নিজস্ব প্রতিনিধি:  বেধড়ক মারে কাজ না হলে, লেলিয়ে দেওয়া হত কুকুর। আর্তনাদ চাপতে তারস্বরে বাজানো হত সাউন্ডবক্স। নেশা ছাড়াতে এটাই ‘ওষুধ’ ছিল  হালিসহরের নেশামুক্তি কেন্দ্র ‘উত্তরণ’-এর। বিশ্বজিত্ চক্রবর্তী নামে ওই কেন্দ্রের এক আবাসিকের মৃত্যু ঘিরে হালিসহরের ‘উত্তরণ’ এখন সংবাদ শিরোনামে। অভিযোগ, নেশা ছাড়াতে কেন্দ্রের কর্মীদের বেধড়ক মারেই মৃত্যু হয়েছে বিশ্বজিতের। তদন্তে নেমে পুলিসের হাতে উঠে এল চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

হালিসহর স্টেশনের পাশে জেটিয়াবাজার এলাকা। সেখানেই রাস্তার ধারের তিন তলার বাড়ির দশ বাই বারো ফুটের একটি ঘর, যার নাম ‘উত্তরণ’।  অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে, চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এই ঘরেই রাখা হয়েছিল ২৬জন যুবককে। সঙ্গে তাদের পাহারায় রাখা হত একটি কুকুরও।  নেশা ছাড়াতে বেশ কয়েকমাস ধরে এই কেন্দ্র ‘উত্তরণ’ই ঠিকানা ছিল বিশ্বজিতের।


আরও পড়ুন: বিমল গুরুংয়ের আসনে কি এবার বিনয় তামাং? জল্পনা তুঙ্গে


স্থানীয়দের কথা মতো, এই ঘর থেকে অনেকসময়ই চিত্কার শোনা যেত আবার কখনও তারস্বরে সাউন্ডবক্সে বাজত গান। বিষয়টিতে এর আগে কখনই খুব একটা বেশি আমল দেননি প্রতিবেশীরা। কিন্তু টনক নড়ে, সোমবার যখন আচমকাই বিশ্বজিতকে পাঁজাকোলা করে স্থানীয় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান ওই কেন্দ্রের কর্মীরা। চিকিত্সকরা বিশ্বজিতকে মৃত বলে ঘোষণা করার পরই ক্ষেপে ওঠেন স্থানীয়রা। অভিযোগ, বেধড়ক মারেই মৃত্যু হয়েছে বিশ্বজিতের। খবর দেওয়া হয় পুলিসে।


তদন্তে নেমে ওই কেন্দ্রেরই বাকি আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিস। তখনই উঠে আসে কীভাবে চলত ওই নেশামুক্তি কেন্দ্র। ৬ হাজার টাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে কেন্দ্রটি চালাতেন ছোটকা নামে পরিচিত এক ব্যক্তি। প্রত্যেক আবাসিকের কাছ থেকে পাঁচ-ছ’হাজার টাকা করে মাসিক ফি নিতেন তিনি। মাসে প্রায় এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকা মতো ফি-ই পেতেন ছোটকা। কিন্তু আবাসিকদের খাবার দেওয়া হত অত্যন্ত নিম্নমানের। শুধু তাই নয়, আবাসিকদের অভিযোগ, কোনও চিকিত্সক এসে কোনওদিন তাঁদের দেখেননি। কেন্দ্রের কর্মীরাই একটি ওষুধ দিতেন সকলকে। তাতে কাজ না হলেই চলত বেধড়ক মার। আর্তনাদ চাপতে তখন চালিয়ে দেওয়া হত সাউন্ডবক্স। তাতেও কাজ না হলে কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হত। মৃত্যুর দু’দিন আগেও বিশ্বজিতও একইভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। বিশ্বজিতের গায়ের একাধিক কালশিটে দাগ দেখে, সে ব্যাপারে একপ্রকার নিশ্চিত পুলিসও।


আরও পড়ুন: দু-এক দিনেই কি নামবে তাপমাত্রা? শীতের পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের


নেশামুক্তি কেন্দ্রের এই কীর্তি প্রকাশ্যে আসা মাত্রই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন আবাসিকদের আত্মীয়রা। আবাসিকদের বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।  ছোটকার খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিস। হালিসহরের এই ঘটনায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলি কি তাহলে এভাবেই চলছে? খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধা দেওয়ায় এদিন আক্রান্ত হতে হয় ২৪ ঘণ্টার সাংবাদিকদের।