হীরক মুখোপাধ্যায়


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

উনিশ শতকে বাঁকুড়া জেলায় যেসব জমিদারবাড়ি ও রাজবাড়ির পুজো জেল্লা ও জমকে খ্যাতির শীর্ষ ছুঁয়েছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম অযোধ্যা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদারবাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় দু'শো বছর ছুঁতে চলা এই দুর্গা পুজোর জেল্লা-জমক আগের চেয়ে কমলেও আজও বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য অমলিন।


উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বাঁকুড়ার অযোধ্যা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সন্তান রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরির খোঁজে একসময় হাজির হয়েছিলেন শ্রীরামপুরের এক নীলকর সাহেবের কাছে। নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে নীলকর সাহেবের কাছে প্রথমে কেরানির চাকরি জোগাড় করেন তিনি। পরে সাহেবের অত্যন্ত বিশ্বস্ত হয়ে ওঠায় তাঁকে দেওয়ান পদ দেওয়া হয়। বেশ কিছুদিন এভাবে চলার পর কলেরায় আক্রান্ত হন নীলকর সাহেব। সাহেব কলেরায় যখন প্রায় মৃত্যুশয্যায় তখন তাঁর নিকটজনের অনেকেই তাঁকে ছেড়ে চলে যান। কিন্তু রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রভুকে ছেড়ে যাননি। আর একরকম তারই পুরস্কারস্বরূপ সাহেব নিজের অর্জিত সম্পত্তির অর্ধেক রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে যান। কলেরায় ভুগে মারা যান সাহেব। আর রামমোহন তার ভাগ্য গড়ে নেন।


আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: এই পুজোয় দেবাদিদেব শিবের কোলে আসীন মা দুর্গা


নীলকর সাহেবের সেই সম্পত্তির সাহায্যেই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার একের পর এক মৌজা কিনে বাঁকুড়ার অযোধ্যা গ্রামেই জমিদারির সূচনা করেন বলে শোনা যায়। কথিত, সেসময়ে বাঁকুড়া ছাড়াও হুগলি, অবিভক্ত বর্ধমান ও অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রায় পঁচাশিটি মৌজার জমিদার হয়ে উঠেছিল এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। জমিদারি ছিল এমমনকী কাশী, বেনারস ও তৎকালীন বিহারের বিভিন্ন জায়গাতেও। জমিদারির একটি বড় অংশের পতিত জমিতে হত নীলচাষও। নীলকর সাহেবদের মতো বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার অবশ্য কখনো জোর করে চাষিদের নীল চাষে বাধ্য করত না। করা হত না অত্যাচারও।


জমিদারির বিপুল আয়ে সেসময় অযোধ্যা গ্রামে ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশাল জমিদারবাড়ি ও দেবোত্তর এস্টেট। এস্টেটের মধ্যে দ্বাদশ শিব মন্দির, গিরি গোবর্ধন মন্দির, রাসমন্দির, ঝুলন মন্দির ও দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু হয় দুর্গা পুজোও। এখানে দেবী সিংহবাহিনী নন, ব্যাঘ্রবাহিনী। প্রতিমাতেও বিশেষ নজরকাড়া সাবেকিয়ানা রয়েছে। এখানে দেবীর মুখ ছাঁচে নয়, বংশপরম্পরার প্রতিমাশিল্পী  হাতে তৈরি করেন দেবীর মুখ। সেই সময়ে জমিদারির বিপুল আয়ে উপচে পড়া রাজকোষের প্রভাব পড়েছিল পুজোয়। পুজোর সময় পাইক, বরকন্দাজ, বিভিন্ন রাজকর্মচারী ও প্রজাদের আনাগোনায় দুর্গাপুজো কার্যত উৎসবের চেহারা নিত। 


সেই জেল্লা কিছুটা কমেছে ঠিকই। কিন্তু আজও দেবীর পুজোয় নিষ্ঠার ঘাটতি নেই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। আজও প্রাচীন রীতি মেনে পুজো এলেই ভাঁড়ার থেকে বের করে আনা হয় নবপত্রিকা আনার রুপোর পালকি ও পুজোর যাবতীয় রুপোর বাসন। আজও পুজোর দিনগুলিতে প্রাচীন জমিদারবাড়ির দেবোত্তর এস্টেটে ভিড় জমান দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া এই পরিবারের সদস্যরা।


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: একদা সুভাষচন্দ্রও এসেছিলেন এই ঘোষবাড়িতে