প্রসেনজিৎ সরদার: মনসামঙ্গল কাব্যে জানা যায়, কলার ভেলায় স্বামী লখিন্দরকে নিয়ে নদীর জলে ভাসতে হয়েছিল বেহুলাকে। বর্তমানে আধুনিক উন্নত প্রযুক্তিব্যবহার যখন মানুষকে উচ্চ শিখরে নিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই কলার ভেলায় চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হয়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে কচিকাঁচাদের। এমন ঘটনা ক্যানিংয়ের নিকারিঘাটা পঞ্চায়েতের দক্ষিণ অঙ্গদবেড়িয়ার ভুতিরাম গ্রামে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আরও পড়ুন: Siliguri: জাতীয় সড়কে ধস, ক্রমাগত পড়ছে পাথর! ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সিকিমগামী সমস্ত গাড়ি...


জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেজি-২ এর হাসানুর সরদার, জাকিরা সরদার, নার্শারি-১ সাহানুর সরদার’রা রোজ ভেলায় চড়ে খাল পার হয়ে স্কুলে যায়। দক্ষিণ অঙ্গদবেড়িয়া গ্রামে রয়েছে সেচ দফতরের একটি খাল। সেখানে স্লুইস গেট রয়েছে। সেটি দীর্ঘদিন অকেজো। তার পাশ থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। খালের জল যাতায়াত করে। গ্রামে প্রায় পাঁচশোর বেশি মানুষের বসবাস। এই গ্রামের মানুষজনদের হাটেবাজারে কিংবা হাসপাতালে যাওয়ার একমাত্র উপায় কলার ভেলায় চড়ে খাল পারাপার করা। এমনকি গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত স্কুলে যায় কলার ভেলা চড়ে।


মাঝেমধ্যে ভেলা থেকে খালের জলে পড়েও যান কেউ কেউ। সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার ক্যানিং স্টেশন থেকে মাত্র সাত কিমি দূরে এভাবেই চলছে প্রায় ৬ মাসের বেশি সময় ধরে। জানা গিয়েছে, ক্যানিংয়ের সাতমুখী বাজার-সংলগ্ন সেচ দফতরের একটি খাল রয়েছে। সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য গত প্রায় ৩০ বছর আগে সেচ দফতরের উদ্যোগে খালের উপর এক কিলোমিটার অন্তর একটি করে সাঁকো তৈরি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন সেগুলির সংস্কার হয়নি। না হওয়ায় ভেঙে পড়ে সেগুলি। পরে কংক্রিট সেতুর পাশেই তৈরি হয় কাঠের সেতু। সেই কাঠের সেতুর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গিন। গত প্রায় ৬ মাসের বেশি সময় ধরে ভেঙে পড়ে রয়েছে এগুলি। গ্রামের ছেলেমেয়েদের প্রতিদিনই স্কুলে যেতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাল পারাপার করতে হয়। যানবাহন বলতে একমাত্র ভরসা কলার ভেলা। নিজেরাই ভেলা তৈরি করে যাতায়াত করে স্কুলের ছাত্রছাত্রী-সহ গ্রামের মানুষজন। অনেকে আবার গামছা পরেও খাল পারাপার করেন। 


আরও পড়ুন: Bhutan: ভুটানে ভূমিকম্প! আর উত্তর-আকাশে বৃষ্টিভরা কালো মেঘের ভ্রুকুটি...


এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, যাতায়াতের সমস্যা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দফতরে একাধিকবার জানানো হয়েছে, জানানো হয়েছে স্থানীয় নিকারিঘাটা পঞ্চায়েত প্রধানকেও। তা সত্ত্বেও কোনও কাজই হয়নি। দক্ষিণ অঙ্গদবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সাহানারা সেখ, রেজাউল মণ্ডল, জুব্বার আলি সরদার, হাসিনা সরদার, সাদ্দাম সরদারদের বক্তব্য, 'আমরা খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায়। পঞ্চায়েতকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিছু হয়নি। এ প্রসঙ্গে নিকারঘাটা পঞ্চায়েত তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ নস্কর জানিয়েছেন, 'সেচ দফতরের খালের উপর কাঠের সাঁকোটি ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে স্কুলের কচিকাঁচাদের যাতায়াত করতে অসুবিধা হয়। সেচ দফতরকে জানিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি।' সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, 'খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।' এদিকে যাতায়াতের সমস্যার কবে সমাধান হবে, তা নিয়ে চাতকের মতো অধীর অপেক্ষায় দক্ষিণ অঙ্গদবেড়িয়ার গ্রামবাসীরা।


(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)