নিজস্ব প্রতিবেদন:   প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবরটা শোনার পরই দৌড়ে ঘরে গিয়ে টিভির চ্যানেলটা খুলেছিলেন। বুকের ভিতরটা ছ্যাঁক করে উঠেছিল তখনই। বিপদ আঁচ করতে পেরেছিলেন। সিআরপিএফকে ফোন করা মাত্রই,  এক নিমেষেই গোটা পৃথিবীটা যেন অন্ধকার করে যায় উলুবেড়িয়ার চককাশি রাজবংশী পাড়ার জওয়ান বাবলু সাঁতরার স্ত্রীর কাছে। জঙ্গিদের আইইডি বিস্ফোরণে মারাত্মক জখন হয়েছেন বাবলু... সিআরপিএফের ফোন রেখে শুধু এটুকুই শাশুড়িকে বলতে পেরেছিলেন। তারপর থেকেই বাক্যিহারা তিনি।  রাতেই সোশ্যাল মিডিয়াতে শহিদ জওয়ানদের তালিকা দেখে আবারও সিআরপিএফ-কে ফোন করেন স্ত্রী। তখনই পান চরম খবরটা। বাঁচানো সম্ভব হয়নি তাঁকেও।  জম্মু কাশ্মীরের পুলওয়ামার অন্ততপুরে জঙ্গিদের আইইডি বিস্ফোরণে ৪৪ জন শহিদ জওয়ানদের মধ্যে একজন বাবলু সাঁতরা। তিনি ছিলেন ৩৫ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ান। ৫৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নে হামলা হলেও,  বৃহস্পতিবার জঙ্গিদের বিস্ফোরকে ছিন্নভিন্ন হয়েছেন তিনিও।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING


ছোটোবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন। ৫ ভাইবোন আর মায়ের সংসারের জোয়াল ধরতেই স্কুলের গণ্ডি পেরনোর আগে মাছ বিক্রি করতে শুরু করেছিলেন বাবলু। এরপর স্কুল পেরিয়ে কলেজে যাওয়া। কিন্তু ছোটো থেকেই দেশের কাজে নিজেকে সোপেঁ দেওয়া ছিল তাঁর লক্ষ্য। ২০০০ সালে কলেজে  পড়ার সময়ই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি।  



আরও পড়ুন: পুলওয়ামা জঙ্গি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪, আজ শ্রীনগরে রাজনাথ


সেনাবাহিনীর চাকরি পাওয়ার পরই দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে কিছুটা  শ্রী ফিরেছিল। এরইফাঁকে বিয়ে করেন বাবলু। তাঁর চার বছরের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। ৪ বছরের পিয়াল সবেমাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। দেড় মাস আগেও বাড়ি ফিরেছিলেন। গত বুধবার রাতেও স্ত্রীয়ের সঙ্গে কথা বলেন। আর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটে যায় অঘটন।



আরও পড়ুন-পুলওয়ামা হামলা: জইশ প্রধান মাসুদকে জঙ্গি ঘোষণায় রাষ্ট্রসঙ্ঘকে চাপ ভারতের   


বৃহস্পতিবার দুপুরে টেলিভিশনে খবর সম্প্রচারের পরই বাবলু সাঁতরা'র বাড়িতে তিল ধারণের জায়গা নেই। আত্মীয়-পরিজন, পাড়া প্রতিবেশীরা সকলেই ভিড় করেছেন বাবলুর বাড়িতে। সন্তান হারানো বৃদ্ধা মা, সদ্য স্বামীহারানো এক মহিলার শোক ভোলাতে তাঁরা  ব্যর্থ। শুধু তাঁরা রয়েছেন, পাশে থাকার বার্তা নিয়ে। কারোর মুখেই কোনও শব্দ নেই,  রয়েছে একরাশ হতাশা। সঙ্গে চোখে শহিদের প্রতি শ্রদ্ধামিশ্রিত অশ্রু। ছোট্ট পিয়াল অবশ্য এখনও বুঝতে অক্ষম, কী হারাল সে!



আর এক বছর চাকরির মেয়াদ ছিল বাবলুর। দেড় মাস আগেও  তাই গ্রামের বাড়িতে ফিরে বলেছিলেন, "এবার পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারবো, ব্যবসা করব...'' তিনি ফিরছেন বটে, তবে কফিনবন্দি হয়ে।