বিরাট পেলেন, সুনীল পেলেন না!
সুনীলদেরই হাতজোড় করতে হয়। বলতে হয়, ‘মাঠে আসুন, আমাদের সমর্থন করুন’। আর অন্যদিকে কলার উচু করেই ঐতিহাসিক হয়ে যান বিরাটরা।
নিজস্ব প্রতিবেদন: একটা দল খেলছিল অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে। আর অন্য দলটি খেলল আরব আমির শাহির আবু ধাবিতে। ঘণ্টা কয়েকের ব্যবধান, রাতে জিতল সুনীলরা। আর সকালে জিতল বিরাটরা। একথা অনস্বীকার্য, শনিবার থেকেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের জয় কার্যত নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। অজিদের বিরুদ্ধে ছয় শতাধিক রানের পাহাড়, তার উপর তিন দশকের পর অস্ট্রেলিয়ায় দাঁড়িয়ে অজি দলকে ফলো অন করানো, সবই ইঙ্গিত ছিল ভারতের বর্ডার-গাভাসকর জয়ের। সোমবার সকালে সেটাই হল। বৃষ্টি বিঘ্নিত টেস্ট ড্র হলেও সিরিজ জিতল ভারত। এই প্রথমবার।
১৯৪৭-এ প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল ভারত। সেবার ৫ ম্যাচের সিরিজ ৪-০-তে হেরে এসেছিল দেশ। এরপর ব্যাগি গ্রিনরা এ দেশে এসেছে এবং সিরিজ জিতেই বাড়ি ফিরেছে। ১৯৫৬/৫৭, ১৯৫৯/৬০- ভারতে এসে সিরিজ জিতেছিল তাঁরা। ১৯৬৪ সালে সিরিজ ড্র রাখতে পেরেছিল ভারত। আর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম সিরিজ জয় হয়েছিল ১৯৮০ সালে। তবে সেটা ঘরের মাটিতেই। এরপর ভারত যতবারই ক্রিকেট খেলতে ডনের দেশে গিয়েছে, নয় ড্র করে ফিরেছে নয় ল্যাজে গোবরে হয়ে ফিরেছ। তবে এই প্রথম ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হল না। ২০১৬/১৭ সালে ঘরের মাঠে অজিদেরকে ২-১-এ হারিয়ে বর্ডার-গাভসকর ট্রফি জিতেছিল ভারত। বছর দুয়েকের মাথায় এবার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ‘দাদাগিরি’ করল তারা। সিরিজ জিতল সেখানেও। স্বাভাবিক ভাবেই এই জয় বিরাট জয়। কোহলি, শাস্ত্রী বলছেন অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জয় না কি তিরাশির বিশ্বকাপের থেকেও বড়।
এরপর আর কিই বা বলার থাকে রাষ্ট্রপতির। টুইটে তিনি লিখলেন, “বিরাট কোহলি ও গোটা দলকে অভিবাদন। অনবদ্য ব্যাটিং, অবিশ্বাস্য বোলিং এবং সুন্দর দলগত খেলা। আমরা গর্বিত। এই জয়কে অভ্যাসে পরিণত করুন।” প্রধানমন্ত্রী টুইটে লিখলেন, “অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেটীয় অভীষ্ট লাভ হয়েছে।” স্মরণীয় ক্রিকেট সাফল্যে ভারতীয় দলকে অভিবাদন জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ‘ঐতিহাসিক জয়’। বিরাটদের জয়ে তিনি যে গর্বিত, তা সরাসরিই টুইটে লিখেছেন।
দুর্ভাগ্য, রবিবারের ঘটনা একবারের জন্যও মনে এল না তাঁদের। বিরাট কোহলিরা যদি ৭২ বছরে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতে কৃতিত্বের দাবিদার হয়, তাহলে ৫৫ বছর পর এশিয়ানে জয় অর্জন করে কেন উজ্জ্বল আলোকে দীপ্তমান হতে পারেন না সুনীলরা? রবিবার আবু ধাবিতে ৪-১-এ ম্যাচ জিতেছে সুনীলরা। এশিয়ানে এই রকম ঘটনা ঘটেছিল সাড়ে পাঁচ দশক আগে। সে বার ইজরায়েলে চুনী গোস্বামীরা হংকং-কে ৩-১-এ হারিয়েছিল। এবার সেই মঞ্চেই থাইল্যান্ড-কে ৪-১-এ হারাল ভারত। সেটাও ৩২ বছর পর। ভারত শেষবার থাইল্যান্ডকে হারিয়েছিল মারডেকা কাপে।
এখানেই শেষ নয়। বিরাট ব্যক্তিগত কৃতিত্বে বিশ্বের এক নম্বর হয়েছেন। এই কৃতিত্ব কিন্তু আছে সুনীল ছেত্রীরও। এক না হলেও সুনীল এখন বিশ্বের দ্বিতীয় ফুটবলার, যিনি এখনও পর্যন্ত ৬৭টি আন্তর্জাতিক গোল করেছেন। ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারকে (৬০) টপকে ছিলেন অনেক আগেই, রবিবার ছাপিয়ে গেলেন মেসিকেও (৬৫)। তাঁর আগে আছেন কেবল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (৮৫)। বিশ্ব ফুটবলের নিরিখে দেখলে, ভারত অধিনায়ক এখন শীর্ষ তালিকায় জ্বলজ্বল করছেন। যেখানে ভারত ফিফা তালিকায় ৯৭ নম্বর দেশ, সেখানে কি না সুনীল ছেত্রী কি না সব থেকে বেশি আন্তর্জাতিক গোল করা বিশ্বের দ্বিতীয় ফুটবলার। এরপরও একবারের জন্যও রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রীর অভিবাদন পেলেন না সুনীল। কোনও কথাই শোনা গেল না ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহাসিক জয় নিয়ে। উল্টে সুনীলদেরই হাতজোড় করতে হয়। বলতে হয়, ‘মাঠে আসুন, আমাদের সমর্থন করুন’। আর অন্যদিকে কলার উচু করেই ঐতিহাসিক হয়ে যান বিরাটরা।