সব্যসাচী বাগচী 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

১৯৯৪ সালের পর ২০১১। এরপর ২০২২। প্রথম সাফল্য এসেছিল ১৭ বছর পর। আর আগে শেষ সোনা এসেছিল ১১ বছর আগে। দীর্ঘ এক দশক পর জাতীয় গেমসের (NationalGames2022) আসরে বাংলা আবার হয়ে উঠল 'সোনার বাংলা'। তাও আবার কেরালাকে (Kerala) হারিয়ে ট্রান্সটাডিয়া স্টেডিয়ামে আয়োজিত মেগা ফাইনালে এল ৫-০ ব্যবধানে বড় জয়। চলতি বছরের ২ মে ঘরের মাঠ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে টাইব্রেকারে (৪-২) এই কেরালার কাছেই হেরে গিয়েছিল বাংলা (Bengal)। এবার সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নিল নরহরি শ্রেষ্টার (Narahari Srestha) বঙ্গব্রিগেড। 


মঙ্গলবার গোটা বাংলা যখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) বিসিসিআই (BCCI) থেকে অপসারণ নিয়ে ব্যথিত, ঠিক সেই দিন বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের মুখে হাসি ফোটালেন একদল দামাল বঙ্গ সন্তান। আইএসএল-এর (ISL 2022-23) শুরুতেই এটিকে মোহনবাগান (ATK Mohun Bagan) ও ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC) মুখ থবুড়ে পড়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাংলার হেড কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য-এর (Biswajit Bhattcharya) ছেলেদের এই সাফল্য অবশ্যই বাংলা ফুটবলের জন্য বড় স্টেটমেন্ট। আর কোচ তিনিও মারাত্মক রকমের উচ্ছস্বিত। জয়ের পর জি ২৪ ঘন্টা যখন তাঁকে টেলিফোনে ধরল, তখন কান পাতা দায়। মারাত্মক ক্লান্ত হলেও একান্ত সাক্ষাৎকারে আগ্রাসী মেজাজে ধরা দিলেন তিন প্রধানের প্রাক্তন কোচ। 


প্রশ্ন: কেরালাকে ফাইনালে হারিয়ে কি বাড়তি তৃপ্তি পেলেন? 


বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য: এটা নিয়ে নতুন করে কী বলব! সবাই খেলা দেখেছে। স্কোরলাইনও সবার চোখের সামনে রয়েছে। যে বাঙালি নিন্দুকরা এতদিন ধরে আমাদের ছেলেদের নিন্দা করছিল, তারাই উত্তর দিক। আমরা সন্তোষের ফাইনাল হারলেও কেরালার বিরুদ্ধে কিন্তু আগ্রাসী মেজাজে খেলতে শুরু করি। ফলে ১৭ মিনিটেই এগিয়ে যাই। এরপর নরহরি কেরালাকে নিয়ে যা করল, সেটা নিয়ে অনেক বছর বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা গর্ব করতে পারেন। 


প্রশ্ন: সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে পাঁচ গোল দেখার সময় কতটা গর্ব হচ্ছিল? 


বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য: আমি ছেলেদের জন্য কতটা গর্বিত সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। কেরালার বিরুদ্ধে নামার অনেক আগে থেকেই ছেলেদের মারাত্মক উজ্জীবিত ছিল। আমার ধারণা কয়েক মাস সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে হারের জ্বালা ওরা ভুলতে পারেনি। এই গরমে একদম পারফেক্ট ফুটবল খেলেছে। 


পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা


প্রশ্ন: অধিনায়ক নরহরি শ্রেষ্টা ও তাঁর হ্যাটট্রিক। আপনার অধিনায়ক সম্পর্কে কিছু বলুন। 


বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য: অসাধারণ ফুটবলার। দারুণ টিম ম্যান। কলকাতা লিগে নরহরি সর্বোচ্চ গোল স্কোরার। তাই জাতীয় গেমসে যে ও দুরন্ত ফুটবল খেলবে সেটা নিয়ে নতুন করে তো কিছু বলার নেই। নরহরি আমাদের দেশের অন্যতম সেরা ফুটবলার। 



আরও পড়ুন: Exclusive Gautam Bhattacharya, Sourav Ganguly: সৌরভকে সরিয়েই দেওয়া হল, কেন?


আরও পড়ুন: Sourav Ganguly, BCCI Election: বোর্ড প্রধান থেকে আইপিএল চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাব! প্রত্যাখ্যান করলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়


প্রশ্ন: প্রায় শোনা যায় বাঙালি ফুটবলার হারিয়ে গিয়েছে। আপনার দলে কতজন বাঙালি ছিলেন? 


বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য: আবার বলছি এই ম্যাচে সবকটা বাঙালি ফুটবলার ছিল। কারণ এটা বাংলার দল। অন্য রাজ্য কিংবা অবাঙালি ছেলেদের নিয়ে দল গড়া হয়নি। কারণ আমি কিছু মানুষদের জবাব দিতে চেয়েছিলাম। 


প্রশ্ন: কঠিন পরস্থিতির মধ্যে সোনা জয়। ছেলেদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন? 


বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য: এই সাফল্য তো আমার নয়। এই সাফল্য, এই সোনা তো ছেলেদের জন্য। ওরা মাঠে রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে লড়াই করেছে বলেই ১১ বছর পর আমরা সোনার মুখ দেখলাম। 


প্রশ্ন: ছেলেদের কী গিফট দেবেন?


বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য: ওরা যা চাইবে তাই দিয়ে দেব। মাঠ থেকে হোটেল ফিরেই পার্টি দেব। তাছাড়া আইএফএ-এর সচিব অনির্বাণ দত্ত এখানে ছেলেদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। তিনিও নিশ্চয়ই ছেলেদের জন্য উপহার বেছে রেখেছেন।  


প্রশ্ন: ফুটবলার হিসেবে একাধিকবার জাতীয় গেমসে সোনা জিতেছেন। এবার কোচ হিসেবে সোনা জিতলেন। বৃত্ত সম্পূর্ণ হল? 


বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য: অবশ্যই। সেটা বলতেই পারেন। ফুটবলার হিসেবে কেরিয়ারে ১১বার জাতীয় গেমস খেলে নয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এরপর থেকে আমাদের পারফরম্যান্স মোটেও ভালো ছিল না। ১৯৯৪ সালের ২০১১, এরপর এবার সোনা জিতলাম। ভাবতে পারছেন আমরা কতটা পিছিয়ে গিয়েছি। অনেক কম সময়ের মধ্যে দল গড়া একেবারেই সহজ ছিল না। প্রিমিয়ার ডিভিশনের ৩০ জন ফুটবলারকে ট্রায়ালে ডাকা হয়। অনেক নতুন, অচেনা মুখ। কল্যাণীতে মাত্র ৭ দিনের ট্রায়াল। ৩০ জন থেকে ২০ জনের মূল দল বেছে নেওয়া হয় জাতীয় গেমসের জন্য। মাত্র সাত দিনের প্রস্তুতি সেরে জাতীয় স্তরের একটি প্রতিযোগিতা খেলতে এসেছিলাম। তাই এবারের জয় আমাকে আলাদা তৃপ্তি দিয়েছে। 


প্রশ্ন: তিন প্রধানে কোচিং করিয়েও প্রাপ্য সম্মান পাননি। তবে শেষ পর্যন্ত বাংলা কিন্তু আপনাকে আপনার প্রাপ্য সম্মান দিল। 


বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য: সেই ইতিহাস তো কম-বেশি সবাই জানে। তিন প্রধানে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছি। কিন্তু ওরা আমাকে মর্যাদা দেয়নি। সেগুলো আর মনে রাখতে চাই না। আইএফএ-এর সচিব অনির্বাণ দত্ত আমাকে যোগ্য মনে করেছেন। দায়িত্ব দিয়েছেন। ছেলেরা নিজেদের উজাড় করে পারফর্ম করেছে। এবং আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটাই তো আমার কাছে বড় পাওনা। 



(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)