সৌরভ পাল 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে একটা জয় ভারতের ঝুলিতে আগে থেকেই রয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের পথে টিম কোহলি। প্রথম ইনিংসে ব্যাটে বিপর্যয়ের পর ভারতেরে রানের পাহাড়ের সামনে হোল্ডাররা। ৫০০ রান। চতুর্থ দিনেই খেলা গুটিয়ে দেওয়ার দিকে ছক কষেছিলেন বিরাট কোহলি, অজিঙ্কে রাহানেরা। ৫ নম্বর দিনে শুরুর আগে মনে হচ্ছিল ৪০ ওভার খেলা হলেই অল আউট হয়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অশ্বিনের স্পিন সঙ্গে ৩ পেস আক্রমণ। সামির রিভার্স সুইং আর অমিত মিশ্রর ঘুর্নিতে কতক্ষণই বা টিকবে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং! অপেক্ষা ছিল জয়ের। টানা চার দিনে প্রত্যেকটা সেশনেই জয় বিরাটদের। প্রথমে ব্যাটে তারপর বলে। তবে শেষ দিনটা স্যার সোবার্স, স্যার ভিভদের ক্রিকেট ধারক ও বহকরা দেখিয়ে দিলেন, "উই আর হেয়ার টু ফাইট"।


ইউরো কাপ রাত জেগে দেখা যায়। টান টান উত্তেজনায় গোল আর গোল বাঁচানোর খেলা। ৯০ থেকে ১২০ মিনিট একটা বলের দখলের লড়াইয়ে চোখের পলকই পড়ে না। কিন্তু ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে এই ঝিমিয়ে থাকা একতরফা ক্রিকেট রাত জেগে দেখা, 'নো নেভার'। পরের দিন শিরোনামে ভারতের জয় এটাই তো লেখা থাকবে, আর খেলা দেখে কী হবে! ভাবনাটা ডাহা ভুল। একটা গোটা টেস্ট ম্যাচে চারদিন হেরে একদিন জিতে নেওয়া, লড়াইটা লাইভ না দেখলে বোঝা একটু কঠিন টেস্ট ম্যাচ হয় কী! 


স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস আর সানি গাভাস্কার।  দুই কিংবদন্তির ক্রিকেট ক্লাস চলছিল খেলার মাঝেই। "ভারত জিতছে, ভালো লাগছে। কিন্তু, এভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারতে দেখতে কষ্ট হচ্ছে", সানি গাভাস্কারের এই কথাটাই যেন পাল্টে দিল গোটা পরিবেশ। ভিভের মুখে তখন, ব্যাটিং ক্লাস, "বাউন্সার কখনই ডিফেন্সের জন্য নয়, স্কোর করার। মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে"। 


এই মেঘ ঘিরে ফেলছে সাবাইনা পার্ককে। মেঘ কেটেও যাচ্ছে। মেঘ আর আলোর লুকোচুরির মধ্যেই দুজন লড়াই করছিল। চেজ ও হোল্ডার। ক্যারিবিয়ান ক্যাপ্টেন ও তাঁর দলের অল রাউন্ডার। ৪৪ রানে ৪ উইকেট। গোটা দিনে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর বোর্ডে শেষ স্কোর ৩৮৮ রানে ৬ উইকেট। রসটন চেজ ১৩৭ অপরাজিত। ক্রিজে অপরাজিত জেসন হোল্ডার ৬৪ রানে। ৩৪৪ রান আর একটা গোটা দিন জিতে টেস্ট বাঁচিয়ে ঐতিহাসিক হয়ে রইলেন চেজ ও হোল্ডার। খেলার শেষে ১৩৭ রানের স্কোরবোর্ড হাতে নিয়ে ছবিও তুলেলন রসটন চেজ। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা এখন তাঁকে বলছেন 'মিস্টার ১৩৭'। আর তাঁর সঙ্গেই এই অফ স্পিনারের ঝুলিতে ছিল ৫ উইকেট। তাই খুব সহজেই রাহুল আর রাহানেকে হারিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের খেতাবও তাঁর। 


 



জয় না পেয়ে বিরাটের জুটল কেবল হতাশা, বললেন " এটাই হল টেস্ট ক্রিকেট। আমরা শেষ দিন হারলাম। কোনও অজুহাত নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ দিনটা যেভাবে খেলল তাতে গোটাটাই ওদের কৃতিত্ব"। 


একটা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির হঠাৎ জেগে ওঠা ছিল সাবাইনা পার্কের শেষ দিন। বব মার্লের গানটা যেন বারবার ক্যারিবিয়ানদের হৃদ স্পন্দন বাড়িয়ে যাচ্ছিল প্রত্যেকটা মূহূর্তে। "গেট আপ, স্ট্যান্ড আপ... ডোন্ট গিভ আপ দ্য ফাইট"। বিরাট যখন হোল্ডারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফিরলেন ড্রেসিং রুমে, তখন বিরাটের হৃদ স্পন্দনেও ম্যাক্সিকান ওয়েভের মত ঢেউ তুলেছিল, 'গেট আপ, স্ট্যান্ড আপ'। এই একটা দিনের 'হারে' ম্যাচ ড্র আরও নৃশংস ক্রিকেটে উজ্জবিত করবে বিরাট অ্যান্ড কোম্পানিকে।