রোগীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে মস্তিষ্কে জটিল অস্ত্রোপচার, নজির গড়লেন জেলার ডাক্তাররা
পূর্ব বর্ধমানের গলসির মনোহর সুজাপুর গ্রামের বৃদ্ধ বদরে আলম পড়ে গিয়ে আহত হন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: দক্ষ চিকিতসক আর সঠিক যন্ত্রপাতির মেলবন্ধন হলে শুধু কলকাতা নয়, জেলার ছোটখাটো হাসপাতালও অসাধ্য সাধন করতে পারে। এক বিরল পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতাল।
এক নতুন পদ্ধতিতে পুরো অজ্ঞান না করে মস্তিকে অস্ত্রোপচার। প্রায় সত্তরের কাছাকাছি রোগীর বয়স। পুরো অজ্ঞানের একটা ঝুঁকি থেকেই যায়। সেইসঙ্গে চিকিত্সায় যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সেটা জেলাস্তরে প্রথম প্রয়োগ করা হল।
পূর্ব বর্ধমানের গলসির মনোহর সুজাপুর গ্রামের বৃদ্ধ বদরে আলম পড়ে গিয়ে আহত হন। আঘাত লাগে তাঁর মাথায়। চিকিৎসকরা মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করার কথা বলেন। কোভিড পরিস্থিতিতে সাধারণ চিকিৎসায় এখন বড়রকম সমস্যা। এই অবস্থায় খুবই চিন্তায় পড়েন রোগী ও তার পরিজনেরা। তখন এগিয়ে আসেন ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
রোগীর প্রাথমিক পরীক্ষার পর তাকে অপারেশনের জন্য তৈরি করা হয়। রোগীকে অজ্ঞান না করেই পুরো অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়াটা সারা হয়। রোগীর মনোবল তারিফ করার মত। মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার সাধারণত এইভাবে করা হয় না। কিন্তু এই পদ্ধতি কেন গ্রহণ করা হল? চিকিৎসক জি পি গর্গ জানান, মস্তিষ্কের অপারেশন খুবই জটিল কাজ। শরীরের সমস্ত স্নায়ুর সরাসরি যোগাযোগ মস্তিষ্কের। সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রোগী অনেক সময় আংশিক বা পুরো পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ে। দৃষ্টি ক্ষীণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শ্রবণক্ষমতা কমে যায়। এই পদ্ধতিতে এই ঝুঁকিগুলি খুব কম।
মাথার যেখানে অস্ত্রোপচার হবে সেই জায়গায় লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া করা হয়। গোটা শরীরের বাকি অংশে হুঁশ ছিল রোগীর। এই অস্ত্রোপচার পুরোটাই ভিডিয়ো করে রাখা হয়। জ্ঞান থাকা অবস্থায় অস্ত্রোপচার করার সময় রোগীর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন চিকিৎসকরা। কখনও হাত নাড়তে বলেন। কখনও নাম জিজ্ঞেস করেন। এর মধ্যে দিয়েই চিকিত্সকরা বুঝে নিয়েছেন রোগীর সব অঙ্গপ্রতঙ্গের নড়াচড়া স্বাভাবিক। রোগী ভাল আছেন।
জেলায় প্রথম এতবড় ঝুঁকি নিয়ে চিন্তায় ছিলেন চিকিত্সকরা। পরীক্ষায় সফল হয়ে চিকিত্সকদের দাবি মফঃস্বলে এইরকম আধুনিক ভাবনার প্রয়োগ অবশ্যই উল্লেখ করার মত ঘটনা।