নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজা নেই, রাজ্যপাট মুছে গেছে। কিন্তু বিষ্ণুপুরের মল্লরাজের কুলদেবী মৃন্ময়ীকে ঘিরে আজও হাজারো গল্পকথা ঘুরে বেড়ায় বিষ্ণুপুরের আকাশে-বাতাসে। আজও পুজো এলে প্রাচীন মৃন্ময়ী মন্দিরে রীতি মেনে আসেন বড় ঠাকরুণ, মেজ ঠাকরুণ, ছোট ঠাকরুণ। এই তিন ঠাকরুণই আসলে দেবীর বিভিন্ন রূপ। এবং সেই রূপের একেকটি পটচিত্র। বংশপরম্পরায় এই পটচিত্রগুলি আঁকেন বিষ্ণুপুরের শাঁখারি বাজার এলাকার বাসিন্দা ফৌজদার পরিবার। পুজো এলেই তাই ব্যস্ততা বাড়ে এই ফৌজদার পরিবারে, শুরু হয় উৎসব।


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

বিষ্ণুপুরের মল্লরাজের কুলদেবী এই মৃন্ময়ীর পুজো হাজার বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু যথারীতি নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গেই মৃন্ময়ীর পুজো ও উৎসব চলে আসছে। আজও অতীতের রীতি মেনে এখানে পুজো শুরু হয় পুজো শুরুর পনেরো দিন আগে। জিতাষ্টমীর পরের দিন মৃন্ময়ীর মন্দিরে শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজার উৎসব। পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে পুজো ও তোপধ্বনি করে পটে আঁকা বড় ঠাকরুণকে নিয়ে আসা হয় মন্দিরে। ষষ্ঠীর দিন একই ভাবে পুজো করে মন্দিরে আনা হয় মেজ ও ছোট ঠাকরুণকে। গবেষকরা বলেন, বড় ঠাকরুণ আসলে মহাকালী। মেজ ও ছোট ঠাকরুণ যথাক্রমে মহা সরস্বতী ও মহা লক্ষ্মী।


আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: 'মা' এসে নাবিকদের কাছে তামাক চাইলেন!


প্রাচীন রীতি মেনে রথের দিন রাজপুরোহিত এই তিনটি পট আঁকার জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় পৌঁছে দেন ফৌজদার পরিবারে। ওই দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পট তৈরির প্রস্তুতি। বিশেষ পদ্ধতিতে ওই কাপড়কে আঁকার উপযোগী করে তোলা হয়। পট আঁকার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করা হয়। কাঁচা হলুদ থেকে সংগ্রহ করা হয় হলুদ রঙ, পুঁই শাকের ফল থেকে বেগুনি রঙ, গিরিমাটি থেকে খয়েরি, খড়িমাটি থেকে সাদা রঙ ইত্যাদি তৈরি করা হয়। প্রয়োজনমতো এই রঙগুলি বিভিন্ন অনুপাতে মিলিয়ে তৈরি করা হয় অন্যান্য রঙও। অত্যন্ত শুদ্ধাচার মেনে এই পট আঁকেন ফৌজদার পরিবার। একেকটি পট আঁকতে সময় লাগে কমবেশি আট দিন। পটগুলি আঁকার সময় ফৌজদার পরিবারে আমিষ প্রবেশ করে না। স্নান করে পরিষ্কার জামাকাপড় পরে তবেই পট আঁকতে হয়। কথিত আছে, বিষ্ণুপুরের ফৌজদার পরিবার মল্ল আমলে ছিল যোদ্ধা পরিবার। এই পরিবার থেকেই বংশপরম্পরা নির্বাচিত হত মল্ল রাজত্বের সেনাপতি। সেই সূত্রেই এই পরিবার 'ফৌজদার' উপাধি লাভ করে। 



ইতিহাস বলে ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে জয়পুরের প্রদ্যুম্নপুর থেকে বিষ্ণুপুরে মল্ল রাজধানী স্থানান্তরিত হলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় রাজ কুলদেবী মৃন্ময়ীর পুজো। কেউ কেউ মনে করেন, প্রাথমিক ভাবে মল্ল রাজারা ঘটে-পটে মৃন্ময়ীর পুজো শুরু করেছিলেন। সেই প্রথম পুজো-উৎসবের সময়েই পট আঁকার দায়িত্ব পড়ে সেনাপতি ফৌজদারের উপর। ফৌজদার পট আঁকলে তৎকালীন মল্লরাজার তা পছন্দ হয়ে যায়। তারপর থেকেই সেনা পরিচালনার পাশাপাশি বংশপরম্পরায় পট আঁকার দায়িত্বও বর্তায় এই পরিবারের উপর। পরবর্তীকালে শুধু মল্লরাজ পরিবারের মৃন্ময়ী পুজোর পট নয় , কুচিয়াকোল রাজবাড়ি, বিষ্ণুপুরের মহাপাত্র বাড়ি, চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাপুজার জন্যও পটের বরাত পেতে থাকে এই ফৌজদার পরিবার।


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: সম্রাট আকবরের সনদে একদা শুরু হয়েছিল এই বাড়ির পুজো