সব্যসাচী বাগচী: ঠিক যেন ইডেন গার্ডেন্সে সেই ঐতিহাসিক সেমি ফাইনালের রিমেক। ২০২০ সালে রঞ্জি ট্রফির সেমি ফাইনালে তারকাখচিত কর্নাটককে ঠিক এ ভাবেই গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বঙ্গব্রিগেড। তফাৎ শুধু সেটা ছিল লাল বলের খেলা। আর এ বার ফরম্যাট সাদা বলের। তাও আবার মারকাটারি টি-টোয়েন্টি। সেই ম্যাচে কেএল রাহুল, মণীশ পান্ডে, দেবদূত পাড্ডিকল, করুণ নায়ার থাকলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ১৭৪ রানে ম্যাচ জিতে মাঠ ছেড়েছিল অভিমন্যু ঈশ্বরণের বাংলা। আর মঙ্গলবার গুয়াহাটির বারসাপাড়া স্টেডিয়ামে জয় এল সাত উইকেটে। চাপের মুখে চুপসে না গিয়ে এই জয়ের জন্য মিলল চলতি সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি (Syed Mushtaq Ali T20) প্রতিযোগিতার নক-আউটে খেলার ছাড়পত্র। তাই দুই বছর আগের সেই রোমহর্ষক ম্যাচ নিয়ে এখনও বুঁদ হেড কোচ অরুণ লাল (Arun Lal)। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ম্যাচের শেষে টিম হোটেলে ফিরে টেলিফোনে জি ২৪ ঘণ্টাকে অরুণ লাল বলেন, "এই প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই ছেলেগুলো দারুণ উজ্জীবিত ছিল। তাই ওদের প্রতি ম্যাচের আগে বিশেষ কোনও বার্তা দিতে হয়নি। বিশেষ বার্তা দিতে হয়নি বলেই মুম্বই ৮২ রানে বরোদাকে হারালেও আমাদের সাজঘর একেবারে শান্ত ছিল। জানতাম জিতলেই পরের রাউন্ডে চলে যাব। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি সেই দুই বছর আগের রঞ্জি ফাইনালের সঙ্গে এ বারের আগ্রাসী মনোভাবের খুব মিল পাচ্ছি। সবাই একজোট হয়ে বিশেষ কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করছে। আর এই মানসিকতাই দরকার। তবে এখনও দিল্লি বহুত দূর। তাই অতি উৎসাহী হতে চাইছি না।" 


আরও পড়ুন: Syed Mushtaq Ali T20: অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, শক্তিশালী কর্নাটককে সাত উইকেটে হেলায় হারিয়ে নক-আউটে বাংলা


শুরু থেকেই এই গ্রুপকে বলা হচ্ছিল মারণ গ্রুপ। 'গ্রুপ অফ ডেথ'। কারণ, ছয় দলের মধ্যে ছিল মুম্বই, কর্নাটক, গতবারের রানার্স বরোদা ও বাংলা। গ্রুপ থেকে সর্বোচ্চ দুই দলের কোয়ার্টার ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করার সম্ভাবনা ছিল। এর মধ্যে আবার মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে লিগের ম্যাচে ১০ রানে হেরে নিজেদের কাজ কঠিন করে তুলেছিল সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের (Sudip Chatterjee)দল।  



তবে শুধু বোলিং নয়। এ দিন বঙ্গ শিবিরকে আক্রমণাত্মক করে তুলেছিল দুটি অনবদ্য ক্যাচ। অরুণ লাল যেন ধারাবিবরণীর ঘটনা তুলে ধরলেন। বললেন, "মুকেশের প্রথম ওভারের তৃতীয় বল ময়ঙ্ক আগরওয়ালের ব্যাটের বাইরের দিকে লেগে উইকেটের পিছন দিকে উড়ে যাচ্ছিল। অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় ডানদিকে শরীর শূন্যে ভাসিয়ে ক্যাচ ধরল ঋদ্ধিমান। সেই ওভারেরই শেষ বলে মুকেশের বলে খোঁচা দিল দেবদত্ত। সেই ক্যাচ নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়েছিল ঋদ্ধি ও প্রথম স্লিপে থাকা ঋত্বিক রায়চৌধুরী । শরীর শূন্যে ডানদিকে ভাসিয়ে ক্যাচটি ধরে ঋত্বিক। অনেক বছর ক্রিকেট খেলেছি। অনেক ক্রিকেট দেখেছি। কিন্তু এমন ক্যাচ খুব কম দেখেছি। সত্যি বলতে ওই দুটো ক্যাচ গোটা দলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বদলে দিয়েছিল।" 


শুধু বাইশ গজে লড়াই করা এগারো জন যোদ্ধা নন, রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা ছেলেদেরও প্রশংসা করলেন 'ফাইটার লাল'। তিনি যোগ করেন, "ক্রিকেটের নিয়মে মাঠে এগারো জন থাকলেও মাঠের বাইরে থাকা বাকিরা সবাই অনবরত একযোগে চিৎকার করে যাচ্ছে। সবাই নিজের সাধ্যমতো দলের ভাল ফলের জন্য লড়াই করছে। আর আমার কাছে এটাই তৃপ্তির। এ বারের মরসুম শুরু হওয়ার আগে আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি। এর সুফল পেতে শুরুও করেছি। তবে থেমে থাকলে চলবে না।"  


আরও পড়ুন: Indian Cricket: দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলার Abhimanyu Easwaran, Ishan Porel


গত বছর সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি ও বিজয় হাজারে দলে থাকলেও একটিও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সুদীপ। তবে এ বার সেই সুদীপ সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে অর্ধ শতরান করে দলকে জেতালেও, এ দিন কম রানে ফিরে যান। তবে সেটা নিয়ে আক্ষেপ করতে রাজি নন অধিনায়ক। বরং দলগত সাফল্যের কথা শোনালেন। 


সুদীপ বলছেন, "মুকেশের কাছে প্রথম ওভারে ওরা ধাক্কা খাওয়ার পরেও কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। মণীশ পান্ডে থেকে গেলে খেলা ঘুরে যেত। তবে শাহবাজের বলে ঋদ্ধি দা ওকে স্টাম্প আউট করতেই যেন স্বস্তি পেলাম। বাকি কাজটা অভিমন্যু সেরে ফেলল। এতেই বোঝা যায় যে আমরা কতটা তৈরি হয়ে এ বার মাঠে নেমেছি।" 


ক্রিকেট ঘোর অনিশ্চয়তার খেলা। তাই পরের ম্যাচেই ফল উল্টো হতে পারে। তবে এই বাংলা দলের সবাই যে বাইশ গজের যুদ্ধে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছে সেটা নিয়ে কোচ ও অধিনায়কের মনে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। বাকিটা তো ক্রিকেট দেবতা জানেন। আর তাছাড়া অরুণ লাল তো বলেই দিয়েছেন যে 'দিল্লি বহুত দূর'।


(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)