Ranji Trophy Final 2023, BEN vs SAU: ঘাসের পিচ বুমেরাং! শাহবাজ-অভিষেকের লড়াইয়ের পরেও ১৭৪ রানে অল আউট বাংলা
উনাদকাট প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন বলেছিলেন, ইডেনের পিচে প্রাণ আছে। এবং সেই পিচ থেকেই একের পর এক উইকেট আদায় করে, বিপক্ষ ব্যাটারদের প্রাণ কেড়ে নিতে শুরু করলেন।
সব্যসাচী বাগচী
মেগা ফাইনালের দু'দিন আগে মনোজ তিওয়ারি ড্রেসিংরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে বীরদর্পে ঘোষণা করেছিলেন যে, "এই ম্যাচটা ওয়ান সাইডেড হবে। আর আমার মন বলছে ফাইনালটা আমরাই জিতব।" বঙ্গ অধিনায়কের দাবি যে অর্ধ সত্য সেটা টস জিতে বুঝিয়ে দিলেন সৌরাষ্ট্রের অধিনায়ক জয়দেব উনাদাকাট। এবং তাঁর পেস ব্রিগেড। ফলে শাহবাজ আহেমদ ও অভিষেক পোড়েলের লড়াইয়ের পরেও মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে গেল বাংলার প্রথম ইনিংস।
সকাল ন'টায় প্রাক্তন রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় 'ইডেন বেল' বাজিয়ে মেগা ফাইনালের সূচনা করলেন। তখনও বোঝা যায়নি বাংলার জন্য এমন ভরাডুবি অপেক্ষা করছে। সকাল ৯:২০ মিনিটের মধ্যেই চলে গেল বঙ্গ ব্রিগেডের চার উইকেট। জয়দেব ও তাঁর জুনিয়র চেতন সাকারিয়ার পেস ও বিষাক্ত সুইং দেখে মনে হচ্ছিল, যেন মিচেল স্টার্ক ও মিচেল জনসন দাপট দেখাচ্ছেন! দুই বাঁহাতির দাপটে তখন দিশেহারা বাংলা।
উনাদকাট প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন বলেছিলেন, ইডেনের পিচে প্রাণ আছে। এবং সেই পিচ থেকেই একের পর এক উইকেট আদায় করে, বিপক্ষ ব্যাটারদের প্রাণ কেড়ে নিতে শুরু করলেন। প্রথম ওভারেই অভিমন্যু ঈশ্বরনকে ফেরান উনাদকাট। তাঁর ইনসুইংকে সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হন বঙ্গ ওপেনার। তাও আবার খাতা না খুলেই নিলেন বিদায়। এরপর বঙ্গ ব্যাটিং যেন 'সাইকেল স্ট্যান্ড!' ফলে প্রথম ৪৫ মিনিটেই পিছিয়ে যায় বাংলা।
ইডেনের চারটি ব্লক ভরে ওঠার আগেই এবার বাংলাকে আঘাত দিলেন চেতন সাকারিয়া। ৩৩ বছর আগের রনজি ফাইনালে অভিষেক ঘটেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। এবারের ফাইনালে অভিষেক ঘটে সুমন্ত গুপ্তর। কিন্তু ওপেনার সুমন্ত বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। চেতনের বলে শেলডন জ্যাকসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সুমন্ত। ১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলা তখন চাপে কাঁপছে!
আরও পড়ুন: BGT 2023: ২৪ বছর আগে কুম্বলের কীর্তি মনে করিয়ে ওয়ার্নার-স্মিথদের ভয় দেখালেন ভারতের প্রাক্তন তারকা
এবার চেতনের শিকার সুদীপ ঘরামি। চলতি মরসুমে দারুণ ছন্দে রয়েছেন সুদীপ। তবে এবার বড় ভুল করলেন। চেতনের স্টাম্পে থাকা ডেলিভারি ছাড়তে গিয়েছিলেন সুদীপ। কিন্তু ওই বাঁক খাওয়া ডেলিভারিটা যে মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে হাজির হবে তাঁর সামনে, তা কল্পনাও করেননি সুদীপ। চেতনের বলটা অফ স্টাম্প নাড়িয়ে দিল সুদীপের। তখন স্কোরবোর্ডে লেখা মাত্র ২ রানে ৩ উইকেট।
মনোজ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলস্টোনের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ম্যাচের আগে তাঁর দাবি ছিল, তিনি ব্যক্তিগত মাইলস্টোন নয় বরং দলের জন্য পিচে টিকে থাকবেন। কিন্তু আসল সময় অধিনায়ক পারলেন না। অভিজ্ঞ মনোজও উনাদকাটের শিকার। অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা বলে অহেতুক খোঁচা দিলেন। বলে চলে গেল গালিতে থাকা বিশ্বরাজ জাদেজার হাতে। দলের চাপ বাড়িয়ে ফিরলেন মনোজ। ১৭ রানে চলে গেল ৪ উইকেট!
তবে বড় ধাক্কা খাওয়া এখনও শেষ হয়নি। 'ক্রাইসিস ম্যান' অনুষ্টুপ বছরের পর বছর ধরে বাংলাকে বাঁচিয়েছেন। যদিও এবার বাকি চারজনের মতোই ভুল করলেন 'রুকু'। উইকেটকিপার হার্ভিক দেশাইয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ১৬ রানে হাঁটা লাগালেন অনুষ্টুপ।
৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দল ব্যাকফুটে চলে যাওয়ার পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন আকাশ ঘটক। তবে তাঁর লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হল না। ৪৮ রানে ১৭ রানে চেতনের শর্ট বলকে হুক করতে গিয়ে উনাদকাটের হাতে ক্যাচ দিলেন। ৬৮ রানে ৬ উইকেট হারাল বাংলা। লাঞ্চের বিরতিতে মাত্র ৭৮ রান তুলতে গিয়ে বাংলার ৬ উইকেট চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে লড়াই শুরু করেন শাহবাজ আহমেদ ও অভিষেক পোড়েল। সপ্তম উইকেটে দু'জন তোলেন ১০৮ রান। তবে শাহবাজ ১১২ বলে ৬৯ রানে ফিরতেই চা পানের বিরতির কিছুক্ষণ পর আউট হতেই, লোয়ার অর্ডারের বাকিরা একের পর একজন ফিরতে থাকেন। ফলে মাত্র ১৭৪ রানে গুটিয়ে গেল বাংলার প্রথম ইনিংস। ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন চেতন। জয়দেবের ঝুলিতে এসেছে ৪৪ রানে ৩ উইকেট। ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার ধর্মেন্দ্র জাদেজা।
বাংলার ব্যাটিং প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও, খেলার এখন অনেক সময় বাকি। বঙ্গ পেসাররা কি দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন? সেটাই দেখার।