`আমার চোখে মারাদোনা সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার` স্মৃতিচারণায় সাংবাদিক জি সি দাশ
মারাদোনা এমন একটা খেলোয়াড় যার বাঁ পাটা ছিল হীরে দিয়ে বাঁধানো। সোনা নয়, একদম হীরে।
১৯৮২ সালে স্পেনের বিশ্বকাপ থেকে ঘুরে এসে আজকাল পত্রিকার সম্পাদক অশোক বাবুকে বলেছিলাম, ছিয়াশির বিশ্বকাপে মারাদোনা মহানায়ক হবে! এটা আমার প্রেডিকশন ছিল। সেবছর অক্টোবর মাসে খেলা পত্রিকায় মারাদোনা নিয়ে আমার লেখা বেরিয়েছিল (যতদূর মনে পড়ছে ২৭ নম্বর পাতায়)।
মারাদোনা এমন একটা খেলোয়াড় যার বাঁ পাটা ছিল হীরে দিয়ে বাঁধানো। সোনা নয়, একদম হীরে। ১৯৭৮ সালে থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তাঁর খেলা দেখেছি। শুধু বিশ্বকাপ নয়, আর্জেন্টিনা লিগ, ইতালির লিগ,স্প্যানিশ লিগে (খুব বেশি নয়) খেলা দেখেছি। গাড়ি চালিয়ে চলে যেতাম শুধু মারাদোনার খেলা দেখার জন্য। ইতালির রোম থেকে 'এল তেম্পোয়া' মানে 'দ্য টাইমস' পত্রিকায় তখন লিখতাম আমি। পাওলো রোসির জ্যাঠতুতো দাদা ছিলেন এই পত্রিকার স্পোর্টস এডিটর।
বিশ্বকাপের অনেক আগেই চলে যেতাম। ১৯৭৮ সালের গল্পটা হচ্ছে গিয়ে মে মাসের ঘটনা। লুই সিজার মেনোত্তি একটা ট্রায়াল ম্যাচ করছে। স্টেডিয়াম হল মনুমেন্টাল এস্তাদিও, বুয়েনস এয়ার্সের। বিশ্ব বিখ্যাত রিভারপ্লেট দলের স্টেডিয়াম। একদিকে ফুল টিম .. পাসারেয়া, লুকে, কেম্পেস, ওয়াশারম্যান আর একদিকে অতিরিক্ত মানে অবশিষ্ট একাদশে যে দল তার মাঝমাঠে হচ্ছে মারাদোনা। খেলা আরম্ভ হল,সবসময় সিগার টানছে লুই সিজার মেনোত্তি। খেলা আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা ছেলে এক মাথা ঝাঁকড়া চুল নিয়ে অবলীলায় চার-পাঁচ-ছয় জনকে কাটিয়ে নিয়ে .... পর পর দুটো গোল করে বসল। অবশিষ্ট একাদশ দু গোলে জিতছে। যেখানে ফুল টিমে সব তারকারা মারিও কেম্পেস, লুকে। দ্বিতীয়ার্ধে মারাদোনাকে তুলে নিল লুই সিজার মেনোত্তি। তারপর ওরা গোল করে ম্যাচটা ২-২ হল। মারাদোনাকে ৭৮ সালের বিশ্বকাপে নিল না লুই সিজার মেনোত্তি। সাংবাদিকরা মেনোত্তিকে জিজ্ঞেস করেন, যে তুমি মারাদোনাকে নিলে না কেন? মেনোত্তি বলেন," এবার আমি তো বিশ্বকাপ জিতবই। (একটা কোচ কতটা আত্মবিশাসী) সামনের বছর যুব বিশ্বকাপটা আমার চাই। আর যুব বিশ্বকাপ মারাদোনা ছাড়া হবে না।
১৯৭৯ সালে আমি জাপানে চলে গেলাম ... আর মারাদোনা ফুল ফুটিয়ে দিল। ফুটবল হচ্ছে এগারো জনের খেলা। ওই একটাই লোককে দেখেছি একজনের খেলা। লোকে তো শুধু দেখে ছিয়াশির বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলাটা। ঠিক একই রকম খেলেছিল বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে সেমি ফাইনালে। ওইরকম কাটিয়ে কুটিয়ে গোল করেছিল। অসাধারণ খেলোয়াড়। বিশ্বকাপ জেতার পর দেখি স্যাম্পেন স্নান চলছে। নাচ গান হই হুল্লোড় চলছে।
আমি আমার জীবনে সত্তর সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ বা ইউরোপিয়ান কাপ কভার করেছি, আমি তিনটে টিকিট রেখে দিয়েছি আমার কাছে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমি ফাইনাল আর ফাইনালের। শুধু মারাদোনার জন্য। আমার চোখে মারাদোনাই সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার।
আরও পড়ুন - 'বিতর্কিত' মারাদোনা