নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজ্যের হাতে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন নেই। এদিকে হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বাইরে লম্বা লাইন। প্রথম ডোজ তো দূরের কথা। দ্বিতীয় ডোজ নিতে এসে হররানির শিকার হচ্ছেন মানুষজন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছবিটা প্রায় একই।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রোজই জলপাইগুড়ির ফার্মেসি কলেজে ভ্যাকসিন নিতে কাকভোর থেকেই ভিড় করছেন বহু মানুষ। আজও জড়ো হয়েছিলেন অনেকে। প্রথম ডোজ নিতে এসে না পেয়ে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। অনেকেরই প্রশ্ন নাম লেখানোর ব্যবস্থা কই! স্বাভাবিকভাবে কাউন্টার খোলা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। লাইন থেকে বেরোলেই মিলবে না ভ্যাকসিন। মঙ্গলবার ভ্যাকসিন নিতে আসা মানুষজনই নাম লেখার ব্যাবস্থা করলেন। এতে কিছুটা  কষ্ট কমবে বলে তাঁরা জানালেন। তবে ভ্যাকসিন সেন্টারের কাউন্টার খোলার পর নথিভুক্ত নামের তালিকাও ঠিকঠাক মানা হচ্ছে না বলে তাঁদের অভিযোগ।


আরও পড়ুন-আরও কমল দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ২৯ হাজারের বেশি


কেউ রাত ৯ টায়, আবার কেউ রাত দশটা থেকে হত্যে দিয়েছেন। সারারাত জেগেছেন। তবুও তারা নিশ্চিত নন ভ্যাকসিন পাবেন কি না। এই হল ভ্যাকসিনের রোজনামচা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে। 


এমনিতেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু যারা দ্বিতীয় ডোজ নেবেন তারাও পাচ্ছেন না। কারো বয়স ৬৫ তো কারো বয়স ৭৫। তিন চার দিন ঘুরেও ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন না তাঁরা। তাই তারা রাতে বাড়িতে না ঘুমিয়ে ভ্যাকসিনের জন্য রাত থেকেই পড়ে আছেন পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলে ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে। এখানে অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে বড়শুল পিটিটিআইয়ে।


ভ্যাকসিন কবে পাওয়া যাবে, কারো কাছে নিদিষ্ট কোন তথ্য নেই। সবাই দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব কুমার রায় বলেন, ভ্যাকসিনের সরবরাহ কম আছে তাই এই অবস্থা। কিন্তু যাদের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর ৫৬ বা ৫৭ দিন পার হয়ে যাচ্ছে তাদের কি হবে? সরকার বা প্রশাসন কি কিছু ভাবছে উত্তর নেই মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে। ফলে সিনিয়র সিটিজেনরা এখন অসহায়। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা চাটাই পেতে চাতক পাখির মত বসে আছেন ভ্যাকসিন পাবার আশায়। সামাজিক দূরত্ব শিকেয়।


ভ্যাকসিন  নিতে এসে নিত্যদিনের হয়রানি চলছেই। প্রবীণ মানুষদের নিয়ে যেন তামাশা চলছে বর্ধমান(Bardhaman) মেডিকেল কলেজের ভ্যাকসিন কেন্দ্রে। আজ ভ্যাকসিন না পেয়ে নোডাল অফিসার সহ কতৃপক্ষের উদাসীনতার বিরুদ্ধে সরব হন মানুষজন।


প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন বন্ধ হয়ে রয়েছে আজ প্রায় এক পক্ষকাল। দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাক্সিন নিতে এসে চূড়ান্তভাবে নাকাল হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। কোনো সিস্টেম নেই। কোনো ঠিকঠাক তথ্য নেই।  শুধু প্রাণের দায়ে কেউ রাত দুটো কেউ তিনটে থেকে লাইন দিচ্ছেন। তারপর দীর্ঘসময় লাইনে থেকে মাত্র দেড়শোটি টোকেন আজ দেওয়া হয়। বাকি প্রচুর মানুষ আজও ফিরে যান।


কাল প্রথম ভ্যাক্সিন পাননি রুমা চ্যটার্জি। মাকে নিয়ে ভোরবেলা লাইন দিয়েছেন। আজও ভ্যাক্সিন পেলেন না। খুবই হতাশ তিনি।  আর এক উপভোক্তা লক্ষীকান্ত পাল সরব হয়েছেন সেন্টারের অব্যবস্থা নিয়ে। তার কথায় ; প্রথম ডোজ তারা ভালভাবেই পেয়েছেন। এখন সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে তিনদিন ফিরে যেতে হল। তার কথায় কর্তৃপক্ষের কোনো দায়িত্ববোধ নেই। কবে কতটা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সেই তথ্যটুকু দিতে পারছেন না। ওরা কি মানুষের দুর্দশা নিয়ে মজা দেখছেন?


আরও পড়ুন-করোনা চিকিৎসায় আইভারমেক্টিন প্রয়োগে 'না' বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার


প্রবীণ আশীষ কুমার মন্ডল ভোর থেকে লাইনে। তার উদ্বেগ, না খেয়ে দেয়ে লাইন দিতে হচ্ছে। রোজ রোগের দাপট বাড়ছে। লোক মারা যাচ্ছে। তাও প্রথম ডোজ দেবার কোনো খবর নেই। সেকেন্ড ডোজ নিয়েও নানা বিভ্রান্তি। যার কো ভ্যাকসিন(Covaxin)নিয়েছেন তাদের হয়রানি খুবই। কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই।


ভ্যাকসিন ভোগান্তি দুর্গাপুরেও। এক সপ্তাহ ধরে মহকুমা হাসপাতাল, গ্রামীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একই অবস্থা। কাকভোর থেকে লাইন দিচ্ছেন মানুষজন। আজও দুর্গাপুর মহকুমা হাসাতালে পড়ছে লম্বা লাইন পড়েছে। কখনও কখনও বেলা দশটার পর বলা হচ্ছে টিকা নেই। অনেকে দাবি করছেন ব্যাকডোর দিয়ে টিকা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালের মতে রোজ ৬০-৭০টি টিকা আসছে। তা দিয়েও দেওয়া হচ্ছে।