অঞ্জন রায় 


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

হাওয়ার দিক এখন গেরুয়ায়। লোকসভা ভোটের পর সেই হাওয়ায় গা ভাসাচ্ছেন তৃণমূল-সিপিএম নেতা-কর্মীরা। মুরলিধর লেনের ঘরে ঢুকছে বাঁধ ভাঙা স্রোত। আর সেই স্রোতের ঠেলায় যাঁদের হাতে ভিত তৈরি, তাঁদের অনেকেই এখন পিছনের সারিতে। জায়গা নিচ্ছেন নতুনরা। বঙ্গ বিজেপির অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, হাফ প্যান্ট বনাম ফুল প্যান্টের লড়াই। দিলীপ ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, গঙ্গা-যমুনার জল মিশে যাবে।    


নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর নানা দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুরু হয়। আর, এবার ভোটের আগে তো সবার জন্য দরজা হাট করে দেয় গেরুয়া শিবির। আরএসএসের মতাদর্শে তৈরি একটা দলে এহেন মুড়ি-মুড়কির মতো লোক নেওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই উঠেছিল প্রশ্ন। তখনই অমিত শাহ স্পষ্ট করে দিয়ে গিয়েছিলেন, বাংলায় বিজেপিকে বাড়তে হলে অন্য দল থেকে লোক নিতে হবে। নেতার অভাব দূর করতে ভাঙতে হবে বিরোধী শিবির। ২০১৭ সালে নভেম্বরে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল রায়। যে মুকুলকে খোঁচা দিয়ে বিজেপি নেতারা বলতেন, 'ভাগ মুকুল ভাগ'। তৃণমূলের একদা চাণক্যই হয়ে উঠলেন বিজেপির নয়নের মণি। লোকসভা ভোটের আগে মুকুলের হাত ধরে ঢুকলেন অনুপম হাজরা, সৌমিত্র খাঁ, অর্জুন সিং ও ভারতী ঘোষরা।          



সঙ্ঘ পরিবারে মাজাঘষারর পর সাধারণ বিজেপিতে নেতা হওয়া যায়। এটাই নিয়ম। নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ-নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। এ ছবিই স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে ব্যতিক্রম ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গে। আরএসএসের শাখা এরাজ্যে থাকলেও উল্লেখযোগ্য মুখ নেই। এবার কিন্তু ভোটের আগে খোদ অমিত শাহ বলে দেন প্রার্থী হওয়ার একমাত্র শর্ত, জেতার সম্ভাবনা। তাতে লাভ হয়েছে বই কী! নিশীথ প্রামাণিক, খগেন মুর্মু, শান্তনু ঠাকুর, অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁর মতো অনেকে অন্য জায়গা থেকে বিজেপিতে এসেই পৌছে গেছেন সংসদে।


যে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই, সেই তৃণমূল বিধায়করাই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে দাবি করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা মুকুল রায় তো তাঁর পুরনো দল ভাঙানোর কথা ঘোষণাই করে দিয়েছেন। গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবর, 
দলে নতুন আসা নেতাদের দাপট বাড়ায়, সঙ্ঘের সঙ্গে সংযুক্ত পুরনো নেতাদের একাংশ কিছুটা হলেও কোণঠাসা এবং ক্ষুব্ধ। বিজেপির মতো ক্যাডারভিত্তিক দলে, কোনওরকম ঝাড়াইবাছাই ছাড়াই যোগদান মেনে নিচ্ছেন না তাঁরা। দিন কয়েক আগে সায়ন্তন বসু বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। জানিয়ে দিয়েছিলেন, অপছন্দের আসনে লড়ে হেরেছেন। দলের হিতে পদ ছেড়ে দিতেও রাজি।


তবে আগুনে ঘি ঢেলেছে লাভপুরের বিধায়ক মনিরুলের যোগদান। দিল্লিতে বিজেপিতে নাম লেখান মনিরুল। তার তীব্র বিরোধিতায় সোচ্চার হন বহু নেতা-কর্মী। কর্মীরা হতাশ বলে স্বীকার করেন দিলীপ ঘোষও। মুকুল রায়কে নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো আর কেউ নেই। কিন্তু, তাঁর হাতে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মণিরুল ইসলাম বিজেপি-তে যোগ দেওয়ায়, ছাইচাপা ক্ষোভ এক্কেবারে সামনে চলে এসেছে। চাপ বাড়ায়, মণিরুলের ইস্তফার কথাও বলতে বাধ্য হন মুকুল। বীরভূমের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডলের সাফাই, বিজেপি গঙ্গাজলের মতো। তাতে অনেক নোংরা ভেসে আছে। কালের নিয়মে তা আবার পাড়ে রয়ে যায়।



আরও পড়ুন- নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন মমতা, 'জয় শ্রী রাম' বিতর্কে মুখ খুললেন অপর্ণা সেন


দলেই আছে উল্টো মত। পুরনো নেতারা যখন সাফল্য আনতে পারেননি, তখন নতুনরা যদি দলের শক্তি বাড়ান, তাহলে ক্ষতি কী? উত্তর এড়িয়ে গিয়েই বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ কার্যত বুঝিয়ে দিলেন নতুন-পুরনোর দ্বন্দ্ব এখন বেশ তীব্র। খাকি হাফ প্যান্ট থেকে এখন বাদামি ফুল প্যান্টে রূপান্তর ঘটেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের। সঙ্ঘের প্রশিক্ষিতরাই এখনও নিয়ন্ত্রক বিজেপির। বাংলা বিজেপিতে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠদের চাপিয়ে নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন বহিরাগতরাই। বিজেপি রাজ্য সভাপতি অবশ্য দাবি করছেন সব জামা ভিতর থেকে একরঙা হয়ে যেতে দেরি হবে না।বিজেপি সবসময় নতুন। চিরপুরাতন নিত্যনতুন। এটা ভারতীয় জনতা পার্টি।       


পালাবদলের পর একইসভাবে ভিড় বেড়েছিল তৃণমূলে। তখন একই কায়দায় সকাল-সন্ধ্যায় কসবার তৃণমূল ভবনে দলবদলুদের হাতে ঘাস-পতাকা তুলে দিয়ে চওড়া হাসতেন মুকুল রায়। আর এখন সেই মুকুলই হাজির হন দিল্লিতে বিজেপির অফিসে। আর একই কায়দায় চওড়া হাসি হেসে দাবি করেন, আরও অনেকে আসতেন। সেই একই টেমপ্লেট। খালি সবুজের বদলে গেরুয়া। 


গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, যুব বনাম মাদার - এসব এখন বাংলার রাজনৈতিক অভিধানে ঢুকে গেছে। নতুন মধুভাণ্ডের খোঁজ পেয়ে মৌমাছির দলেরা এখন দিক পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে দলবদল স্বাভাবিক। বড় দলে নানা চিন্তাভাবনা, মতাদর্শ, নেতৃত্বে বদল-কোনওটাই নতুন নয়। এসব সঙ্গে নিয়ে পথ চলাই এখন বঙ্গ বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ। 


আরও পড়ুন- হিন্দুদের ভোট দিতে দেওয়া যাবে না, ভাইরাল হতে বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুললেন শুভাশিস