নিজস্ব প্রতিবেদন: এ যেন একেবারে উলটপুরাণ! বুক ও পেটের ভেতর সব অঙ্গই উল্টোদিকে! অথচ এ হেন জটিল শরীরেই সফল ভাবে অস্ত্রোপচার করলেন জলপাইগুড়ির চিকিৎসক।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

রোগটির নাম 'সাইটাস ইনভার্সাস' (Situs inversus)। এই বিরল উপসর্গযুক্ত রোগীরই সফল গলব্লাডার স্টোন অপারেশন হল জলপাইগুড়িতে (jalpaiguri)। ল্যাপরোস্কপিক অপারেশনের দুনিয়ায় বিশ্বে এহেন সফল অপারেশনের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১ নম্বর।


জানা গিয়েছে, হলদিবাড়ি বগড়িবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর বছর চল্লিশের চঞ্চলা বর্মনের গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে পেটে ব্যথা হচ্ছিল। স্থানীয় বহু চিকিৎসকে দেখিয়ে তাঁর পেটব্যথা না কমায় সম্প্রতি তিনি জলপাইগুড়ির বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক ডাক্তার রজত ভট্টাচার্যের কাছে আসেন। চিকিৎসক তাঁর পেটের আল্ট্রা সনোগ্রাফি করাতে বলেন। পরীক্ষার রিপোর্ট এলে তা দেখে চমকে ওঠেন বিশিষ্ট চিকিৎসকও। দেখেন মহিলার পেট ও বুকে থাকা সমস্ত অঙ্গ উলটো দিকে অবস্থিত। তাঁর গলব্লাডার রয়েছে পেটের বাঁদিকে। যা থাকার কথা ডানদিকে। এবং তাতেই স্টোন রয়েছে। যা থেকে মাঝেমধ্যে তার পেটে ব্যথা-সহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। 


সাইটাস ইনভার্সাস  (Situs inversus) কী? 


'সাইটাস ইনভার্সাস'  (Situs inversus) হল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের এক ধরনের জন্মগত ডিসঅর্ডার (genetic disorder)। এই ধরনের রোগীদের জন্মগত ভাবেই পেট ও বুকের ভেতরে থাকা সমস্ত অঙ্গ উল্টো দিকে থাকে (genetic condition in which the organs in the chest and abdomen are positioned in a mirror image from their normal positions)। যেমন, হার্ট স্বাভাবিক ভাবে যা বুকের বাঁদিকে থাকে, এঁদের তা থাকে ডানদিকে। লিভার সাধারণত থাকে পেটের ডান দিকে, এঁদের থাকে বাম দিকে। প্লীহা থাকে ডানদিকের বদলে বাঁদিকে। এটা জন্মগত বলে এ নিয়ে এঁদের কোনও অসুবিধা হয় না। ছোটবেলায় খুব কঠিন কোনও রোগ-ব্যাধি না হলে সাধারণত এই অস্বাভাবিকতা ধরাও পড়ে না বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।


যাই হোক, সংক্ষেপে নিজের রোগের বিষয়টি শুনে এবং এর চিকিৎসায় বিপুল খরচের কথা জেনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে দিনমজুর বর্মন দম্পতির। তখনই এগিয়ে আসেন রজত। তিনি বলেন, অপারেশনটি তিনি নিখরচায় করে দেবেন। এই আশ্বাসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে পরিবারটি। বৃহস্পতিবার রাতে জলপাইগুড়ি রাজবাড়িপাড়ার এক নার্সিংহোমে অপারেশনটি সফল ভাবে সম্পন্নও হয়।


কী বলছেন ডাক্তার রজত ভট্টাচার্য? 


রজত বলেন, 'অপারেশনটি আমাদের কাছে খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। শিক্ষণীয়ও ছিল। ১৯৯০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রথম ল্যাপরোস্কপিক অর্থাৎ, শরীর না কেটে চামড়ায় ফুটো করে অপারেশন করার পদ্ধতি শুরু হয়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত এই ধরনের ৭০ টি গলব্লাডার অপারেশন হয়েছে। ৯০ সালের আগে মাত্র ৪০ টি অপারেশন এরকম অপারেশন হয়েছে। আমরা এই রোগীকে নিয়ে তাই মানসিক উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম।' রজত আরও বলেন, 'এঁর জন্য অপারেশন টেবিল ও ক্যামেরা-সহ অন্যান্য সরঞ্জাম সব কিছুই উলটো ভাবে 'সেট' করতে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় ৫০ মিনিট ধরে আমরা অপারেশন করে গলব্লাডার কেটে বাদ দিই। রোগী এখন সুস্থ।' 


কী বলছেন, রোগীর পরিবার?


চঞ্চলার স্বামী জয়হরি বলেন, 'স্বামী-স্ত্রী মিলে আমরা দিনমজুরি করে সংসার চালাই। জটিল অপারেশনের কথা শুনে মুষড়ে পড়ি। ডাক্তারবাবু বিনা পয়সায় অপারেশন করে দেন। এই ডাক্তারবাবু আমাদের কাছে ভগবানের মতো।


Also Read: 'আপনার রায় WITH অঞ্জন'-এ 'জয় শ্রী রাম' বিতর্ক গড়াল সায়নী-তথাগতর টুইট-যুদ্ধে