দিব্য়েন্দু সরকার: এক টানা দীর্ঘ প্রায় ৮ বছরের লড়াই বৃদ্ধ ৮১ বছরের প্রাক্তন শিক্ষকের।অবশেষে জয়। নানান প্রতিকূলতা, হুমকি, তাচ্ছিল্যকে উপেক্ষা করে শেষমেশ জয়। আর তাঁর জয়ে বহুল পরিমাণে উপকৃত এলাকার বাসিন্দারা। তার এই জয়ের পিছনে অন্যতম ও একমাত্র যিনি ছিলেন, তিনি আর কেউ নন, খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হ্যাঁ, অবাক হওয়ারই কথা। বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত এই মাস্টারের কথা শুনেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপরই সমস্ত বাধা শেষ। দুষ্টদের দমন। অভিষেকের এককথায় বৃদ্ধ মাস্টারের জয়! আশার আলো দেখতে পেলেন ওই পাড়ার মানুষরা। অভিষেকের জন্যই তারা পেলেন রাস্তা। 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কী ছিল ওই বৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত মাস্টারমশাইয়ের লড়াই? কী কী প্রতিকূলতা ও হুমকি তাঁর কপালে জুটেছিল? সেই ২০১৭ সাল থেকে লড়াই করে আসছিলেন আরামবাগের বাতানল গ্রাম পঞ্চায়েতের তেলুয়া গ্রামের গুপ্ত পাড়ার বৃদ্ধ লড়াকু মাস্টার নবকুমার গুপ্ত ও জয়া গুপ্ত। গ্রামের মূল রাস্তা থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। যাতায়াতের কোন রাস্তা-ই ছিল না। পুকুর পাড় দিয়ে, অপরের ভিটে বা জায়গা ডিঙিয়ে তাদের যেতে হত মূল রাস্তায়। বিভিন্ন সময়ে গালিগালাজও কপালে জুটেছিল। কিন্তু নিরুপায় হয়েই তাদের এইভাবেই যাতায়াত করতে হয়েছে। তাদের পাড়াটি ছিল একেবারেই পান্ডব বর্জিত। গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন। বলা যায় যে, সেই স্বাধীনতার পর থেকে তাদের পাড়াটি ছিল সমস্ত দিক দিয়েই বঞ্চিত।


অভিযোগ, সিপিএম করেনি। কারণ এই বৃদ্ধ মাস্টারের দাবি, তিনি অনেক বার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তারা করেনি। উলটে সিপিএমের নেতারা তাকে বলেছিলেন, কোনও কংগ্রেসির পাড়ায় রাস্তা করে দেওয়া হবে না। প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। কপালে জুটেছিল হুমকি। তখন রাস্তা করেনি সিপিএম। অসহায় বৃদ্ধ মাস্টার হতাশ হয়ে পড়েন। এরপর রাজ্যে পালাবদলের পর তৃণমূল সরকার গঠিত হয়। একটু আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন বৃদ্ধ মাস্টার। এরপর তিনি তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে আবেদন জানান। তাদের বাইরে যাওয়ার রাস্তাটি যদি করে দেওয়া যায়।সেখানে আশ্বাস পেলেও কোনও কাজেরক কাজ হয়নি। ফের আবেদন জানান। কিন্তু কেউ কোনও সহযোগিতা করেননি তাঁকে।


এমন কি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পর্যন্ত তাঁকে নিরাশ করে বলেছিলেন, এই রাস্তা করে দেওয়া হবে না। কেউ-ই পারবে না যদি না আমরা অনুমতি দিই। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও করে দিতে পারবেন না। এরপরই মাস্টারের লড়াই শুরু। তিনি তাঁর পাড়ার অবস্থার ছবিটা জানিয়ে, পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন গ্রামে  যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই, সেই ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা জানিয়ে নবান্নে চিঠি লেখেন। এরপর দিদিকে বলো-তে লেখেন। পর্যায়ক্রমে বিডিও, এসডিও, ডিএম, পঞ্চায়েত দফতর, গ্রামোন্নয়ন দফতর সহ একাধিক জায়গায় চিঠি লেখেন। তার উত্তরও পান। কিন্তু রাস্তা হয় না। বিডিও তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন, আপনার তো রাস্তা হয়ে গেছে। খাতায়-কলমে ৯ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। যা শুনে বৃদ্ধ মাস্টারের মাথায় হাত পড়ে। এক ছটাক মাটিও পড়েনি। অথচ সেই টাকা পকেটস্থ হয়ে গিয়েছে নেতাদের। বিডিও-কে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন। দেখা যায়, সত্যিই কোনও রাস্তা-ই হয়নি। এরপর আর কেউ খোঁজ নেয়নি।


এরপর পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জনসংযোগ করতে "তৃণমূলের নবজোয়ার" যাত্রায় বেরিয়ে ছিলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পালাক্রমে তিনি আরামবাগেও আসেন। আরামবাগের ভালিয়ায় আসার পর যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, সেই সময়ে তাঁর কনভয়ের সামনে, অভিষেকের গাড়ি সামনেই রাস্তায় শুয়ে পড়ে তাঁর গাড়ি আটকে দেন বৃদ্ধ মাস্টারমশাই। হইচই পড়ে যায়। অভিষেকের কানে পৌঁছয় বৃদ্ধ মাস্টারের কথা। গাড়ি থেকে নেমে অভিষেক সেই বৃদ্ধ মাস্টার নবকুমার গুপ্তের কাছে যান ও তাঁর কাছ থেকে গোটা ঘটনা জানেন। আশ্বাস দেন, খুব শিগগিরই রাস্তার কাজ হবে। আর যারা টাকা আত্মসাৎ করে কাজ করেনি, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এরপর দিনই সোজা জেলা পরিষদ ও ডিএম অফিস থেকে লোকজন আসেন। যাবতীয় তথ্য নিয়ে যান। স্কিম করে পাঠান। অবশেষে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জয় হয় ৮১ বছরের বৃদ্ধ মাস্টারমশাইয়ের। তৈরি হয়েছে রাস্তা। রাস্তা তৈরি হওয়ার জন্য বৃদ্ধ মাস্টারমশাই বার বার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান।


আরও পড়ুন, Resort in govt land: বৃদ্ধাশ্রমের ভোল বদলে বিলাসবহুল রিসর্ট! সরকারি জায়গায় কীভাবে চলছে এসব?



(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)