করোনা পরবর্তীতে নতুন রোগের কোপে শিশুরা, ফের ভয়ঙ্কর মহামারীর আশঙ্কায় স্বাস্থ্যমহল
সবমিলিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এই পরিস্থিতি। শিশুদের করোনা পরবর্তী এই অসুস্থতা নিয়ে তৈরি হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ স্টাডি রিপোর্ট। ডিসেম্বর তা স্বাস্থ্য ভবনে জমা পরার কথা।
তন্ময় প্রামাণিক: করোনা পরবর্তীতে শিশুদের নয়া অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। আগামিদিনে তা থেকে কার্যত মহামারী বা অতিমারির আশঙ্কাই করছেন চিকিৎসকমহল। কলকাতার একটি স্টাডি রিপোর্টে সম্প্রতি এমনই ইঙ্গিত মিলেছে। আশঙ্কিত হওয়ার পাশাপাশি ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই শহরের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ-সহ একাধিক সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য করোনা পরবর্তী শিশুদের অসুস্থতার মাত্রার বাড়ার হার নিয়ে নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রিয়ঙ্কর পাল বলছেন, "বিষয়টি চিন্তার। এবার অতিমারীর কোপে কি ছোটরা? বিভিন্ন স্টাডি রিপোর্টে তেমনি আশঙ্কার ইঙ্গিত মিলছে। আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে বাচ্চাদের অসুস্থতা নিয়ে। হতে পারে কোনও শিশু করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু কোনও লক্ষণ ছিল না। অসুস্থতাও ছিল না। ফলে জানতে পারেনি কেউ। এমন ঘটনার দুই-আড়াই বা তিন মাস পর সেই শিশু হঠাৎ করেই ফের অসুস্থ হচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনা টিকা নিয়ে অসুস্থ স্বেচ্ছাসেবক! অভিযোগ উড়িয়ে ১০০ কোটির মামলা সিরামের
তিনি আরও জানিয়েছে, "এ ক্ষেত্রে উপসর্গ বলতে প্রচন্ড জ্বর। কখনও কখনও গ্যাস্ট্রো সমস্যা অর্থাৎ ডায়রিয়া। কোনও কোনও গ্ল্যান্ড ফুলে যাচ্ছে। গায়ে ব়্যাস বেরোচ্ছে। মাল্টিঅর্গানেও প্রভাব ফেলছে। সময় মতো সঠিক চিকিৎসা করলে সেরে যাবে। কিন্তু একটু দেরি হলেই রোগটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রিয়ঙ্কর পাল আরও জানাচ্ছেন, 'এখনও পর্যন্ত অনেক শিশুই অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় আমাদের কাছে এসেছে। তাদের আইসিইউ বা ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। সতর্ক থেকে প্রথমেই ডায়াগনোসিস করতে পারলে এই বিপদ এড়ানো যাবে। জুলাই মাসে প্রথম আমরা এই ধরনের ঘটনা দেখেছিলাম আমাদের ইনস্টিটিউটে। তারপর থেকে গত ৫ মাসে প্রায় ২৬ জন শিশু করোনা পরবর্তী অসুস্থতা নিয়ে চিকিৎসাধীন। একই অবস্থা একাধিক সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালেও। এটা বলা যায় বাচ্চাদের আলাদা একটা এপিডেমিক।' সতর্কতা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসাই একমাত্র বাঁচার উপায় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইন্সটিউট অফ চাইল্ড হেলথের আরও এক বিশেষজ্ঞ সুমন পোদ্দার বলছোন, "হঠাৎ করে প্রচন্ড জ্বর, হার্টের সমস্যা অন্য অর্গানের সমস্যা নিয়ে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যাচ্ছে আগে ওই শিশু করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু কেউই বুঝতে পারেননি বা জানতে পারেননি। যে হারে শিশুদের অসুস্থতা বাড়ছে এই শহরে এবং এই রাজ্যে সেটা কিন্তু ইঙ্গিতপূর্ণ।"
আরও পড়ুন: মা করোনা আক্রান্ত, নবজাতক সংক্রমিত না হলেও তার দেহ মিলল কোভিড অ্যান্টিবডি
এমনই একটি ঘটনা মালদহের বাসিন্দা ১৬ বছরের স্বপ্নজিৎ পালের। তীব্র জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল সে। একাধিক চিকিৎসক দেখানো হয়। একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরই ফের অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। হৃদযন্ত্রের সমস্যা শুরু হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে তারা কলকাতায় আসেন।
স্বপ্নজিৎ-এর বাবা দীপঙ্কর বলেন, "একাধিক হাসপাতাল ঘুরে ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে ভর্তি করা হয় স্বপ্নজিৎকে। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, কয়েক মাস আগে ওর করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। তারপরেই এই অসুস্থতা। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছিল। তবে ছেলে প্রাণে বাঁচবে, আপাতত এটুকু জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।"
একই অভিজ্ঞতা ৯ বছরের শিশু শেখ রহমান পরিবারের। তীব্র জ্বর বেশ কিছুদিন ধরে। গায়ে চাকা চাকা দাগ। হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। ধরা পড়ে এর আগে রহমান করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু কোনও লক্ষণ ছিল না। অসুস্থ হয়নি। করোনার কারণেই ফের তার এই সমস্যা।
সবমিলিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এই পরিস্থিতি। শিশুদের করোনা পরবর্তী এই অসুস্থতা নিয়ে তৈরি হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ স্টাডি রিপোর্ট। ডিসেম্বর তা স্বাস্থ্য ভবনে জমা পরার কথা। সমীক্ষাতে এখনও পর্যন্ত শহর কলকাতার পাশাপাশি হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, ঝারগ্রাম, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, শিলিগুড়ি-সহ প্রায় গোটা রাজ্যের শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে।