হীরক মুখোপাধ্যায়


COMMERCIAL BREAK
SCROLL TO CONTINUE READING

আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে বাঁকুড়ার কষ্ঠিয়ার সম্ভ্রান্ত শিট পরিবারের জমিদারি ছিল আশপাশের প্রায় ১৬টি তালুক নিয়ে। প্রায় বারো হাজার বিঘা জমিতে থাকা বনাঞ্চলে ছিল তাঁদের কর্তৃত্ব। এহেন জমিদারির বিপুল আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই শিট পরিবারের দুর্গাপুজাতেও লেগেছিল বৈভব আর আভিজাত্যের ছোঁয়া।


দিন বদলেছে। জমিদারি এস্টেটের সামান্য আয় ও শিট পরিবারের মিলিত প্রয়াসে আজও অবশ্য কষ্টিয়ার শিট পরিবারের দরদালানে সাড়ম্বরেই পূজিতা হন দেবীদুর্গা। আয়োজনের কলেবর আগের চেয়ে বহুগুণ কমলেও এই পুজাকে ঘিরে গ্রামবাসীদের ভক্তি-শ্রদ্ধা ও মুগ্ধতায় আজও কোনও টান পড়েনি। বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি তাঁদের একান্ত নিজস্ব উন্মাদনায়। 


আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: রঙ বদলে সম্পূর্ণ রক্তবর্ণ হয়ে উঠল দুর্গা প্রতিমা!


কথিত আছে, শিট পরিবারের আদি পুরুষ সার্থক শিটের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের কাছে থাকা বনগ্রামের অত্যন্ত সাধারণ এক কৃষিজীবী পরিবারে। সেখানে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে মহিষ চরানোর সময়ে একদিন ক্লান্ত হয়ে একটি গাছতলায় ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নাদেশ পান, বেশ কিছুটা দূরে থাকা কষ্টিয়া গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু করতে হবে তাঁকে। এই স্বপ্নাদেশের পরে, আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে নিজের ক্ষুদ্র সামর্থ্যে কষ্টিয়া গ্রামে এক পর্ণকুটির তৈরি করে সেখানে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন সার্থক।



পুজো শুরুর পর থেকে দৈব আশীর্বাদে দ্রুত অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে সার্থক শিটের। তাঁর জীবদ্দশাতেই শালী নদীর তীরবর্তী প্রায় সাত হাজার বিঘা উর্বর জমি কিনে জমিদারি পত্তন করেন সার্থক। জমিদারি পত্তনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জমিদারবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় দুর্গার জন্য স্থাপিত হয় সুদৃশ্য বিশাল এক দরদালান। বিপুল জাঁক-জমকে এরপর থেকে সেখানেই শুরু হয় দুর্গা পুজা। জমিদারির প্রচুর আয়ে সে সময় শিট পরিবারের রাজকোষ উপচে পড়ছিল। তার ছাপ পড়ল দুর্গা পুজোতেও। আভিজাত্য আর জাঁক-জমকে অল্প দিনেই ওই এলাকায় বিখ্যাত হয়ে উঠল শিট পরিবারের এই দুর্গাপুজো।


সে সময়ে দূর-দূরান্তের প্রজারা পুজো দেখতে পুজোর চারদিন ধরেই ভিড় জমাতেন কষ্ঠিয়া গ্রামের শিট পরিবারের এই দুর্গামণ্ডপে। চারদিন ধরে মণ্ডপ এলাকার সাতটি গ্রামের মানুষের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকত সে বাড়িতে। সন্ধ্যা নামলেই দুর্গামণ্ডপে সেজের ঝাড়বাতি লাগিয়ে বসত যাত্রাপালা, রামলীলা ও গানের আসর। দশমীতে শিট পরিবারের দুর্গাদালানে দিনের বেলাতেই যাত্রাপালার আয়োজন ছিল অন্যতম আকর্ষণ। শ্বাপদসঙ্কুল জঙ্গল পেরিয়ে আসা দূর দূরান্তের প্রজারা যাতে যাত্রাপালা দেখে দিনের আলোতেই তাঁদের বাড়ি ফিরে যেতে পারেন সেজন্যই দিনের বেলাতেই এই যাত্রাপালার আয়োজন করত শিট পরিবার।



সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমিদারি খুইয়েছে শিট পরিবার। পাল্লা দিয়ে কমেছে পরিবারের আয়ও। বিকল্প পেশার টানে ওই পরিবারের অনেককেই গ্রাম ছেড়ে পাড়ি দিতে হয়েছে অন্যত্র। তবে আজও পুরনো বিধি-নিয়ম মেনেই শিট পরিবারের প্রাচীন দুর্গামন্দিরে পূজিতা হয়ে আসছেন এ বাড়ির প্রাচীন দুর্গা। আজও সেখানে দশমীতে দিনের বেলাতেই যাত্রাপালা চলে আসছে। এক কালে জমিদারির অংশ ছিল এরকম দূর দূরান্তের সব গ্রাম থেকে আজও গ্রামবাসীরা পুজোর উপকরণ নিয়ে পুজোর সময়ে হাজির হন শিট-বাড়ির দুর্গা দালানে। এ সময়ে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন শিট পরিবারের সদস্যরাও। পুজোর ক'টা দিন ফের গমগম করে ওঠে শিট বাড়ি। 


(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)


আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: সুরুল রাজবাড়িতে পুজোয় বলির সময় নারায়ণকে রেখে আসা হয় মন্দিরে