পঞ্চাশ বছরের কেরিয়ারে দাড়ি টানছেন `মিস্টার ফুটবল`
পাওলো রোসির ইতালির কাছে ব্রাজিলের হারের পর স্যর ববি চার্লটন তাঁর কাঁধে মাথা রেখে অঝোরে কেঁদেছিলেন।
নিজস্ব প্রতিনিধি: থেকে গেলে হত না? ফুটবল বিশ্বের এই কাতর অনুনয় এড়িয়ে যেতে তিনি স্রেফ একটা মিষ্টি হাসি হাসছেন। আর হাত উঁচিয়ে আশ্বাসের সুরে বলছেন, 'ফিরতে তো পারি যে কোনও দিন। তবে আপাতত জীবনের অন্য পিঠটা একটু দেখি।'
আরও পড়ুন - বিশ্বকাপের আগে বড় ধাক্কা খেল ব্রাজিল
মিস্টার ফুটবল নামে তাঁকে ডাকে ক্রীড়াবিশ্ব। আসল নাম যদিও জন মটসন। ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। পেশায় ধারাভাষ্যকার। আন্তর্জাতিক সার্কিটে জনপ্রিয়তায় যিনি যে কোনও পেশাদার ক্রীড়াবিদকে টক্কর দিতে পারেন তিনি। ফুটবল, টেনিস, বক্সিং, রেসিং মাঠে ঘুরে ঘুরে যিনি পঞ্চাশ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। তবে আর নয়। এবার লনে বেরসে শ্যাম্পেনের গ্লাস হাতে সূর্যাস্ত দেখতে চান। অবসর নিতে চলেছেন মিস্টার ফুটবল।
আরও পড়ুন - মহিলাদের আইপিএল-এর মহড়া, ২২ মে ওয়াংখেড়েতে মেয়েদের টি-২০ ম্যাচ
১৯৭১ এ লিভারপুল বনাম চেলসি ম্যাচ দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। শেষ করবেন রবিবার প্রিমিয়ার লিগে ক্রিস্টাল প্যালেস বনাম ওয়েস্ট ব্রুম ম্যাচে ধারাভাষ্য দিয়ে। বিদায়লগ্নেও তিনি ব্যতিক্রমী। অন্যদের মতো আবেগে ভেসে চোখে জল জমছে না। বরং, বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলছেন, 'যে কোনও সময় ফিরে আসলে আমাকে সবাই আগের মতোই গ্রহণ করবে। এটা আমার আত্মবিশ্বাস নয়। আমার প্রাপ্তি। তবে শেষ বলেও একটা ব্যাপার থাকে।'
আরও পড়ুন - ধোনিদের পথে মেসিরা, এবার নু ক্যাম্পে মা তুঝে সালাম
পাঁচ দশক ধরে আড়াই হাজারের বেশি ম্যাচে ধারাভাষ্য করেছেন। বিবিসির রেডিও ও টিভি চ্যানেল, দুই জায়গাতেই সমান তালে কাজ করেছেন। প্রিমিয়র লিগ, উইম্বলডনের ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন তাঁর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য। একটা সময় কিংবদন্তি মহম্মদ আলিকে পাশে নিয়ে কমেন্ট্রি করেছেন। পাওলো রোসির ইতালির কাছে ব্রাজিলের হারের পর স্যর ববি চার্লটন তাঁর কাঁধে মাথা রেখে অঝোরে কেঁদেছিলেন। সে ১৯৮২-র কথা। কমেন্ট্রি বক্সের সেসব জানা-অজানা গল্প বলতে বলতে মিস্টার ফুটবলের চোখ চকচক করে ওঠে। একবার তো উইম্বলডনে বিয়ন বর্গের ম্যাচে জমিয়ে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন। হঠাত্ দেখেন পাশে এসে বসে আছেন হলিউড সুপারস্টার জন নিকোলসন। অবাক হননি মিস্টার ফুটবল। বরং অন এয়ারে নিকোলসনের একটা ইন্টারভিউ নিয়ে ফেলেন। প্রযোজক এসে পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন সেবার।
পঞ্চাশ বছরের কেরিয়ার থামবে। তাকে কি একটুও মন খারাপ নেই? মটসন সগর্বে বলেন, 'যে কোনও ক্ষেত্রে আগে টিকে থাকার লড়াই শিখতে হয়। সেটা পারলে বাকি সব কিছু আস্তে আস্তে শিখে নেওয়া যায়। আমি টিকে থাকার লড়াই শিখে ফেলেছি। এবার অন্য কেউ শিখুক।'