জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: উত্তর সিকিমে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে তিস্তা নদীতে সৃষ্টি হয়েছিল বিপুল জলোচ্ছ্বাস। বিপর্যয়ের প্রথম দিন থেকেই বিপন্ন হয়ে পড়েছে মাল ব্লকের বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের তিস্তাপারের প্রত্যন্ত সব গ্রাম। এর আগে আর একটি টোটোগাঁওয়ের বাড়ি ঘর, স্কুল, মন্দির সব জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি বিচার করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫০ টি পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ফের আর একটি গ্রাম চলে গেল জলের তলায়। তিস্তার তাণ্ডবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত আর একটি টোটোগাঁও। গ্রামটির চারিদিকে পলিমাটি ও জলকাদার পুরু আস্তরণ।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Purulia: ভেসে গেল সাঁকো, প্রাণ হাতে করে উত্তাল নদীস্রোতে পাড়ি গ্রামবাসীদের...


ক'দিন আগেও গ্রামের কাঁচা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চারিদিকে যেখানে সবুজ ধানখেত দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত, এখন সেখানে পলিমাটির চর। এখন সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নদীর স্রোতে ভেসে আসা গাছের গুঁড়ি-ডালপালা। ঘরবাড়িগুলো সব জনশূন্য। আপাতত গ্রামের প্রায় ৩৫০টি পরিবারের সবাই ঠাঁই নিয়েছেন প্রশাসনের তরফে খোলা তিনটি ত্রাণশিবিরে। রবিবার ঠা-ঠা রোদে জলকাদা ও পলিমাটির সোঁদা গন্ধ ভেসে আসছে নাকে। শুনশান গ্রামের পথঘাট। 


একটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তরফে জিতেন ছেত্রী, সীতারাম দাহাল বললেন-- গত প্রায় ৩০ বছর ধরে এই গ্রামে বসবাস। বুধবার ভোর হতে তখনও অনেক বাকি। রাত সাড়ে তিনটে থেকেই গ্রামের সবাই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়শিবিরের দিকে পা বাড়াতে শুরু করেন। গ্রামের গা ঘেঁষে তখন বয়ে চলেছে রুদ্রমূর্তিধারণকারী তিস্তা। ধীরে ধীরে সকাল হল, বেলা একটু বাড়তেই ১১ টা নাগাদ দেখি গ্রামের মধ্যে প্রবাহিত ছোট নদী রুঙডুঙ খোলায় ঘোলাজল আসতে শুরু করেছে! মুহূর্তের মধ্যে জলস্তর বাড়তে বাড়তে বিস্তীর্ণ চাষের জমি ডুবিয়ে বসতির দিকে এগিয়ে আসে।


জিতেন ছেত্রী, সীতারাম দাহাল আরও বলেন, বিপদ আচঁ করে ততক্ষণে পালাতে শুরু করি আমরা। রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত জলবন্দি অবস্থায় ছিল গোটা গ্রাম। তার পর জল নেমে যায়। ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। ধানখেত, বাড়িঘর, বাগান-- সব পলিমাটিতে ঢেকে গিয়েছে। বহু গ্রামবাসীর গবাদি পশু ভেসে গিয়েছে। ভেসে গিয়েছে আসবাব থেকে ঘরের বাসনপত্র সব।


মাল পরিমল মিত্র কলেজের ফাইনাল ইয়ারের পাঠরতা এলাকার এক তরুণী দিব্যা ছেত্রী বলেন, প্রায় ৪-৫ ফুট জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল গ্রাম জুড়ে। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলও প্রায় ডুবে যেতে বসেছিল। পাশেই পলিমাটিতে প্রায় ঢাকা পড়ে যাওয়া নিজেদের বন্ধ বাড়ি দেখিয়ে দিব্যার আক্ষেপ, কবে যে বাড়িতে ঢুকতে পারব? টোটগাঁওয়ের যেদিকে তাকানো যাচ্ছে, সেদিকেই শুধু কাদা জল আর মাটির আস্তরণ। এখানে যে কোনও গ্রাম ছিল, এখন তা বোঝাই মুশকিল!


বুধবার ভোর থেকেই নাওয়া-খাওয়া সব ভুলে গিয়েছেন এলাকার প্রাক্তন সেনাকর্মী  অনুপ শর্মা। টোটগাঁওয়ের মেঠো পথ ধরে ছুটেই চলেছে তাঁর মোটরসাইকেল। ছুটে চলেছেন বাড়ি-বাড়ি। ছুটে চলেছেন কলাগাইতি, ওয়াশাবাড়ি ও এলেনবাড়ি চা-বাগানের ত্রাণশিবিরগুলিতে। অনুপ বলেন, তিস্তাপারের পুরোপুরি অসংরক্ষিত পূর্ব টোটগাঁও দিয়ে তিস্তার জল গ্রামে ঢুকে রুঙডুঙ নদীতে মিশেছে। যে কারণে গ্রাম জুড়েই তাণ্ডবের চিহ্ন দেখা দিয়েছে। গ্রামের দিকে অনেকটাই এগিয়ে এসেছে তিস্তা। এলাকায় দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, একটি বাঁধ নির্মাণের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেটা হয়নি। তাই এত ক্ষতি হল গ্রামের। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, অবিলম্বে এই গ্রামে নদীবাঁধ তৈরি করা হোক।


আরও পড়ুন: West Bengal Weather Update: সবে মেঘ কেটেছে! জেনে নিন, পুজোর সময়ে কেমন থাকবে আবহাওয়া...


প্রত্যন্ত টোটগাঁও থেকে ফিরে আসার পথে প্রায় চার কিমি এগোনোর পরে এলেনবাড়ি চা-বাগান। ব্লক প্রশাসনের তরফে বুধবার সকাল থেকেই বাগানের প্রাথমিক স্কুলে খোলা হয়েছে অস্থায়ী ত্রাণশিবির। প্রায় ১০০ শিশু-সহ মোট ৫০০ জন এই শিবিরে রয়েছেন। দু'বেলা খাবারের ব্যবস্থা ছাড়াও জরুরি চিকিৎসা, পানীয়জল-সহ সমস্ত বন্দোবস্ত রয়েছে। সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ব্লক প্রশাসনের তরফে।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)