অধীর রায়


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বর্ধমানের সংশোধনাগারে বন্দি ছেষট্টি বছরের মহেন্দ্র সিং। খুন করার চেষ্টার অভিযোগে ২০১৭ সালের দশই জুলাই ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের অতিরিক্ত জেলা জজ তার সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন । তখন থেকেই বর্ধমান সংশোধনাগারে বন্দি মহেন্দ্র সিং । খুনের চেষ্টার কারনে সাজা পেলেও শান্ত স্বভাবের তিনি । জেলে কোনদিন গন্ডগোল করেন নি । সেই মহেন্দ্র সিং মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্ধমান সংশোধনাগারের কর্তৃপক্ষের । সে এক অদ্ভুত কারণ ।


আরও পড়ুন-অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও ওষুধ নিয়ে কালোবাজারি করলেই ৭ বছরের জেল ও জরিমানা!


দেশ জুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর জেলে বন্দিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে । তারা জেল থেকে বেরোনোর জন্য আর্জি জানায় । সুপ্রিম কোর্টও মনে করে বন্দিদের দাবি ন্যায্য । এরপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্ট জেলার সংশোধনাগারে বন্দিদের করোনার জন্য  প্যারোলে মুক্তির নির্দেশ দেয় । হাইকোর্টের গঠিত কমিটি প্যারোলে মুক্তি জন্য একটা মাপকাঠি  তৈরি করে । সেই ভিত্তিতে মহেন্দ্র সিং এর নাম সুপারিশ করে সেই কমিটি  । আর এতেই  বিপত্তি  । বাকি বন্দিরা যখন বাড়ি ফেরার আনন্দে আত্মহারা, তখন মুখ বেজার করে নিজের ওয়ার্ডে এক কোনে  বসে আছে মহেন্দ্র সিং । চোখ এড়ায় নি বর্ধমান সংশোধনাগারে কারা আধিকারিকদের । আধিকারিকরা  মহেন্দ্রের জানতে চায় তিন মাসের জন্য ছাড়া পাচ্ছেন  মনমরা হয়ে বসে আছেন কেন ?  সেই আধিকারিক জানান , "তখনই কেঁদে  ফেলেন মহেন্দ্র সিং । হাত জোর করে বলেন  আমাকে জেল থেকে তাড়াবেন না স্যার  । বাইরে গেলে আমি করোনাতে মরে যাব । আমার থাকার জায়গা নেই ।"


আরও পড়ুন-সামনে লম্বা লড়াই; বাড়তে পারে লকডাউনের মেয়াদ, সর্বদলীয় বৈঠকে ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর


মহেন্দ্রের কথায় হকচকিয়ে যান সেই  কারা আধিকারিক । বেগতিক দেখে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জেল সুপারের কাছে ।  মহেন্দ্রর  সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন জেল সূপার। সে আলাপচারিতায় জানা যায় , উত্তর কলকাতার নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের ফুটপাতে থাকতেন  মহেন্দ্র । পোস্তা বাজারে মাল বাহকের কাজ করতেন । এখন জেল থেকে বেরোলে তার থাকার জায়গা নেই ।  আর নিজের ডেরায় ফিরলে কাজও পাবে না ।  খাবে  কি ? তার উপর করোনার ভয় । তাই কোনভাবেই যেন জেল থেকে ছাড়া না হয় । বারবার জেল সুপারের কাছে এই আর্জি জানায় মহেন্দ্র সিং ।


   ২০১৪ সালে খুনের চেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ । ২০১৭ সালে দোষী সাব্যস্ত হয় । তারপর থেকে  বর্ধমান সংশোধনাগারে বন্দি আছেন  তিনি। মহেন্দ্রের এই কাতর আবেদনের পর গত তেসরা এপ্রিল বাকি বন্দিদের  ছাড়া হলেও জেলেই থেকে গেছেন মহেন্দ্র সিং । হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও মহেন্দ্রকে কেন ছাড়া হয় নি ? এই আইনি জটিলতা কটাতে তৎপর  বর্ধমান সংশোধনাগারের কর্তৃপক্ষ । মহেন্দ্রকে দিয়ে একটি লিখিত আবেদন করানো হয়েছে । সেই আবেদনে তিনি লিখেছেন কেন তিনি প্যারোলে মুক্তি চান না ।  সেই আবেদনপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কারা দফতরে । মহেন্দ্র সিং এর সেই আবেদনপত্র খতিয়ে দেখবেন কারা দফতরের আধিকারিকরা  ।