অরূপ লাহা: চোপড়ার ছায়া এবার পূর্ব বর্ধমানে। আদালতে বিচারাধীন থাকা মামলার বিচারের জন্যে ডাকা হয়েছিল সালিশী সভা। সেই সালিশী সভায় হাজির না হওয়ার চরম মাশুল  গুনতে হচ্ছে বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলেকে। তাদের ব্যাপক মারধর করার পাশাপাশি খুনেরও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূল নেতার সাগরেদদের বিরুদ্ধে। প্রাণে মারার হুমকি শোনার পরেই প্রাণ বাঁচাতে ওই বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলে বাধ্য হয়েছেন নিজেদের ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন, Bolpur: বগটুইয়ের ছায়া বোলপুরে! ঘুমের মধ্যে পুড়ে গেল শিশু-সহ ৩, মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বাবা...


পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার কুবাজপুর গ্রামের এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদে স্বোচ্চার হয়েছে বিরোধীর। তারই মধ্যে ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় বৃদ্ধা দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। এমনকি তিনি তাঁদের উপর হওয়া হামলা ও আক্রমনের ঘটনা লিখিত ভাবে রাজ্য পুলিসের ডি-জি,জেলার পুলিস সুপার ও জেলাশাসককেও জানিয়েছেন।


জামালপুর ব্লকের চকদিঘী পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম কুবাজপুর। এই গ্রামেই বাড়ি কৃষিজীবী পরিবারের বৃদ্ধ দম্পতি শেখ বোরহান আলি ও সাহানারা বিবি’র। তাঁদের সঙ্গেই একই বাড়িতে থাকেন তাঁদের ছেলে শেখ বসির আলি। বৃদ্ধা সাহানারা মুখ্যমন্ত্রী-সহ পুলিস ও প্রশাসনের কর্তাদের জানিয়েছেন,’২০১৮ সালে তাঁর ছেলে বসির আলির সঙ্গে বর্ধমান থানা এলাকার এক তরুণীর বিয়ে হয়। কিন্তু ছেলের বিবাহিত জীবন সুখের হয় না।বৌমা তাঁর বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরে বৌমা ’বধূ নির্যাতনের’ অভিযোগ এনে মামলা করে। ওই মামলায় বর্ধমান সিজেএম আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে। এরপর বৌমা ’খোরপোষের’ মামলা করে। সেই মামলা এখন বর্ধমান আদালতের বিচারাধীনে রয়েছে। 


সাহানারা বিবির অভিযোগ,’আদালতে বিচারাধীন ওই মামলার বিচার এখন আদালতের বাইরে করতে চাইছেন তাঁদের এলাকার তৃণমূলের নেতা। সেই কথা জানাতে,’গত ১৩ জুন তাঁদের বাড়িতে আসে চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আজাদ রহমানের সাগরেদরা।তারা জানিয়ে যায়, “আমাদের বৌমার করা মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আজাদ রহমান চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস অফিসে বিচারসভা ডেকেছে। ১৪ জুন সেই বিচার সভায় আমাদের পরিবারের সবাইকে হাজির থাকতে হবে।’ আজাদ রহমানের সাগরেদরা ওই দিন এও জানিয়ে যায়, “আমরা যদি আজাদ রহমানের বিচার সভায় হাজির না হই, তাহলে তারা আমাদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করে, বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে। এমনকি আমাদের প্রাণে মেরে দেওয়া হবে বলেও তারা হুমকি দিয়ে যায়“। 


হুমকি পেয়েই ওই দিন সন্ধ্যায় বৃদ্ধা সাহানারা বিবির ছেলে শেখ বসির আলি জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সাহানারা বিবির কথা অনুযায়ী,“জীবনহানির শঙ্কায় তাঁরা কেউ ১৪ জুন চকদিঘীর তৃণমূল পার্টি অফিসে আজাদ রহমানের বিচার সভাতে যাননি। তার কারণে ওইদিন রাতেই লাঠি-সোটা ও ধারালো অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় আজাদ রহমানের ১২ জন সাগরেদ সহ আরও অনেকে। তারা বলতে থাকে,’আমরা শাসকের শাসন করতে এসেছি’। এই টুকু কথা বলেই তাঁর ছেলে বসির আলিকে ব্যাপক মারধর করে।ছেলেকে বাঁচাতে গেলে তাঁদেরকেও আক্রমণ করা হয়।


পুলিস তাঁদেরকে  উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে  নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করে  জখম বসিরকে বর্ধমান হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। থানা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ঘর বাড়ি, ফসল গবাদি পশু সব ফেলে বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে বলে সাহানারা বিবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, “প্রশাসন নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করলে তাঁদের আর বাড়ি ফেরা হবে না“।  বৃদ্ধার ছেলে বসির আলি জানিয়েছেন,“ভবঘুরে হয়ে অর্ধাহারে অনাহারে এখন তাঁদের দিন কাটাতে হচ্ছে। এই কারণে তাঁর বৃদ্ধ বাবা বোরহান আলি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।


মায়েরও শরীর ভালো যাচ্ছে না। তাঁদের চাষের জমির ফসল এখন জমিতে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। এই ভাবে চলতে থাকলে তাঁদের স্বপরিবার ’আত্মহত্যা’ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না“। চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ আজাদ রহমান সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন,“বসির আলির পরিবাকে আমি চিনি।তাদের যে মামলার বিচার আদালতে চলছে তার বিচারের জন্য আমি কোন বিচারসভা বা সালিশি সভা ডাকিনি। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি বসিরের পরিবারের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটছে সেটা গ্রাম্য বিবাদ জনিত ঘটনা। মিথ্যা করে ওই ঘটনার সঙ্গে আমার নাম জড়ানো হয়েছে“।  


সিপিএমের মহিলা সমিতির রাজ্য কমিটির সহ-সভানেত্রী ভারতী ঘোষাল বলেন,’কুবাজপুরের বৃদ্ধা সাহানারা বিবি যে অভিযোগ এনেছেন তা সত্যি মারাত্মক।ওই বৃদ্ধার আনা অভিযোগই প্রমাণ করেদিচ্ছে বাংলায় এখন আর আইনের শাসন নেই। একই ভাবে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি  মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র। তিনি বলেন, “জামালপুরের কুবাজপুরের বৃদ্ধ দম্পতি ও তাঁর ছেলের উপর বর্বরোচিত হামলা,আক্রমণ ও হুমকির ঘটনাই প্রমাণ দিচ্ছে,পশ্চিমবঙ্গে এখন আর আইনের শাসন নেই। এখন বঙ্গে তৃণমূলী তালিবানি শাসন’ চলছে“।



আরও পড়ুন, Primary TET Scam: এথিক্যাল হ্যাকারের সাহায্য নিক সিবিআই! প্রাথমিকের OMR-তথ্য উদ্ধারে কড়া আদালত...


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)