অধীর রায় ও বিশ্বজিত্ সিংহ রায়


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

 লাদাখের ভারত-চিন সেনার সংঘর্ষ যেন আছড়ে পড়ল চন্দননগরে। লকডাউনের জেরে আগেই পেটে তালা পড়েছে বিশ্বখ্যাত আলোকশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ১২ হাজার কর্মীদের। সম্প্রতি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনতিতে চিন্তায় ঘুম ছুটেছে, এরপর কী হবে...   


প্রায় আড়াইশো বছর আগে ফরাসিদের হাত ধরে চন্দননগরের  আলোকশিল্পের সূত্রপাত । সে সময় ফ্রান্স থেকে আনা গ্যাসের আলো জগদ্ধাত্রী পুজোতে ব্যবহার হত। বলা যায়, চন্দননগর থেকেই সেই প্রথম পুজোয় আলোর ব্যবহারের সূচনা। সময়ের সঙ্গে বদল হতে শুরু করে প্রযুক্তি। বদলায় আলোর চেহারাও। গ্যাসের আলোর জায়গায় এল বিদ্যুতের ব্লাভের মালা। ধীরে ধীরে আলোকসজ্জায় লাগে আধুনিকতার ছোঁয়া । এখন এক দশকের বেশি সময় ধরে "এল ই ডি" আলোর ব্যবহার হচ্ছে। ভারত তো বটেই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে চন্দননগেরর এই আলোক সজ্জা। লকডাউনের জেরে আলোকশিল্পের ভবিষ্যত আজ অন্ধকার।



**  আলোকশিল্পে অশনি সংকেত


এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষভাবে ১২ হাজার কর্মী এবং পরোক্ষভাবে গোটা হুগলি জুড়ে ৫০ হাজার কর্মী। চন্দননগরের আলোকশিল্পের সব কাঁচামাল আসে চিন থেকে। লকডাউনে সাতমাস ধরে আলো শিল্পের কাঁচামালের আমদানি বন্ধ। করোনার আঁতুড়ঘর চিন । বিশ্বব্যাপী এই মহামারীর জন্য চিনকে সরাসরি দায়ী করছে গোটা বিশ্ব। বিশ্বব্যাপী চিনা দ্রব্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল বর্তমানে ভারত-চিন কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি। উত্তপ্ত সীমান্ত । যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। এই পরিস্থিতিতে আলোর আঁতুড়ঘরে নেমে আসতে চলেছে অন্ধকার ।


** আলোকশিল্পে চিনা যোগ


জগদ্ধাত্রী পুজোর পর থেকেই পরের বছরের সব পুজোর আলোকসজ্জার ভাবনা এবং পরিকল্পনা শুরু করে দেন চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা। চিন থেকে ফেব্রুয়ারি মাসেই দিল্লি হয়ে আলোকশিল্পের কাঁচামাল চন্দননগরে চলে আসে। মোট আমদানির ৭৮ শতাংশ মাল যায় চন্দননগরে। মার্চ মাস থেকে কাজ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু লকডাউনের জন্য ডিসেম্বর মাস থেকে কাঁচামাল পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে চিন। যার ফলে ভাবনা, ভাবনাতেই থেকে গেল। নতুন কোন উৎপাদন শুরু করা যায়নি। আলোকশিল্পের ব্যবসায়ী বাবু পাল জানান, "আমাদের সমস্ত মাল আসে চিন থেকে। লকডাউনের জন্য আমদানি বন্ধ। বিশেষ করে "এল ই ডি " লাইট। যদিও এই লাইট আমাদের দেশে বেঙ্গালুরু আর হায়দরাবাদে তৈরি হয়। কিন্তু চিনা মালের থেকে দেশীয় মালের দাম প্রায় সাড়ে পাঁচ গুণ বেশি। এছাড়া চিন যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেটা এখানে হয় না। কাজ পুরোপুরি বন্ধ। হাজার হাজার আলোকশিল্পী অনিশ্চয়তায় ভুগছে।"



**  ভারত-চিন কূটনৈতিক সম্পর্কের জের


করোনা চন্দননগরের আলোকশিল্পের ভবিষ্যতকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্নের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিতে চলেছে ভারত-চিন কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি। জানা যাচ্ছে চন্দননগরের ১২ হাজার কর্মীর ৮০ শতাংশ ইতিমধ্যেই পেটের টানে সবজি বিক্রি করছে। কেউ  বা দিনমজুরের কাজ করছে। আলোকশিল্পের কারিগর সুমাল্য অধিকারী বলেন, "এবার যদি দুর্গাপুজোয় সেইভাবে কাজ না হয় তাহলে সারা বছর খাব কি ?"



**  আলোকশিল্পে সিঁদুরে মেঘ


পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা। কারণ ইতিমধ্যেই দিল্লি, মুম্বই এবং অসমের সমস্ত পুজো কমিটি তাদের অর্ডার বাতিল করে দিয়েছে। তাদের এখন একমাত্র ভরসা কলকাতার পুজো। লকডাউন  , বিশ্বব্যাপী চিনা দ্রব্য বয়কটের ডাক এবং সর্বপরি ভারত-চিন কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি। এই ত্রিমুখী বিপর্যয় কাটিয়ে চন্দননগরের আলোকশিল্প কি ছন্দে ফিরবে  নাকি আড়াইশো বছরের পুরোনো এই শিল্পের আঁতুড়ঘরে অন্ধকার নেমে আসবে !!!