SAFF Championship Final 2023, IND vs KUW: রুদ্ধশ্বাস ফাইনালের ফলাফল টাইব্রেকারে, সুনীল-গুরপ্রীতের যুগলবন্দীতে নবমবার ট্রফি জিতল `ব্ল্যু টাইগার্স`
একে তো পিছিয়ে থাকা, এরমধ্যে আবার ৩৫ মিনিটের মধ্যেই ভারতের চাপ বেড়ে গেল। বিপক্ষের আল হার্বিকে কনুই দিয়ে ফাউল করার জন্য হলুদ কার্ড দেখলেন সন্দেশ। সেখানেই শেষ নয়। ৩৪ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছড়তে বাধ্য হলেন ফর্মে থাকা আনোয়ার আলী। তরুণ ডিফেন্ডার মাঠ ছাড়তেই সহকারী কোচ মহেশ ঘাউলি আর এক তরুণ ডিফেন্ডার মেহতাব সিং-কে মাঠে নামিয়ে দেন।
সব্যসাচী বাগচী
১২২ মিনিটেও ফলাফল জানা যায়নি। স্বভাবতই গোটা দেশের নজর চলে গিয়েছিল সেই ৬ ফুট ৬ ইঞ্চির পঞ্জাব তনয়ের দিকে। সেমি ফাইনালে লেবাননের (Lebanon) বিরুদ্ধে তো এমন পরিস্থিতি থেকেই দলকে ফাইনালে তুলে দিয়েছিলেন। তাঁর গ্লাভস ভারতের মান বাঁচিয়েছিল। টাইব্রেকারে দুরন্ত কয়েকটা সেভ করে বেঙ্গালুরুর (Bengaluru) কান্তিরাভার (Sree Kanteerava Stadium) কাণ্ডারি হয়ে উঠেছিলেন গুরপ্রীত সিং সান্ধু (Gurpreet Singh Sandhu)। মেগা ফাইনালে সেই কান্তিরাভার ২৬, ৩৮০ জন ফুটবলপ্রেমীদের সামনে ছিল ইতিহাস গড়ার হাতছানি। গোটা ভারতের সেই আশা পূরণ করলেন সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri) ও অভিজ্ঞ গোলকিপার গুরপ্রীত। চাপে চুপসে না গিয়ে বরং পালটা লড়াই। স্বভাবতই ৫-৪ ব্যবধানে কুয়েতকে (Kuwait) হারিয়ে ২০২১ সালের পর ফের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে (SAFF Championship Final 2023) নাম লেখাল ভারতীয় ফুটবল ফল (Indian Football Team)। গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে শোনা গেল 'বন্দে মাতরম' ধ্বনি।
জয়ের হাতছানি সুনীল ছেত্রীর গোল থেকে দেখা গেল। শট নিতে যাওয়ার আগে টেলিভিশনের ক্যামেরা ঘুরে গিয়েছিল ভারতীয় দলের অধিনায়কের বাবা-মা ও স্ত্রী সোনমের দিকে। তিনজনেই ঈশ্বরকে ডাকছিলেন। সেই ডাকে যে ফুটবল দেবতা এমন ভাবে সাড়া দেবে অনেকেই ভাবতে পারেননি। কারণ টাইব্রেকারে শট নিতে গিয়ে বাইরে বল উড়িয়ে দিলেন আবদুল্লাহ। স্বভাবতই গ্যাল্যারি জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল ...ইন্ডিয়া...ইন্ডিয়া চিৎকার। সন্দেশ জিঙ্ঘান ও ম্যাচের গোলদাতা লালরিনজুয়ালা ছাংতে। ফলে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল ভারত। তবে ভারতের জন্য আরও লড়াই অপেক্ষা করছিল। কারণ উদান্তা সিং মিস করতেই খেলায় ফিরে আসে কুয়েত। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। 'সাডেন ডেথ'-এ গুরপ্রীত সেভ করতেই রেকর্ড গড়ে নবমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নিল ''ব্ল্যু টাইগার্স'।
শুরুতে গোল হজম করলেও, ভারত দারুণ লড়াই চালাল। তবে এতে লাভ হয়নি। প্রথমার্ধে সমতা ফেরালেও, দ্বিতীয়ার্ধে দেখা গেল দুই দলের একেবারে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর। কেউ কাউকে এক চুল জায়গা ছেড়ে দেয়নি। এরমধ্যে আবার ম্যাচের শেষ দিকে প্রথম গোলদাতা আবদুল্লাহর শট বাঁচিয়ে দেন গুরপ্রীত। তবে নির্ধারিত সময়েই ম্যাচের ফলাফল দেখা যেত। কিন্তু তেমনটা হল না। বক্সের ভিতরে মহেশকে পিছন থেকে ট্যাকল কুয়েতের ফুটবলারের। জোরাল পেনাল্টির আবেদন করেছিল ভারতীয় দল। নাকচ করলেন রেফারি। ফলে শেষ পর্যন্ত কান্তিরাভার টানটান ফাইনাল গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ফের জোর টক্কর দেখা গেল। তবে গোলের দেখা নেই। তাই ফাইনালের ভাগ্য জানার জন্য সেই টাইব্রেকারের দিকেই তাকাতে হল।
কিছু বোঝার আগেই প্রথমে গোল হজম করে যায় ভারত। তাও আবার ম্যাচের মাত্র ১৪ মিনিটে। দারুণ একটা প্রতিআক্রমণে গোল করে কুয়েত। এই সময়ে ভারত বিস্ময়কর গতিতে দখল হারায়, বলটি ভারতীয় বক্সে অচিহ্নিত আলখালদির কাছে চলে যায়, তিনি সেই রানিং বল ঘুরিয়ে দেন আবদুল্লাহর দিকে। এবং গুরপ্রীৎ সিং সান্ধু সেভ করতে পারেননি। ফলে ভারতের রক্ষণকে বোকা বানায় কুয়েতের আক্রমণ।
তবে মেগা ফাইনালে গোল হজম করলেও 'মেন ইন ব্লু' ব্রিগেড কিন্তু দমে যায়নি। চাপের মুখে চুপসে যাওয়ার চেয়ে পালটা লড়াই শুরু করল সুনীল ছেত্রীর সতীর্থরা। ১৬ মিনিটেই ভারতের কাছে সমতা ফেরানোর সুযোগ চলে এসেছিল। বক্সের ধার থেকে সুনীলের নেওয়া জোরাল শট দুর্দান্ত ভঙ্গিমায় বাঁচিয়ে দেন কুয়েতের গোলকিপার মারজুক।
একে তো পিছিয়ে থাকা, এরমধ্যে আবার ৩৫ মিনিটের মধ্যেই ভারতের চাপ বেড়ে গেল। বিপক্ষের আল হার্বিকে কনুই দিয়ে ফাউল করার জন্য হলুদ কার্ড দেখলেন সন্দেশ। সেখানেই শেষ নয়। ৩৪ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছড়তে বাধ্য হলেন ফর্মে থাকা আনোয়ার আলী। তরুণ ডিফেন্ডার মাঠ ছাড়তেই সহকারী কোচ মহেশ ঘাউলি আর এক তরুণ ডিফেন্ডার মেহতাব সিং-কে মাঠে নামিয়ে দেন। পঞ্জাব তনয়ের মাঠে নামাই যেন ভারতের কপাল খুলে দিয়েছিল।
এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শুরু থেকেই ছন্দে রয়েছেন লালরিনজুয়ালা ছাংতে। এবারও তিনিই কান্তিরাভা স্টেডিয়ামের ভর্তি গ্যালারি, নিজের দল ও গোটা দেশের মুখে হাসি ফোটালেন। খেলার বয়স তখন ৩৮ মিনিট। দুর্দান্ত পাসিং এবং মুভমেন্ট। আশিক কুরুনিয়ানের তৈরি করা বলে দারুন টাচ দিলেন সুনীল। ভারত অধিনায়ক সাহাল আব্দুল সামাদের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। সেই রানিং বল জালে ঢুকিয়ে দলকে সমতায় ফেরান ছাংতে।
ভারত যেমন সমতা ফেরানোর পর থেকে আগ্রাসী মেজাজে খেললেও গোলের মুখ খোলেনি। তবে মেগা ফাইনালে কুয়েত প্রথমে এগিয়ে গেলেও, দাপট বজায় রাখতে পারল কোথায়! ভারতীয় দল থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ নিয়ে গায়ে-গতরে খেলার চেষ্টা করছিল। যদিও এতে লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ফাইনাল গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ফের জোর টক্কর দেখা গেল। তবে গোলের দেখা নেই। তাই মেগা ফাইনালের ভাগ্য জানার জন্য সেই টাইব্রেকারের দিকেই তাকাতে হল। আর সেখানেই বাজিমাত করল ভারত।
ফুটবল ইতিহাস অনুসারে এই ফাইনালের আগে কুয়েতের বিরুদ্ধে চারটি ম্যাচ খেলে ভারত মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছিল। কুয়েত জিতেছিল দু'বার। ২০১০ সালে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ৯-১ ব্যবধানে ভারতকে হারিয়েছিল এই পশ্চিম এশীয় দেশ। এর আগে ১৯৭৮ সালের এশিয়ান গেমসে ৬-১ ব্যবধানে জিতেছিল কুয়েত। তবে ২০০৪ সালে ভারত তাদের হারায় ৩-২ ব্যবধানে। তবে এখন ছবিটা পাল্টে গিয়েছে। গত ম্যাচেই ভারত কুয়েতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় জয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু নিজেদের ভুলেই শেষ পর্যন্ত সেই জয় পাওয়া হয়ে ওঠেনি। তাই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে এই পরিসংখ্যান ২-২ করার সুযোগ ছিল সুনীল ছেত্রীদের সামনে। সেই পরীক্ষায় লেটার মার্কস নিয়ে পাস করার সঙ্গে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতল টিম ইন্ডিয়া। একইসঙ্গে বিপক্ষের বিরুদ্ধে মধুর প্রতিশোধ তুলে সর্বাধিক নয় বার এই ট্রফি জিতে নিল 'মেন ইন ব্লু' ব্রিগেড। এর আগে ২০২১ সালে নেপালকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল সুনীল ছেত্রীর দল। আর এবার ঘরের মাঠে পিছিয়ে থেকেও দাপট দেখাল 'ব্ল্যু টাইগার্স'।