Loss of Crops: ক্ষতিপূরণ পাবেন কৃষকেরা, ক্ষতির হিসাব কষছে কৃষি দফতর...
Loss of Crops in Hooghly: রবিফসলের জমি জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। সঙ্গে চলছে শস্য বাঁচাতে মরণপণ লড়াইও। বিঘার পর বিঘা পিঁয়াজের ক্ষেত জলের তলায়। বাড়ির মহিলারা গ্রুপ লোন নিয়ে চাষাবাদ করেছিলেন। ফলে এখন তাঁদের মাথায় বড় ঋণের বোঝা।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মিগজাউমের প্রভাবে নিম্নচাপ আর তার জেরে অসময়ের বৃষ্টি--এতে হুগলি জেলায় চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আলু ও ধান নিয়ে উদ্বিগ্ন চাষিরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ভয়ের কিছু নেই, বিমার টাকা তাঁরা পাবেন। হুগলি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও আশ্বস্ত করা হয়েছে এই বলে যে, ক্ষতির হিসাব কষা হচ্ছে। অচিরেই ক্ষতিপূরণ পাবেন তাঁরা।
আরও পড়ুন; West Bengal Weather Update: দার্জিলিং কালিম্পংয়ে তুষারপাত! কলকাতায় হাড়-কাঁপানো ঠান্ডা...
জানা গিয়েছে, হুগলির পোলবা, দাদপুর, সিঙ্গুর, হরিপাল, ধনিয়াখালি, তারকেশ্বর-সহ জেলার ব্লকগুলিতে এই অকালবৃষ্টিতে চাষের জমিতে জল জমে। আলু চাষের মরসুমে অধিকাংশ জমিতে আলু বসানো হয়ে গিয়েছিল এমন সময় বৃষ্টিতে জমি ডুবে যাওয়ায় আলু বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চারদিন কেটে গিয়েছে বৃষ্টির পর। এখনও জমিতে জলকাদা। মাটি ভিজে থাকায় আলু বীজ নষ্ট হচ্ছে। মাটি শুকাতে আরও কয়েকদিন লাগবে। এই সময় চারা তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু জমিতে গাছের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। যেখানে গাছ বেরিয়েছে, তা বাঁচবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে চাষিরা। নতুন করে জমি তৈরি করে আবার আলু বসাতে সময় ও টাকা দুই-ই লাগবে। অনেক চাষি নতুন করে চাষ করতে পারবেন কি না, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন। ডিসেম্বরের ২০ তারিখ পর্যন্ত আলু বসানো হয় হুগলিতে। সেই চাষ পিছিয়ে গেলে ফলন মার খাবে। বীজ নষ্ট হয়েছে আবার আলু বসাতে হবে, এদিকে পাঞ্জাব বীজ প্রায় শেষ। এই সময় হিম ঘরে রাখা আলুও গত কয়েকদিন কম বেরিয়েছে। দামও বেড়েছে বস্তা-প্রতি ১২০ টাকা। এই সময় পুরোনো আলুর দাম বাড়ার কারণও অসময়ের বৃষ্টি বলছেন প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির তরফে লালু মুখোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভয়ের কিছু নেই বিমার টাকা পাবেন চাষিরা। বাস্তব হল, হুগলি জেলায় অনেক চাষি এখনও বিমার আওতায় আসেননি। যাঁরা ঋণ নিয়ে চাষ করেন তাঁদের ব্যাঙ্ক থেকেই বিমা করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই বিমার টাকা কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়েও সংশয়ে চাষিরা। আলুর পাশাপাশি অসমের বৃষ্টিতে আমন ধানেরও ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন চাষিরা। উঁচু জমির ধান তোলা হয়ে গেলেও অপেক্ষাকৃত নীচু জমির ধান এখনো জমিতে পড়ে রয়েছে। জলে সেই ধানের ক্ষতি হবে। হুগলি জেলা পরিষদের সভাধিপতি রঞ্জন ধাড়া বলেন, আলু ও ধানে ক্ষতি হয়েছে যছেষ্ট। তবে জেলার পুরো হিসাব এলে ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। চাষিরা ফসল বিমার সুবিধা যাতে পান সেটা দেখছি আমরা।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, হুগলিতে ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। এর সত্তর শতাংশ জমিতে আলু বসনোর কাজ হয়েছিল। আলুর ক্ষতি কতটা হয়েছে তার হিসাব কষা হচ্ছে। জমিতে নেমে কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা ঘুরে দেখছেন গোটা পরিস্থিতি।
হুগলি জেলা কৃষি উপ অধিকর্তা প্রিয়লাল মৃধা বলেন, হুগলিতে আলু এবং ধানে ক্ষতি হয়েছে। পুরো হিসাব এখনো আসেনি। ঠিক কতটা ক্ষতি, তা জানতে আরেকটু সময় লাগবে। কৃষকদের ফসল বিমার সময় ৩১ ডিসেম্বর থেকে আরও কিছুদিন বাড়নো হয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বৃষ্টির ঠিক আগে যাঁরা আলু বসিয়েছিলেন তাঁদের ক্ষতির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। পনরেো শতাংশ ধান তোলার কাজ বাকি ছিল, সেই ধানও নষ্ট হবে।
আরও পড়ুন; Sunderban Divas: সুন্দরবন দিবস! কেন বাদাবনকে ঘিরে উদযাপিত হয় একটি দিন?
এদিকে অকালবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত নদিয়ার চাকদহ ব্লকের বিভিন্ন এলাকার চাষিরা। এখনও পর্যন্ত অনেকেই জমির ধান ঘরে তুলতে পারেননি অনেক কৃষক। নদিয়া জেলার চাকদহ ব্লকের ঘেটুগাছি,মলিচা গড়, মানুষমারা গ্রাম এবং গঙ্গার তীরবর্তী চাদুরিয়া এলাকায় প্রচুর পরিমাণে আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে। এই সমস্ত এলাকার জমি উর্বর হওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে ধান, সর্ষে ও তিলের চাষ হয়। বৃষ্টির পরিমাণ এতটাই বেশি ছিল যে, পাকা ধান অনেকেই ঘরে তুলতে পারেনি। এখনও অনেক জায়গাতেই জমিতে জল দাঁড়িয়ে রয়েছে, এই সমস্ত চাষিদের অনেকেই প্রান্তিক শ্রেণিভুক্ত। অনেকেই সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলেন। কিন্তু এই অকালবর্ষণ তাঁদের আশায় জল ঢেলে দিল। একদিকে জমির ফসল জমিতেই নষ্ট হচ্ছে, অন্য দিকে কী ভাবে দেনার টাকা মেটাবেন তাঁরা সে চিন্তাতে আকুল। তাঁরাও কি ক্ষতিপূরণ পাবেন?