এক `কাশ্মীর কি কলি`-র স্বপ্নপূরণের কাহিনী!
গ্রেনেড, মর্টার, বুলেটের মুহুর্মুহু বিভীষিকা। আতঙ্কের শব্দ-দানবের অত্যাচারে থরথর করে কেঁপে ওঠে উপত্যকার বুক। সন্ত্রাসের রক্তচক্ষুর আড়ালে ডুকরে ওঠে শৈশব। ভূস্বর্গের পাকদণ্ডীতে ঘুরপাক খায় আতঙ্কের প্রতিধ্বনি। তবুও নিসর্গ গলিপথে জন্ম নিয়েছিল জেদ। রক্তক্ষয়ের সেই সব সরঞ্জামের মাঝ থেকে উঠে আসে লাল টুকটুকে ক্রিকেট বলটা।
কমলিকা সেনগুপ্ত
সমাজের গোঁড়ামি বারবার চেয়েছিল শিকল পরাতে। পরিবারের অন্দর থেকেই এসেছে বাধা। চৌকাঠের বাইরে পা রাখলে প্রাণনাশের হুমকি এসেছে। তবুও থামেনি ক্রিকেট। লক্ষ্যে অবিচল থেকে ব্যাট বল হাতে কলকাতা পৌছে গিয়েছেন তিনি। ঝুলন গোস্বামীর হাত ধরে ইকরা এগিয়ে চলছেন নিশানার দিকে।
গ্রেনেড, মর্টার, বুলেটের মুহুর্মুহু বিভীষিকা। আতঙ্কের শব্দ-দানবের অত্যাচারে থরথর করে কেঁপে ওঠে উপত্যকার বুক। সন্ত্রাসের রক্তচক্ষুর আড়ালে ডুকরে ওঠে শৈশব। ভূস্বর্গের পাকদণ্ডীতে ঘুরপাক খায় আতঙ্কের প্রতিধ্বনি। তবুও নিসর্গ গলিপথে জন্ম নিয়েছিল জেদ। রক্তক্ষয়ের সেই সব সরঞ্জামের মাঝ থেকে উঠে আসে লাল টুকটুকে ক্রিকেট বলটা। এ যেন এক অন্য বারামুলা। কমেন্ট্রি বক্সের ঘেরাটোপ থেকে সেই বজ্রনির্ঘোষ জানান দিয়ে ওঠে এক অবিস্মরণীয় বীরগাথার। জেদের ভয়ঙ্কর আউটসুইঙ্গার যখন ছোবল মারে ব্যাটের কানা, তখন আরও শক্ত হয় মুঠি।
কাশ্মীরের বাগিচায় ফুটেছে আশার গোলাপ। হিজাব আর বোরখার আড়ালে কেটে যাওয়া জীবন নয়। চুলা-চাক্কি করে ফুরিয়ে যাওয়া দিনরাত নয়। সংস্কারের বেড়া দুমড়ে-মুচড়ে 'কাশ্মীর কি কলি'র জেদের জিত। বারুদের গন্ধও যেন হার মেনেছে ইকরার দৃঢ়তার কাছে।
বয়স যত বেড়েছে, বেড়েছে শক্তি। সঙ্গে বেড়েছে বলের গতি। নজরে পড়ে আদিত্য অ্যাকাডেমির। যার মেন্টর ঝুলন গোস্বামী। টিম ইন্ডিয়ার জার্সি পরার স্বপ্ন তাড়া করতে করতে ঘর-পরিবার ছেড়ে কলকাতায় পা রাখে ইকরা। ২০১৪-য় বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলে জায়গা পায় সে। পরের ৩ বছর টানা জাতীয়, রাজ্য, জেলা, আঞ্চলিক মিলিয়ে একের পর এক টুর্নামেন্টে খেলেছে ইকরা। এখনও পর্যন্ত সেরা স্পেল জাতীয় পর্যায়ে তেলেঙ্গানার বিরুদ্ধে ম্যাচে। ৪ ওভারে ৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট।
এরপরই ঠিক হয় সিডনিতে মাইকেল ক্লার্কের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেবে ইকরা। ক্রিকেট ধ্যানে মগ্ন সপ্তদশী কাশ্মীরি কন্যার প্রিয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। প্রিয় পেসার মহম্মদ আমের। বিরাটকে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটা চিঠিও লিখে ফেলেছে সে। ''আমাকে তোমরা খেলা শেখাও। ইন্ডিয়া টিমে খেলতেই হবে আমাকে।'' প্রিয় ঝুলনদিদির মুখেও তাই প্রশংসা। 'হাল ছেড়ো না ইকরা। পারবে। তুমিই পারবে।'