Puja 2021: মল্লরাজাদের সহায়তায় ভাগ্য ফিরল মুচিরামের; শুরু করলেন দুর্গাপুজো
গণিতজ্ঞ শুভঙ্করের বন্ধু ছিলেন `মণ্ডল` জমিদারদের আদিপুরুষ মুচিরাম ঘোষ।
হীরক মুখোপাধ্যায়
বর্ধমানের নীলপুর গ্রাম থেকে ভাগ্যের খোঁজে বেরিয়ে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের সান্নিধ্যে এসেছিলেন মুচিরাম ঘোষ। পরে মল্ল রাজাদের দাক্ষিণ্যেই দামোদরের উপনদী বোদাইয়ের তীরে বিশাল এলাকার এক জমিদারি লাভ করেন তিনি। পরবর্তী কালে বংশপরম্পরাক্রমে একাধিক নীলকুঠি পরিচালনাও করেন তাঁরা। সব মিলিয়ে বিশাল সম্পত্তি করেন ওই জমিদাররা। এর পরই বাঁকুড়ার হদল ও নারায়ণপুর গ্রামের মাঝে বিশাল এক জমিদারবাড়ি তৈরি করে শুরু হয় তাঁদের দুর্গা পুজা। ৩০০ বছর পেরিয়ে আজও সেই পুজা এলাকার মানুষকে প্রাণিত করে চলেছে।
৩০০ বছর আগে নীলপুর গ্রাম থেকে বেরিয়ে বাঁকুড়ার রামপুর গ্রামের বিখ্যাত আর্যা (গণিতজ্ঞ) শুভঙ্করের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় মুচিরাম ঘোষের। বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজ দরবারে শুভঙ্করের আলাদা খাতির ছিল। শুভঙ্করের সূত্রেই মল্ল রাজাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট বার্ষিক খাজনার বিনিময়ে দামোদরের উপনদী বোদাইয়ের কাছে উর্বর বিশাল এলাকার ওই জমিদারি লাভ করেন মুচিরাম। বেশ কয়েকটি তালুক নিয়ে বিশাল মণ্ডল (এলাকা)-এর জমিদার হওয়ায় মল্ল রাজারা তাঁদের 'মণ্ডল' উপাধি দেন। জমিদারি পত্তনের সঙ্গে সঙ্গেই হদল ও নারায়ণপুর গ্রামের মাঝে গড়ে ওঠা বিশাল জমিদারবাড়ির মন্দিরে শুরু হয় দুর্গা পুজা। পরবর্তীকালে ওই এলাকায় ব্রিটিশরা নীল চাষ শুরু করলে ব্রিটিশশক্তির সঙ্গেও বন্ধুত্ব তৈরি হয় মণ্ডল জমিদারদের। আরও পরে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ওই এলাকার মোট ৭টি নীলকুঠী ইজারা নেয় 'মণ্ডল'রা।
আরও পড়ুন: Kaushiki Amavasya 2021: শুভশক্তির তরঙ্গ বয়ে চলে কৌশিকী অমাবস্যার 'তারা-রাত্রি' জুড়ে
কথিত আছে, সে সময়ে বোদাই নদীতে নীলবোঝাই বজরা ভাসিয়ে দূর-দূরান্তে রপ্তানি করতেন 'মণ্ডল'রা। কোনও একবার নীল বিক্রি করে প্রচুর ধনসম্পদ নিয়ে বজরা চেপে গ্রামে ফেরার সময়ে জলদস্যুদের কবলে পড়েছিলেন মণ্ডলবাড়ির কোনও পূর্বপুরুষ। ওই অবস্থায় জলদস্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরলে বজরায় থাকা যাবতীয় সম্পত্তি দুর্গার নামে দেবোত্তর করে দেওয়ার মানত করেন তিনি। বেঁচে ফেরেনও। এর পর মানসিকমতো বজরায় থাকা সমস্ত ধন-সম্পদ দিয়ে বিশাল দুর্গাদালান, রাসমঞ্চ, রথমন্দির, নাটমন্দির, নহবতখানা তৈরি করেন। বংশপরম্পরায় পুজো চালিয়ে যাওয়ার জন্য বহু জমি ও পুকুর কিনে সেগুলি দুর্গার নামে দেবোত্তর করে দেন। এক দিকে নীল কুঠীর বিপুল আয় অন্য দিকে বিশাল জমিদারির বিপুল খাজনা-- এই দুইয়ে মিলে ফুলেফেঁপে ওঠে রাজকোষ। এর প্রভাব পড়ে দুর্গা পুজাতেও। পুজার সাতদিন ধরে বসত নহবত। দুর্গামন্দির-সহ সমস্ত মন্দির সাজানো হত বেলজিয়াম গ্লাসের বিশাল ঝাড়বাতিতে। বসত পুতুলনাচের আসর, হত যাত্রাপালা। দুর্গা পুজার প্রতিটি নির্ঘণ্ট ঘোষিত হত তোপধ্বনির দ্বারা। প্রজারা তো বটেই, দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ হাজির হতেন জমিদারবাড়িতে।
আজ সেই নীলকুঠিও নেই, নেই সেই জমিদারিও। তবু আজও পুজোয় আয়োজনের ত্রুটি রাখেন না মণ্ডলবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম। আজও পুজো এলেই মণ্ডল জমিদারবাড়ির নহবতখানা থেকে শোনা যায় সানাইয়ের সুর। পুরনো দিনের সেই ঝাড়বাতি বের করে তার ধুলো ঝেড়ে তা টাঙানো হয় দরদালান জুড়ে। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্যরা পুজার সময় ছুটে আসেন শুধু নিজেদের ইতিহাসকেই একবার ছুঁয়ে দেখার লোভে।
(Zee 24 Ghanta App : দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)
আরও পড়ুন: Durga in Mythology: আশ্বিনের শারদপ্রাতঃকাল এবং দুর্গাপ্রতিমার পুরাণকথা