আইন অনুযায়ী তাসকিনকে নির্বাসনে পাঠিয়ে ঠিক করেছে আইসিসি?
এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বের ক্রিকেটে সবথেকে আলোচ্য বিষয় সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশন। আর এ ক্ষেত্রে যে দুটো নাম জড়িয়েছে, তা হলো বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ এবং আরাফত সানি। তবু, সানির নামের থেকে অনেক বেশি আলোচনা করা হচ্ছে তাসকিন আহমেদকে নিয়ে। এর কারণও খুব পরিষ্কার। তার কারণ, মাত্র অল্প সময়ের কেরিয়ারেও বাংলাদেশ দলের অন্যতম শক্তি হয়ে উঠেছে তাসকিন আহমেদের বোলিং। বাংলাদেশ খেলছেও টি২০ বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে। এরকম একটা বড় প্রতিযোগিতায় খেলার মাঝপথেই যদি দলের অন্যতম সেরা বোলারকে সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের জন্য নির্বাসন করা হয়, তাহলে তো বাংলাদেশের লাগবেই। এমন ঘটনা যেকোনও দেশের ক্ষেত্রে ঘটলে, তাদের ক্ষেত্রেও সমস্যা হতো। এবার আবেগের জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে আসল প্রসঙ্গে চলে আসা যাক।
তাসকিনের বোলিং অ্যাকশান দেখে উপর উপর বোঝার খুব একটা উপায় নেই যে, তিনি বল ছুঁড়ছেন। বরং, লসিথ মালিঙ্গা, জশপ্রীত বুমরাহ, আনসারিদের বোলিং অ্যাকশন দেখেই সন্দেহজনক মনে হয়, কখনও কখনও সাদা চোখেই। কিন্তু তাসকিনের ক্ষেত্রে মোটেই এরকম নয়। বরং, বলা যেতে পারে, তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন তুলনায় অনেক বেশি পরিষ্কার। তার আরও একটা বড় কারণ, তাসকিন বল করার সময় যখন ছোটেন তখন তাঁর হাতের বল, তাঁর শরীর থেকে অনেকটা দূরে থাকে। এবং সিমের কোন জায়গায় তিনি আঙুল রেখেছেন, সেটাও পুরোপুরি উন্মুক্ত থাকে। মানে, আপনি যদি কপিল দেবের বোলিং অ্যাকশনকেই আদর্শ মানেন, তাহলে তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন একেবারে উল্টো কথা বলবে।
কিন্তু বল কীভাবে ধরা হল, সেটা দিয়ে বোঝা যায় না, বল ছোঁড়া হচ্ছে নাকি হচ্ছে না। এরজন্য আইসিসির একদম পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়ে নিয়ম করা আছে। আইসিসি-র সেই নিয়মটাই একবার দেখে নেওয়া যাক। তার বড় কারণ, বাংলাদেশ শুরু থেকেই বলার চেষ্টা করছে, যে তাসকিনের সঙ্গে একেবারেই ঠিক করেনি আইসিসি। এবং এক্ষেত্রে ভারতীয় বোর্ডেরও কলকাঠি দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা। অবশ্য এই বক্তব্যগুলো সবটাই বাংলাদেশের আম ক্রিকেটপ্রেমীদের। কোনও অফিসিয়াল বক্তব্য নয়। দুই, কোনও দেশই তাদের অন্যতম সেরা বোলারের এমন আচমকা নির্বাসন মেনে নিতে পারবে না। তাই বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীদের এই আবেগ এবং বক্তব্য বোধগম্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও, কোনও কিছুকে ঠিক বা ভুল বলতে গেলে, তার যুক্তিগুলোও দেখে নেওয়া দরকার। আর এটা অবশ্যই হাস্যকর যে, তাসকিনের বিষয়েও বিসিসিআই কলকাঠি নেড়েছে!
এবার আসি আসিসি-র নিয়মে। আইসিসি-র Law 24.3 (Definition of fair delivery — the arm) এ বলা রয়েছে, 'A ball is fairly delivered in respect of the arm if, once the bowler’s arm has reached the level of the shoulder in the delivery swing, the elbow joint is not straightened partially or completely from that point until the ball has left the hand. This definition shall not debar a bowler from flexing or rotating the wrist in the delivery swing.' অর্থাত্ যদি কোনও বোলার তাঁর বল ডেলিভারি করার সময়, যখন সে তাঁর কনুই, কাঁধের সমান উচ্চতায় তুলে ফেলেছে, সেই সময় তাঁর কনুই বেঁকে থাকে। ওই কাঁধের উচ্চতায় কনুই বাঁকা অবস্থায় থাকা থেকে, বলটি ছাড়া পর্যন্ত কোনও সময়ই যেন তাঁর হাত একেবারে সোজা না হয়ে যায়। অর্থাত্ কাঁধের সমান উচ্চতায় যদি হাত বেঁকে থাকে, তাহলে সেই থেকে বলটা ছাড়ার সময় পর্যন্ত হাত যেন একেবারে সোজা না হয়ে যায়।
এই নিয়ম মানলে আপনাকে সবার আগে তাসকিনের বল করার ছবি দেখতে হবে খুঁটিয়ে। সেই ছবি ভিডিও হতে হবে। তারপর সেগুলোকে স্লো করে দেখে নিতে হবে। বিশেষ করে এই টি২০ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ড ম্যাচেই তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন দেখুন। সেখানে কিন্তু যদি আপনি খুঁটিয়ে দেখেন, তাহলে বলতেই হচ্ছে, তাসকিন সন্দেহের উর্ধে নয়। অর্থাত্ আইসিসি অকারণে তাঁকে বল করা আটকাচ্ছে না। এই বিষয়ে আরও একটা পরামর্শ দিতে হবে। বোলিং সন্দেহজনক লাগাটা কিন্তু দৃষ্টিনন্দন বোলিং ডেলিভারি কিংবা একটু বদখত ডেলিভারি অনুযায়ী হয় না। কারণ, কিছু বোলারকে বল করতে আপনি যেমন দেখেই মনে করেন যে, ইস বোলিং ডেলিভারিটা কেমন যেন। মানে, সুন্দর নয়। এর মানে, এই নয় যে, সে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বল করছে। আপনাকে সঠিক নিয়ম অনুযায়ীই বল করতে হবে।
ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে অবশ্যই চাইবো, তাসকিন যেন তাড়াতাড়ি তাঁর বোলিং অ্যাকশন সামান্য শুধরে নেন। এবং নির্বাসন কাটিয়ে এসে ফের নিজের দল এবং দেশের হয়ে ভালো বল করেন। সাফল্য পান। কিন্তু তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন একেবারে সন্দেহের উর্ধে এমনটা মোটেই নয়। তাই এই ছবিগুলো দেওয়া হল। আপনাদের আবেগে ধাক্কা লাগলে, তা বোধগম্য। সেইজন্য প্রার্থনাও থাকলো, তাসকিনের জন্য। কিন্তু এই কথাগুলো বলারও দরকার।