বিশ বাঁও জলে বিজেপির রথযাত্রা, সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে স্থগিতাদেশ
শনিবার থেকে হচ্ছে না বিজেপির রথযাত্রা। রথযাত্রা নিয়ে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ আপাতত বাতিল। মামলা ফের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ঘরে ফেরালেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত।
নিজস্ব প্রতিবেদন: শনিবার থেকে হচ্ছে না বিজেপির রথযাত্রা। রথযাত্রা নিয়ে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ আপাতত বাতিল। মামলা ফের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ঘরে ফেরালেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত। ফের বিশ বাঁও জলে বিজেপির রথযাত্রা। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “সব রিপোর্ট খতিয়ে না দেখে কী করে রায়?” প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, এবার সব গোয়েন্দা রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে হবে।
এদিনের সওয়াল জবাবের শুরুতে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “আপনারা কেন রথ আটকাতে চাইছেন। কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ রয়েছে কি?” রাজ্যের তরফে এজি বলেন, “কাল হলফনামা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দিতে দেওয়া হয়নি। যে গোয়েন্দা রিপোর্টের উপর ভরসা করেছি সেটাও দেখা হয়নি। সব রিপোর্ট দেখা হয়নি।”
আরও পড়ুন: বড় জয় বিজেপির, রাজ্যের নির্দেশ খারিজ করে রথযাত্রার অনুমতি দিল হাইকোর্ট
এরপর বিজেপির আইনজীবী এস কে কাপুরকে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “কাল কি রথ করতে প্রস্তুত আপনারা?” এসকে কাপুরের জবাব, “আমরা তৈরি কিন্তু রাজ্য যেহেতু কোন কিছু অ্যারেঞ্জ করেনি তাই এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিতে পারি। ”
বেলা ১২.২০ মিনিটে পুলিসের হয়ে মামলা লড়ার জন্য আদালতে উপস্থিত হন অভিষেক মনু সিংভি। আদালত কক্ষে তাঁকে দেখেই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “পুলিশের হয়ে কেন বলবেন আলাদা আইনজীবী?” অভিষেক মনু সিংভিকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “ পুলিস রাজ্য সরকারের থেকে কি আলাদা?” মনু সিংভিকে সওয়াল করতেই বাধা দেন প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত।
প্রধান বিচারপতির প্রশ্নে মনু সিংভির উত্তর, “ আমরা আলাদা ফাইল করেছি। আমরা রাজ্যকে সমর্থন করছি। তাই আলাদা আইনজীবী।”
আরও পড়ুন: রথযাত্রায় স্থগিতাদেশ চেয়ে এবার ডিভিশন বেঞ্চে মামলা রাজ্যের
এরপরই মেজাজ হারান প্রধান বিচারপতি। ভর্তসনা করে বলেন, “ রাজ্য সরকার এখানে আছে, পুলিশের সব আধিকারিকরা আছেন। তারপরও আলাদাভাবে কীসের আইনজীবী প্রয়োজন? এটা ডেসপারেট অ্যাটেমপ্ট।” তাঁর প্রশ্ন, “এটা কি গ্রহণযোগ্য? আগে এটা প্রমান করুন।”
এরপরই এজিকে প্রধান বিচারপতি বলেন, “ হয় একা বলুন, শুধু আপনি রিট মামলার হয়ে সওয়াল করবেন। নাহলে কেন ইনি এই মামলায় যুক্ত হবেন, সেটা শুনব।” এরপরই মনু সিংভির সঙ্গে আলোচনায় বসেন এজি। রাজ্যের ওপর চাপ বাড়তে থাকে।
কেন পুলিশ আলাদা করে আইনজীবী আনলেন, সেই শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত বলেন, “ পুলিশতো অভিযুক্ত নন, তাহলে কেন আইনজীবী?’’
এজি উত্তর দেন, “রাজ্যের এই পুলিশ কর্তরাই আইন শৃঙ্খলা দেখেন। ওঁদের আইনজীবী শুধু আমাকে সমর্থন করবেন, অতিরিক্ত হলফনামা দেবেন।”
ফের প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “আপনাদের সমর্থন যদি করেন তাহলে এজির উপরেও কি বলার দরকার রয়েছে?”
মনু সিংভির জবাব, “ ডিজি এডিজি ছাড়া আইন শৃঙ্খলা নিয়ে কে সিদ্ধান্ত নেবেন? মুখ্যসচিব এটা দেখেন না। বাকি বিচারপতিরাও আপত্তি করেন নি।” ফের পাল্টা প্রশ্ন, “যদি রাজ্যের বদলে পুলিশকেই মামলাকারী করা হয়, তাহলে কি আপত্তি আছে?”
এরপরই বিজেপির আইনজীবী এসকে কাপুর বলেন, “বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারও একই আপত্তি তুলেছিলেন।”
আভিষেক মনু সিংভি সওয়াল করেন, “মুভিং যাত্রা কখনই গণতান্ত্রিক অধিকার নয়। একটি ভলভোতে লোক থাকে ৫৩ জন। বিজেপি জানিয়েছে ১৫০০ জন। প্রতি বাসের দূরত্ব যদি ৬মিটার হয় তাহলে কত দূর এগোবে এটা সেটা আন্দাজ করা যায়.”
সিংভি আরও বলেন, “ হাইওয়ে আটকে মিছিল করা যায় না। বিজেপি জেলায় জেলায় যে দেওয়াল লিখন করেছে, সেখানে মন্দিরের ছবি রয়েছে, পতাকার ছবি রয়েছে। আমাদের ৩১টি পুলিশ থানা রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছে ধর্মীয় আঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে। ৩৯ দিন কি পুলিশের আর কোন কাজ থাকবেনা! ”
এরপরই বিজেপির আইনজীবী এসকে কুমারকে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “ হাইওয়ে আটকে কীভাবে মিছিলের অনুমতি দিল আদালত? কীভাবে গোয়েন্দা রিপোর্ট বাদ দিয়ে রায় দিলেন?” এই বিষয়টির ব্যাখ্যা করতে বলেন প্রধান বিচারপতি। এসকে কাপুর বলেন, “রাজ্য এখানে আদালতের দারস্থ হয়েও রথ আটকাতে পারেনি। আমরা দিন পরিবর্তন করে দিতে চাইছি।”
বিজেপির আইনজীবীর আরও সওয়াল, “রাজ্যসরকার রথ যাত্রায় না বলার কে? কোর্ট কমিটি ঠিক করেছে তার ঠিক করবে।” এরপরই রায় দেন প্রধান বিচারপতি দেবাশিস কর গুপ্ত।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাজ্যের আর্জি খারিজ করে দিয়ে বিজেপির রথযাত্রার অনুমতি দেয় বিচারপতি তপোব্রত চক্রোবর্তীর সিঙ্গর বেঞ্চে। শর্তসাপেক্ষে রথযাত্রার অনুমতি দেওয়া হয় বিজেপিকে।
রথযাত্রায় সায় দিয়ে আদালত ছিল কিছু শর্ত। বিজেপিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যেখানে রথ বেরোবে, তার ১২ ঘণ্টা আগে স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে হবে। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। কোনও ক্ষয়ক্ষতি হলে তার দায় বিজেপিকে নিতে হবে। রাজ্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আইন শৃঙ্খলা বজায় পর্যাপ্ত পুলিস কর্মী মোতায়েন করতে হবে প্রশাসনকে। তারপরই পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের ব্যাপারে আভাস দিয়েছিলেন।