সচিন রমেশ তেন্ডুল্কার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, ভানগিপুরাপু ভেঙ্কট সাই লক্ষণ-এই চার নক্ষত্ররা কেউই সেরা নন। 'গ্যাং অব ফোরের থেকে' অন্তত একশো মাইল এগিয়ে ডেভিড ওয়ার্নার। একবার পরিসংখ্যানে চোখ বুলিয়ে নিন, তারপর হবে তথ্য আর তার পর্যালোচনা।  


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

সচিন রমেশ তেন্ডুল্কার। ক্রিকেট ঈশ্বর। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের নক্ষত্র। শুরু থেকে শেষ, মুম্বই, মুম্বই এবং মুম্বই। 
আইপিএল রেকর্ড-
আইপিএল অভিষেক- ১৪ মে, ২০০৮। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। বিপক্ষ-চেন্নাই সুপার কিংস। 
আইপিএলের শেষ ম্যাচ- ১৩ মে, ২০১৩। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। বিপক্ষ-সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।


মোট ম্যাচ  মোট রান  সর্বোচ্চ  উইকেট
৭৮     ২৩৩৪ ১০০

 



সৌরভ গাঙ্গুলী। 'গড অব অফসাইড'। প্রিন্স অব ক্যালকাটা। কলকাতার মহারাজ। কলকাতা হারিয়ে পুনেতে সাহারা পেয়ে আইপিএলে 'অন'।   
আইপিএল রেকর্ড-
আইপিএল অভিষেক- ১৮ এপ্রিল, ২০০৮। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম। বিপক্ষ- রয়্যাল চ্যালাঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। 
আইপিএলের শেষ ম্যাচ- ১৯ মে, ২০১২। মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম। বিপক্ষ-কলকাতা নাইট রাইডার্স।


মোট ম্যাচ  মোট রান  সর্বোচ্চ উইকেট
৫৯       ১৩৩৯   ৯১ ১০

 


রাহুল দ্রাবিড়। 'দ্য ওয়াল'। বেঙ্গালুরুর প্রাচীর। পরে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলন, অধিনায়কও ছিলেন। 
আইপিএল রেকর্ড-
আইপিএল অভিষেক- ১৮ এপ্রিল, ২০০৮। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম। বিপক্ষ-কলকাতা নাইট রাইডার্স।
আইপিএলের শেষ ম্যাচ- ২৪ মে, ২০১৩। ইডেন গার্ডেন্স। বিপক্ষ-মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।


মোট ম্যাচ মোট রান সর্বোচ্চ উইকেট 
৮৯   ২১৭৪  ৭৫   ০ 

 


 


ভানগিপুরাপু ভেঙ্কট সাই লক্ষণ। ওরফে ভিভিএস লক্ষণ। ব্যাটিংয়ে মোচর আর শিল্পের কারিগর। হায়দরাবাদের 'কুল ক্যাপ্টেন'। এখন মেন্টর।   
আইপিল রেকর্ড- 
আইপিএল অভিষেক- ২০ এপ্রিল, ২০০৮।  ইডেন গার্ডেন্স। বিপক্ষ-কলকাতা নাইট রাইডার্স।
আইপিএলের শেষ ম্যাচ- ২৪ এপ্রিল, ২০১১। সোয়াই মানসিং স্টেডিয়াম। বিপক্ষ-রাজস্থান রয়্যালস।


মোট ম্যাচ  মোট রান  সর্বোচ্চ  উইকেট
২০    ২৮২    ৫২  

 


 



 


ডেভিড ওয়ার্নার। 'হার্ড হিটার' ওপেনার। এখন আইপিএলের সেরা ক্যাপ্টেনদের একজন। হায়দরাবাদের ক্যাপ্টেন। অভিষেক দিল্লির হয়ে এখন লক্ষণের হায়দরাবাদের ব্যাটন ওয়ার্নারের হাতে।   
আইপিল রেকর্ড- 
আইপিএল অভিষেক- ২ মে, ২০০৯।  দ্য ওয়ন্ডারস স্টেডিয়াম (দক্ষিণ আফ্রিকা)। বিপক্ষ-চেন্নাই সুপার কিংস। 
আইপিএলে এখনও খেলছেন- (আপাতত শেষ ম্যাচ) ২৫ এপ্রিল, ২০১৬। ফিরোজ শা কোটলা। বিপক্ষ-কলকাতা নাইট রাইডার্স। 


মোট ম্যাচ মোট রান  সর্বোচ্চ  উইকেট  গড়  স্ট্রাইক রেট 
৯৮   ৩২১১ ১০৯  ৩৭.০১  ১৪১.১৯

 


 


৯টা আইপিএলে সৌরভ, দ্রাবিড়-লক্ষণ তিনে মিলে যা রান করেছেন (৩৭৯৫), তার খুব কাছেই ওয়ার্নার (৩২১১)। সচিন (২৩৩৪)-সৌরভ( ১৩৩৯), দ্রাবিড়(২১৭৪ )-লক্ষণ(২৮২)- 'গ্যাং অব ফোরের' মিলিত রান- ৫৮৬৯, ম্যাচ-২৪৬। ডেবিড ওয়ার্নার একা- ৩২১১, ম্যাচ-৯৮। গোটা আইপিলে সব থেকে বেশি রানের প্রথম দশের তালিকায় একমাত্র অজি ক্রিকেটার ডেবিড ওয়ার্নার। এই পরিসংখানেও আছে চমক। এই দশে ওয়ার্নার দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান যিনি আইপিএলে মাত্র ৯৭ ম্যাচ খেলেই তিনটি 'হাজারদুয়ারি' ঘুরে এসেছেন। এই নজিরে প্রথম ক্রিস গেইল। যিনি ৯১ ম্যাচে রান করেছেন ৩৩৫০। স্ট্রাইক রেটেও আইপিএলের সেরাদের মধ্যে প্রথম দশে নেই সচিন-সৌরভ, দ্রাবিড়-লক্ষণদের মধ্যে কেউই। ৩৭.০১ গড় আর ১৪১.১৯ স্ট্রাইক রেট নিয়ে সেরাদের তালিকায় সেই ওয়ার্নার। স্ট্রাইক রেটে ওয়ার্নারকে বেগ দিয়েছেন একমাত্র যে ভারতীয় তিনি 'নজফগরের নবাব' বীরেন্দ্র সেওয়াগ (স্ট্রাইক রেট ১৫৫.৪৪)। 


পারফরম্যান্স আর পরিসংখ্যানের বিচারে একটা যুক্তি কি আছে যেখানে ওয়ার্নারকে সরিয়ে বসিয়ে দেওয়া যায় গ্যাং অব ফোরের কোনও একজনকে? এতো না হয় গেল ব্যাটসম্যান ওয়ার্নার। 


অধিনায়ক ওয়ার্নার কেমন?
দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে খেলেছেন অনেক দিন। ব্যাটিংয়ে দাপটও ছিল, কিন্তু সফল হয়নি তার দল। হায়দরাবাদের ব্যাটন এবার অস্ট্রেলীয় ক্যাপ্টেনের হাতে। ক্যাপ্টেন হয়েই দলকে সেমিতে নিয়ে গেলেন অজি নেতা। সামনে গুজরাট লায়ন্স। জিতলে ফাইনালে মুখোমুখি হবে বেঙ্গালুরু। সচিন-সৌরভ, দ্রাবিড়-লক্ষণ যখন যে দলে অধিনায়কত্ব করেছেন, সেবার তাঁদের দল সেমির গণ্ডিতেও পৌঁছায়নি। তবে এই চার নক্ষত্রদের মধ্যে সচিন এবং লক্ষণই সেই দুই তারকা যারা আইপিএলের চ্যাম্পিয়ন স্কোয়াডে ছিলেন বটে কিন্তু ক্যাপ্টেন ছিলেন না। 


আবার চোখ বুলিয়ে নিন এই পরিসংখ্যানে- 
ডেকান চার্জাস- ২০০৯ আইপিএল চ্যাম্পিয়ন- ক্যাপ্টেন- অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (দলে ছিলেন ভিভিএস লক্ষণ)
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স- ২০১৩ আইপিএল চ্যাম্পিয়ন-  ক্যাপ্টেন- রোহিত শর্মা (দলে ছিলেন সচিন তেন্ডুল্কার)


এবার এই তত্ত্বে আসুন, আইপিএলে একজন অজি অধিনায়ক কতটা সফল? 
প্রথম আইপিএল চ্যাম্পিয়ন- রাজস্থান রয়্যালস- ক্যাপ্টেন- শেন ওয়ার্ন
দ্বিতীয় আইপিএল চ্যাম্পিয়ন- ডেকান চার্জাস- ক্যাপ্টেন- অ্যাডাম গিলক্রিস্ট
আইপিএলে পাঞ্জাব একবারই ফাইনালে ওঠে এবং রানার্স হয়ে ফেরে। ক্যাপ্টেন আরও এক অজি। জর্জ বেইলি।

এবার আইপিএলের চতুর্থ অজি ক্যাপ্টেন হিসেবে ফাইনালে ডেভিড ওয়ার্নার আর তাঁর দল হায়দরাবাদ চ্যাম্পিয়ন হলে অবাক হবেন? যদি তা নাও হয়, তাও যুক্তি তক্কে  ভারতের সেরা চারের থেকে আইপিএলে একশো মাইল এগিয়েই থাকছেন ক্যাপ্টেন ওয়ার্নার। ব্যাটিং সাফল্যের দিকে তাকালে, আইপিএল নয়ে বিরাটের পর সেকেন্ড যে নাম আসে সেটিও- ডেভিড ওয়ার্নার। ১৫ ম্যাচে ৬৮৬ রান করে কমলা টুপির দ্বিতীয় দাবিদার 'ওয়ার্নার সাহেব'ই। 


ব্যাগি গ্রিনরা বরাবরই মেজাজি এবং নৃশংস মানসিকতায় বিশ্বাস করেন। ক্রিকেটের কালো অধ্যায়গুলোর জন্মও ব্যাগি গ্রিনরা দিয়েছেন। তবে অজি ঘরনার অন্য এক ছাঁচ ডেভিড ওয়ার্নার। উনি কেবল ব্যাটিংয়েই নৃশংস, ফিল্ডিংয়েও নজর কেরেছেন, কিন্তু নেতা ওয়ার্নার থকেছেন লুকিয়েই। ক্যাপ্টেন ওয়ার্নারের প্রশংসা খুব কম ক্রিকেট লেখিয়েদের কলমেই পাওয়া যায়।



অ্যাসেজ জয়ের পর ওয়ার্নারের ট্রফি নিয়ে ঘুমিয়ে থাকার দৃশ্যটা মনে আছে নিশ্চয়ই। আইপিএল নাইনের ট্রফিটার সঙ্গে যদি একই দৃশ্য দেখা যায়, তাহলে কি আর অবাক হওয়ার কিছু থাকবে? যুক্তি-তক্কে-গপ্পে এবং ধারে ও ভারে ভারতের সেরা চার বনাম এক, ডেভিড ওয়ার্নার। পাল্টা যুক্তিকে স্বাগত জানাই।



(পরিসংখ্যান- cricwindow, cricket99, iplt20, Sportskeeda, espncricinfo-থেকে প্রাপ্ত। নিজেও দেখে নিতে পারেন) এই ব্যাখ্যা আর যুক্তি পুরোটাই আইপিএল কেন্দ্রিক। পরিশেষে যেটা না বললেই নয়, 'Last but not the least', আমার ওয়ার্নার প্রেম একেবারেই ছিল না, সেদিন হল যেদিন স্বরূপ দা (স্বরূপ দত্ত) ওয়ার্নারের বিস্ময়ে আমাকে ডুবিয়ে দিলেন।