নিজস্ব প্রতিবেদন:  গল্প হলেও সত্যি! শ্রাদ্ধের আগের দিন হেঁটে ফিরলেন মৃত। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ব্যস্ত পরিবার। আত্মীয় স্বজনও আসতে শুরু করেছে। বাড়ির ছাদে সাদা কাপড়ের প্যান্ডেলও প্রায় শেষ। স্বজন হারানোর দুঃখে ছলছল করছে পরিবারের চোখ। এমন সময় হঠাৎ ফোন বাজল। বারাসাতের জি এন আর সি হাসপাতালের ফোন। যে হাসপাতালে বাড়ির কর্তা ভর্তি ছিলেন। ফোনের ওপাশ থেকে বলতে শোনা গেল, "আপনার রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছে, অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে বাড়ি পাঠানো হচ্ছে"।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

ফোন রাখতেই থ ব্যানার্জি পরিবার। ছেলে তখন শ্রাদ্ধের কাজে ব্যস্ত। চিরতরে হারিয়ে যাওয়া মানুষকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ প্রকাশ কীভাবে করতে হয় বুঝতে পারছিলেন না পরিবার। আনন্দে কেঁদে ফেলে তাঁরা। অপেক্ষা করতে থাকে অ্যাম্বুলেন্সের। বিশ্বাস করতে বেগ পেতে হয় তাঁদের। কারণ, হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে তাঁর সৎকার করেছিল ছেলে। হবিষ্যি খেয়ে নিয়ম কানুনের মধ্যে দিয়ে মনকে বুঝিয়েছে বাবা আর নেই। মৃত ব্যক্তি আর ফিরে আসে না। তাঁকে আর ছুঁয়ে দেখা যায় না। কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতি নিমেষে মিথ্যে হয়ে যাওয়াতে ছলছলে চোখে, হাসি ফুটেছে ব্যানার্জি পরিবারের। ঘটনাটি ঘটেছে বিরাটিতে। 



কিন্তু তাহলে কার দেহ দাহ করা হয়েছিল? 


খড়দহ থেকে বারাসাতের এক সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ১১  নভেম্বর ভর্তি করা হয় শিবদাস ব্যানার্জিকে। ১৩ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে বলা হয় মৃত্যু হয়েছে শিবদাসের। কিন্তু, করোনা বিধি মেনে দূর থেকে দেখানো হবে মৃতকে, হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে দাহ করা হবে। তাই হয়। 


এই ঘটনার সমান্তরালে চলতে থাকে আরও একটি ঘটনা। মোহিনীমোহন মুখার্জি পরিবারকে ফোন করে ওই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল জানায় তাদের রোগী ভাল হচ্ছে। রোজই ফোন করে খবর নেয় পরিবার। ফোনের ওপার থেকে প্রত্যেকবারই জানান হয়, রোগী একটু একটু করে ভালো হচ্ছে। পরিবার ভাবতে বসেছিল, করোনাকে প্রায় জয় করেই নিয়েছেন মোহিনীমোহন মুখার্জি। কিন্তু ঘটনা বাঁক খায় শুক্রবার। হঠাৎ হাসপাতাল থেকে মুখার্জি পরিবারে ফোন করে বলা হয় রোগী সুস্থ বাড়ি ফিরছে। অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার পর রোগী অ্যাম্বুলেন্সের চালককে বলেন বিরাটি যাব, মুখার্মীজি পরিবার বলেন পলতা।  এরপরই তারা দেখেন রোগী তাদের নয়। তখনই, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সত্য উদঘাটন হয়। ১৩ নভেম্বর যিনি মারা গিয়েছিলেন তিনি হলেন মোহিনীমোহন মুখার্জি। অন্যদিকে, মুখার্জি পরিবারকে যে রোগীর সুস্থ হওয়ার খোঁজ দেওয়া হচ্ছিল তিনি ছিলেন করোনা জয়ী শিবদাসবাবু। 


ঘটনার পর, করোনা মৃত্যু বিভ্রাট নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব স্বাস্থ্য ভবনের। ৩ জনের  তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই গাফিলতির জন্য দোষীদের চিহ্নিত করে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানা যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, দুই পরিবারকে গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে না আনার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে খবর।