জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: প্রয়াত হলেন 'পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর বউ'! বয়স হয়েছিল ৮৫। হ্যাঁ, একেবারে ঠিকই পড়ছেন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কথাই এখানে বলা হচ্ছে। 'পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর বউ' কথাটার মধ্যে অবশ্য একটা ট্যুইস্ট আছে! তাঁর নাম বুধনি মেঝান। 'জওহরলাল নেহরুর বউ' বলেই পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গতকাল, শুক্রবার গভীর রাতে মাইথনের পাঞ্চেতে হাসপাতালে মৃত্যু হল তাঁর। আজ, শনিবার তাঁর শেষকৃত্যও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। শেষকৃত্য হল পাঞ্চেত শ্মশানে। তার আগে ডিভিসির পক্ষ থেকে তাঁকে সম্মান জানানো হল। সম্মান জানানো হয় স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: World Cup 2023 Final: আড়াই হাজার কিমি দূরের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচের উত্তেজনায় কাঁপছে বাংলার জেলা


কিন্তু বুধনি মেঝান 'জওহরলাল নেহরুর বউ' কেন? এর পিছনে গল্প আছে। ১৯৫৯ সালে ৬ ডিসেম্বর ডিভিসির পাঞ্চেত জলাধারের উদ্বোধন হয়েছিল। সেই উদ্বোধনে এসেছিলেন দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। পাঞ্চেত জলাধার অঞ্চলটি আদিবাসী-অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় নেহরু সেদিন কোনও একজন আদিবাসী  মেয়ের হাত দিয়েই এই বহু আকাঙ্ক্ষিত প্রজেক্টটির উদ্বোধন করাতে চেয়েছিলেন। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন এই বুধনি মেঝান। তিনি তখন তরুণী। তাঁরই হাত দিয়ে জওহরলাল নেহরু পাঞ্চেত ড্যাম উদ্বোধন করিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানস্থলে ডিভিসির পক্ষ থেকে জওহরলাল নেহরুকে মালাও পরিয়েছিলেন বুধনি। আর জওহরলাল নেহাতই মজা করেই সেই মালাটি পরে পরিয়ে দিয়েছিলেন বুধনিরই গলায়।


ব্যস! এরপর যখন বুধনির নিজের সমাজের মানুষজন জানতে পারলেন বুধনির গলায় মালা পরিয়েছেন নেহরু, তখন তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করে দেন বুধনিকে। হতভম্ব বুধনি ফিরতে চান নিজের সমাজে। কিন্তু তাঁকে ফিরিয়ে নেয়নি তাঁর সাঁওতাল সমাজ। নিছক মজা করে বুধনির গলায় মালা পরিয়ে বুধনির কত বড় ক্ষতি যে সেদিন নেহরু করে দিলেন, তা যদি তিনি ঘুণাক্ষরেও জানতেন!


এদিকে নিজের সমাজ-সম্প্রদায়ের উপেক্ষার শিকার হয়ে খুবই বিপন্ন অবস্থা তখন বুধনির। তাঁকে নিজের গ্রাম ছেড়ে চলেও যেতে বলা হয়। চলে যান তিনি একদিন। আর এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যান তিনি। 


অবশ্য পুরোপুরি হারিয়ে যান না। তখন নেহরু-ইন্দিরাযুগ পেরিয়ে রাজীবযুগ চলছে। বুধনির ঘটনাটা মাঝে-মাঝেই মিডিয়ায় উঠত। বিষয়টি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর কানেও গিয়েছিল। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন বুধনিকে খুঁজে তাঁকে যেন চাকরি দেয় ডিভিসি। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ তাকে খুঁজে পান অবেশেষে। জানা গিয়েছিল, স্ব-সম্প্রদায় থেকে নির্বাসিত বুধনি সেদিন রঘুনাথপুরের দিকে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বিয়ে-থাও করেন। তাঁদের একটি কন্যাসন্তানও জন্মায়। তাঁকে খুঁজে পেয়ে আসানসোলে কংগ্রেসের তৎকালীন সাংসদ আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বুধনির দেখা করিয়ে দেন। বুধনিকে চাকরিও দেয় ডিভিসি। পরবর্তীকালে পুরো সময় কাজ করে প্রথামতো অবসর নেন বুধনি। ডিভিসির আবাসনেই থাকতেন তিনি। 


আরও পড়ুন: World Cup 2023 Final: সন্দেশ-বিশ্বকাপ নিয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ের খুশিতে মাততে পারবেন কি কালনাবাসী?


নিজের সম্প্রদায় থেকে যথাযথ সম্মান তিনি কোনও দিনই পাননি বলেই পরবর্তীকালে দাবি তাঁর এলাকার। সময় গড়ালে, সমাজে খোলা হাওয়া ঢুকলেও বুধনি কোনওদিনই আর তাঁর নিজের গ্রামে ফিরে যেতে পারেননি।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)