অরূপ লাহা: পুলিসকে ঘোল খাওয়াতে কলিং অ্যাপ আর পাংচার এড়াতে  টায়ারে নাইট্রোজেন গ্যাস। খুনিদের নিখুঁত পরিকল্পনার কাছে কার্যতই যেন দিশেহারা পুলিস। তাই হয়তো রাজ্যের খনি অঞ্চলের বেতাজ বাদশা রাজু ঝা-কে খুনের বারো দিন পরেও খুনিরা অধরাই রয়ে গিয়েছে। রাজু ঝা হত্যা কাণ্ডে জড়িত শার্প শুটারদের স্কেচ আঁকিয়ে পুলিস হন্যে হয়ে তাদের খোঁজ চালাচ্ছে। তারই মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য, আততায়ীদের নিয়ে পালানো সাদা রঙের অন্য একটি গাড়ির শেষ লোকেশন পুলিস পেয়েছে বিহারের ভাগলপুরে। আততায়ীরা রাজুকে এলোপাথারি গুলি করার পর নীল বালেনো গাড়িতে চড়ে তারা শক্তিগড় থানার কিছুটা দূর পর্যন্ত যায়। সেখানে নীল গাড়িটি ফেলে রেখে সাদা রংয়ের  অন্য আরেকটি গাড়ি চড়ে চম্পট দেয়। বিভিন্ন টোল প্লাজার ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিস এমনটাই তথ্য পেয়েছে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন, Rozgar Mela 2023: রোজগার মেলায় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে নিয়োগপত্র পেলেন ৭১০০০ চাকরিপ্রার্থী


এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ও পড়শি রাজ্য চষে বেড়িয়ে পুলিস খুনিদের ব্যবহৃত গতিবিধির তথ্য উদ্ধার করতে পারলেও কিছুতেই খুনিদের নাগাল পাচ্ছে না। ফোন কলের পরিবর্তে খুনিরা ’কলিং অ্যাপ’ ব্যবহার করাতেই পুলিসকে এত বিপাকে পড়তে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। খুনিদের নাগাল পেতে পুলিসের এখন ভরসা খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ঝালমুড়ি বিক্রেতার দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী আঁকা খুনিদের স্কেচ। যা এই রাজ্যের প্রতিটি থানা ও পড়শি রাজ্যের পুলিসের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কয়লা পাচার মামলায় রাজু ঝা-র গত ৩ এপ্রিল  ’ইডি’ দফতরে হাজিরা দেওয়ার দিন ছিল। তার ঠিক একদিন আগে অর্থাৎ গত ১ এপ্রিল রাত পৌনে ৮ টা নাগাদ শক্তিগড়ে কলকাতামুখী ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় সাদা রঙের একটি ফরচুনা গাড়ি। ওই গাড়ির চালকের পাশের সিটে বসে ছিলেন রাজু ঝা। একই গাড়ির পিছনের আসনে বসে ছিলেন রাজু ঝা-র সহযোগী ব্রতীন মুখোপাধ্যায় ও সিবিআইয়ের তদন্তাধীন গরু পাচার মামলায় ফেরার অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ।


রাজু ঝায়ের গাড়ি শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়ানোর কিছু সময়ের মধ্যেই সেখানে এসে দাঁড়ায় শার্প শুটাদের নীল রঙের একটি চারচাকা গাড়ি। এরপর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ওই গাড়ি থেকে নেমেই দুই শার্পশুটার পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে পর পর গুলি চালিয়ে রাজুর শরীর ঝাঁঝরা করে দিয়ে পালিয়ে যায়। রাজুর পিছনের সিটে বসে থাকা ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের শরীরে গুলি না লেগে বাম হাতে গুলি লাগায় তিনি জখম হন। এমন হাড়হিম করা হামলা চালানোর সময়েই বেপাত্তা হয়ে যান আব্দুল লতিফ। অক্ষত থাকেন রাজু ঝার গাড়ির চালক নূর হোসেন। এই পুরো হত্যাকাণ্ড খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন শক্তিগড়ের ঝালমুড়ি বিক্রেতা আবুজিয়া সেখ। পুলিস ওই ঝালমুড়ি বিক্রেতার মুখ থেকে গোটা ঘটনার বৃত্তান্ত জানে। এমনকি ওই ঝালমুড়ি বিক্রেতার দেওয়া শারীরিক বর্ণনা অনুযায়ী আততায়ীদের স্কেচও আঁকানো হয়। এছাড়াও রাজু খুন হওয়ার দিন রাজু ঝার সঙ্গে একই গাড়িতে আব্দুল লতিফের উপস্থিত থাকার কথা-সহ গোটা ঘটনা উল্লেখ করে নূর হোসেন শক্তিগড় থানায় এফআইআর দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে খুনের ধারায় মামলা রুজু করে ও ‘সিট’ গঠন করে পুলিস।


পুলিস তদন্তে নেমেই আততায়ীদের ব্যবহৃত নীল চারচাকা গাড়িটির সন্ধান শুরু করে। ঘটনার দিন গভীর রাতেই শক্তিগড় থানার কাছে নীল গাড়িটির হদিশ পায় পুলিস। ওই গাড়িটিতে তল্লাশি চালিয়ে আগ্নেআস্ত্র, কার্তুজ, মদের বোতল ও একাধিক নম্বর প্লেট পায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিস নিশ্চিত হয় ওই নীল গাড়িতে চেপেই আততায়ীরা শক্তিগড়ে এসেছিল। এরপর থেকেই তদন্তকারী সিটের সদস্যদের যাবতীয় কেন্দ্র বিন্দুতে জায়গা করে নেয় ওই লীল চারচাকা গাড়ি। শার্প শুটাররা কোথা থেকে ওই নীল গাড়িতে চাপে এবং কোন কোন পথ ধরে এসে তারা শক্তিগড়ে পৌঁছায় তার তথ্য অনুসন্ধানে নামে। সেই তথ্য পাওয়ার জন্য সিটের তদন্তকারী দল এই রাজ্যের বাঁকুড়া,পুরুলিয়া-সহ পড়শি রাজ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ড চষে বেড়ায়। ওইসব জায়গার বিভিন্ন পয়েন্টের ও দীর্ঘ সড়ক পথের একাধিক ’টোল প্লাজার  সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিস আততায়ীদের নীল গাড়িটির যাতায়াতের অকাট্য তথ্য প্রমাণ পেয়েছে বলেই খবর। এই সবের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দু’দিন বাদ জেলা পুলিস সুপার কামনাশিস সেন আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন “খুব শীঘ্রই ব্রেক থ্রু  পাওয়া যাবে“।


কিন্তু পুলিস সুপার ’ব্রেক থ্রু’ পাবার  ব্যাপারে আশা প্রকাশ করলেও তা এখনও জটেই আটকে রয়েছে। তবে সূত্রের খবর, সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্তকারীরা একপ্রকার নিশ্চিত হয়েছেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য আততায়ীরা ঘটনার আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়। বিহার, ঝড়খণ্ড, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া হয়ে আততায়ীদের নিল গাড়িটি যে  দুর্গাপুরে আসে সেটাও পুলিস জানতে পেরেছে। এই দীর্ঘ যাত্রা পথে আততায়ীরা তাদের নীল গাড়ির নম্বর প্লেট যে একাধিক বার বদল করেছে। তদন্তে এও উঠে এসেছে ঝাড়খণ্ডের একটি এমআরএফ শো রুমে আততায়ীরা তাদের নীল চারচাকা গাড়ির টায়ারে ’নাইট্রোজেন গ্যাস’ ভরে। মদও কেনে ঝাড়খণ্ডের একটি মদের দোকান থেকে। নীল গাড়িটি ৩০ মার্চ দুপুর ২ টোর খানিক পর বাঁকুড়ার ’কালাপাথর’ টোল প্লাজায়  ১৩০ টাকা টোল মিটিয়ে পার হয়। ওই টোলা প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজে নীল গাড়িটিতে চারজন সওয়ার থাকার ছবিও ধরা পড়েছে বলে খবর। এছাড়াও দুর্গাপুরের কাঁকশার বাঁশকোপায় টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজেও একই গাড়ির সামনের দিকে চালক-সহ দু’জন বসে থাকার ছবি ধরা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত ৩১ মার্চ বিকালে কাঁকশার রাজবাঁধে থাকা রাজু ঝার ফরচুনা হোটেলের সামনে নীল গাড়িটির ঘুরপাকের ছবিও সেখানকার সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়েছে। এছাড়াও ঘটনার দিন দুপুরে রাজু ঝার হোটেলের সামনে দাঁড়ানো সাদা ফরচুনা গাড়িটিতে একটি ট্রলি ব্যাগ ও  অফিস ব্যাগের মত অন্য একটি ব্যাগ তোলা হচ্ছিল। এরপর রাজু-সহ বাকিরা ওই সাদা ফরচুনা গাড়িতে চেপে রওনা হওয়ার পরেই নীল গাড়িটি রাজুদের গাড়ির পথ অনুসরণ করা শুরু করে ।


এদিকে আততায়ীদের ব্যবহার করা গাড়ির এত তথ্য উদ্ধার করা গেলেও পুলিসকে আততায়ীদের ফোন কলের তথ্য ও টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করতে হিমশিম হচ্ছে। তাই মনে করা হচ্ছে পুলিসকে ঘোল খাইয়ে গোটা শুটআউট প্রক্রিয়া সারতে আগাগোড়া ’কলিং অ্যাপ’ ব্যবহার করেছে। তাই  দুই শার্প শুটারের নাগাল পেতে পুলিসের এখন বড় ভরসা প্রত্যক্ষদর্শী ঝাল মুড়ি বিক্রেতার দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী আঁকা শুটারদের স্কেচ। যা ইতিমধ্যেই এই রাজ্যের বিভিন্ন থানা ও পড়শি একাধীক রাজ্যের থানায় পাঠানো হয়েছে। এইটুকু করেই অবশ্য হাল ছাড়েনি পুলিস। শুটারদের জালে পুরতে তদন্তকারীরা সর্বতোভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।



আরও পড়ুন, Seuli Saha: বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কেশপুরের তৃণমূল নেতা, মানহানি মামলা করার হুঁশিয়ারি মন্ত্রীর


 (Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)