কারণ সেই ঝুলন একেবারে অনভিজ্ঞ ছিল। খুব জোরে বোলিং করে একটা উইকেট নেওয়াই ছিল আমার প্রাথমিক লক্ষ্য।