অধীর রায়: করোনার থাবা এবার তাঁত শিল্পে। লকডাউন চলায় তাঁতি এবং এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অধিকাংশ শ্রমিকের রোজগার কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষের বেশি রেজিস্টার্ড শ্রমিকের উপর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নদিয়া জেলা। এই জেলার শান্তিপুর, ফুলিয়া, বেথুয়াডহরি, চাকদা এবং হবিবপুরের বিভিন্ন জায়গায় তাঁত বুনে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২.৫ লক্ষের বেশি মানুষ। ভারতে যত সুতির তাঁত উৎপন্ন হয় তার সিংহভাগ আসে নদিয়া জেলার এই অঞ্চল থেকে।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

কেউ হাতে টানা তাঁত চালান। কেউ হ্যান্ডলুম তাঁত বোনার সঙ্গে যুক্ত। কেউ বা  সুতো কাটার সঙ্গে। আবার কেউ চালান পাওয়ারলুম। শান্তিপুর, ফুলিয়ার অধিকাংশ বাড়ির মহিলারা শুধুমাত্র  সুতো কেটে নলি পাকিয়ে সংসার নির্বাহ করেন। সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এই সব এলাকায় একটি পরিবার পিছু গড়ে তিন জন করে এই পেশার সঙ্গে জড়িত। বলা যায় তাঁত শিল্পের সঙ্গে  জড়িত প্রায় সব শ্রমিকরাই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের সদস্য। অর্থাত্ নদিয়ার একটি বৃহৎ অংশের মানুষের আয়ের উৎস এই তাঁত শিল্প। মহাজনদের থেকে টাকা নিয়ে কারবার চালায় এখানকার  অধিকাংশ তাঁত কারিগর।


আরও পড়ুন- ‘মাস্ক পরেন না কেন? বয়স হয়েছে আপনার’, মমতার ‘শাসনে’ আপ্লুত বিমান বসু


তাঁতিদের দাবি, কয়েক বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের জিএসটির প্রভাবে ব্যবসা মন্দা হয়ে ছিল। আর এখন করোনাভাইরাসের জন্য  আজ প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি লকডাউন। সেই মন্দাকে ছাপিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে লক্ষাধিক তাঁতি পরিবারকে। ঘরে কাপড় তৈরি হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু লকডাউনের জন্য  খুচরো বা পাইকারি কোন ব্যবসায়ী মাল নিচ্ছে  না । কানাই, সুভাষ এবং পরিতোষদের মাথায় হাত। অসহায়ের মত তাঁদের আর্তি, "লকডাউন চলায় রুজি রোজগার একদম বন্ধ হয়ে গেছে। যেটুকু সম্বল ছিল তা দিয়ে শাড়ি বোনা হলেও বিক্রি নেই। মহাজনদের টাকা ফেরত দিতে না পারায় তারাও আর টাকা দিতে চাইছে না।"



মহাজনরা যে সব তাঁত ঘরে টাকা লাগিয়েছে, সেখানকার শ্রমিকরা দৈনিক রোজে কাজ করে। তাই উৎপাদন বন্ধ থাকায় সেই সব পরিবারের আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সাধারণ সময়ে নদিয়া জেলার প্রতিটি শ্রমিকের  শাড়ি পিছু দৈনিক আয় হয় একশো থেকে দেড়শো টাকা। সেই জায়গায় আজ প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি আয় একদম শূন্য। এই অবস্থায় নদিয়া জেলার তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক পরিবারের দিন কাটছে অনাহারে।


এই পরিস্থিতিতে তাঁতিদের পাশে দাঁড়িয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন রাজ্য তন্তুজ- চেয়ারম্যান এবং শান্তিপুর পৌরসভার পৌরপ্রধান অজয়  দে। তিনি জানিয়েছেন,  সারা রাজ্যে সাড়ে ছয় লক্ষের মত মানুষ তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তার মধ্যে শান্তিপুর, ফুলিয়া, নবদ্বীপ এবং চাকদায় প্রায় আড়াই লক্ষের মত মানুষ এই পেশার সঙ্গে জড়িত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছি এই সমস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে যারা দক্ষ কারিগর তাদের দৈনিক তিনশো টাকা এবং যারা অদক্ষ কারিগর তাদের দৈনিক দুশো টাকা  করে অনুদান দিতে।" অন্যদিকে পাওয়ার লুম মালিকেরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানিয়েছেন,  উৎপাদন না হলে বিদ্যুতের বিল তারা আগামিদিনে  কী করে পরিশোধ করবেন। আর বিদ্যুত ছাড়া পাওয়ারলুম শিল্প একেবারেই অচল। সব মিলিয়ে লকডাউন চলাকালীন তাঁত শিল্প নিয়ে  সরকার যদি কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ না করে তাহলে প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে শতাব্দী প্রাচীন বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প।