সব্যসাচী বাগচী: প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়ার আগেই ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে বলে উঠলেন, 'সুইট রিভেঞ্জ'! এমন মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলাম। রাতে দারুণ ঘুম হয়েছে।"  বক্তার নাম কপিল দেব পাণ্ডে (Kapil Dev Pandey)। যার জন্য তাঁর রাতে ভাল ঘুম হয়েছে তিনি হলেন এক ও অদ্বিতীয় কুলদীপ যাদব (Kuldeep Yadav)। কলকাতা নাইট রাইডার্সে (Kolkata Kinght Riders) 'ব্রাত্য' ছিলেন কুলদীপ। ম্যাচের পর ম্যাচ তাঁকে বসিয়ে রাখা হত। চায়নাম্যানের আত্মবিশ্বাসের দফারফা করে দিয়েছিল নাইট টিম ম্যানেজমেন্ট। এ বার সেই কুলদীপ মুক্ত হয়েই পুরনো দলের বিরুদ্ধে যেন 'ব্রাত্যজনের চায়নাম্যান সঙ্গীত' বাজিয়ে দিলেন। ৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দিল্লি ক্যাপিটালসের (Delhi Capitals) এই বোলার বুঝিয়ে দিলেন ফুরিয়ে যাননি। প্রতিটা উইকেট নিতেই আকাশের দিকে দুই হাত ছুঁড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তিনি রাজার মতো ফিরে এসেছেন। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কানপুর থেকে ২৪ ঘণ্টাকে টেলিফোনে কুলদীপের কোচ বলছিলেন, "আমরা সবাই এই ম্যাচটার অপেক্ষায় ছিলাম। এই ম্যাচটা ওর কাছে সম্মানের লড়াই ছিল। কেকেআর-এর  বিরুদ্ধে নামার আগের রাতে কুলদীপ আমাকে ফোন করেছিল। ওকে শুধু চাপমুক্ত ভাবে খেলার পরামর্শ দিয়েছিলাম। আর পাঁচটা ম্যাচের মতো এই ম্যাচকেও গুরুত্ব দিতে বলেছিলাম। সেখানেই হল বাজিমাত।" 



চলতি আইপিএল-এ (IPL 2022) নতুন ভাবে নিজেকে ফিরে পাওয়া কুলদীপ এখন আর শর্ট বল করেন না। ফ্লাইট দেওয়া ভুলেই গিয়েছেন। বরং রান আপ একটু বাড়িয়েছেন। ফলে হারিয়ে যাওয়া গতি আবার ফিরে এসেছে। নিজের বোলিংকে তিনি যে আরও নিখুঁত করেছেন সেটা ভয়ঙ্কর আন্দ্রে রাসেলের বিরুদ্ধে তাঁর স্ট্রাটেজি দেখেই বোঝা গিয়েছিল। গত ম্যাচে শ্রেয়স আইয়ার, প্যাট কামিন্স, সুনীল নারিন ও উমেশ যাদবের উইকেট নিলেও, 'দ্রে রাস'কে আটকে রাখার জন্য অন্য প্ল্যান নিয়ে নেমেছিলেন কুলদীপ। 


সেই প্ল্যান নিয়ে কুলদীপের কোচ যোগ করলেন, "রাসেলের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে কুলদীপ ওয়াকিবহাল। নেটে অনেক বছর বল করার সুবাদে কুলদীপ সেটা রপ্ত করেছে। খেয়াল করে দেখবেন ও রাসেলের বাঁ পা টার্গেট করে বল করছিল। লেগ স্টাম্প আক্রমণ করতে গিয়ে গোটা দু’য়েক ওয়াইডও দিয়েছে কুলদীপ। ওকে আউট করতে না পারলেও কুলদীপ কিন্তু চাপ বজায় রেখেছিল।"  


এরপরেই কুলদীপের পুরানো দলের টিম ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। পায়ের চোটের জন্য গত আইপিএল-এ খেলতে পারেননি কুলদীপ। ২০২০ সালের আইপিএল-এ তাঁকে মাত্র পাঁচটি ম্যাচ খেলিয়েছিল কেকেআর। সেই বছর মাত্র ১২ ওভার বল করেছিলেন কুলদীপ। মঈন আলি ও ঈশান কিশানের কাছে দুই ম্যাচে মার খেতেই তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল নাইট থিঙ্কট্যাঙ্ক। ফলে মানসিক অবসাদে চলে গিয়েছিলেন দেশের হয়ে দুটি হ্যাটট্রিক করা এই স্পিনার। 




কপিল নাইটদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, "২০২০ সালে মঈন আলির হাতে মার খাওয়া নিয়ে অনেক কথা হলেও, মনে রাখবেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ওর বলে ক্যাচ ফেলেছিল। ওই একটা ম্যাচ ছাড়া বাকিগুলোতে দারুণ কিছু রান দেয়নি। তারপরেও সুযোগ দেওয়া হয়নি। ভারতের হয়ে খেলা বোলার আইপিএল-এ সুযোগ না পেলে অদ্ভুত লাগে।" তবে ক্ষোভ উগরে দেওয়া এখানেই শেষ নয়। তিনি ফের যোগ করলেন, "কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্ট দায়িত্ব নিয়ে ওর দুটি বছর নষ্ট করেছিল। ওকে ব্যবহার না করে ভিতর থেকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছিল। একদিনের ক্রিকেটে জোড়া হ্যাটট্রিক করার পরেও কেকেআর কুলদীপকে সম্মান দেয়নি।" 


গত আইপিএল নিলামের সময় কেকেআর শেষ পর্যন্ত কুলদীপকে ছেড়ে দিয়েছিল। এবং নিলাম থেকে তাঁকে তুলে নেয় দিল্লি। আর ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরানো কুলদীপকে পাওয়া গেল। আবার হাত থেকে বেরোচ্ছে সেই বিষাক্ত সব ডেলিভারি, আবার বিভ্রান্ত হচ্ছে ব্যাটার। বিপক্ষের ব্যাটাররা বুঝতেই পারছেন না কোনটা ভিতরে আসবে। আর বল যাবে বাইরে। এখনও পর্যন্ত দু’টো ম্যাচ খেলে কুলদীপের উইকেট সংখ্যা ১০। ইকনমি ৭.৪০। 



অবশ্য এমন পারফরম্যান্সের জন্য দিল্লির কোচ রিকি পন্টিং (Rikcy Ponting) ও ঋষভ পন্থকেই (Rishabh Pant) ধন্যবাদ জানালেন কপিলদেব। শেষে জুড়ে দেন, "পন্টিং ও পন্থ ওকে শুরু থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। আর কুলদীপের এগিয়ে যাওয়ার বড় কারণ।" 


কেকেআর ছেলেটাকে মূল্য দেয়নি। সেটা মনে রেখেছিলেন এই ম্যাচ উইনার। তাই বাইশ গজের যুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়ে 'ব্রাত্যজনের চায়নাম্যান সঙ্গীত' বাজিয়ে দিলেন। এবং এই সঙ্গীত যে এ বার আরও জোরে বাজবে, বোলিংয়ের 'দীপ জ্বেলে' সেটা প্রতি ম্যাচেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন কুলদীপ। 


আরও পড়ুন: Kuldeep Yadav: যে দলে ছিলেন ব্রাত্য, সে দলকেই স্পিন কাঁটায় বিঁধলেন 'চায়নাম্যান'


আরও পড়ুন: Kuldeep Yadav-Rishabh Pant: আগুনে ফর্মে কুলদীপ! কৃতিত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক পন্থকে


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)